
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন হয়েছিল ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর। উদ্বোধনের পর ওই বছরের ১ ডিসেম্বর প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছিল পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। তার এক মাস পর ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় পর্যটক এক্সপ্রেস। কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার ১৪ মাস পরও কক্সবাজারে নির্মিত দেশের একমাত্র আইকনিক রেল স্টেশনটির অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু করতে পারেননি প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা।
আধুনিক, দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যে নির্মিত এশিয়ার অন্যতম এই রেল স্টেশন ঘিরে রেলযাত্রীদের অনেক স্বপ্ন। পরিপূর্ণভাবে এই স্টেশন ভবনের কাজ শেষ হলে স্টেশন ভবনে যাত্রীরা অনেক সুযোগ সুবিধা পাবেন। বিশেষ করে যাত্রীদের থাকা–খাওয়ার তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টার, যাত্রীদের মালামাল রাখার লকার, শিশু যত্ন কেন্দ্র, মসজিদসহ অত্যাধুনিক সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা থাকবে। কেউ চাইলে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার পৌছে মালামাল স্টেশনে রেখে সারা দিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতে আবার ফিরে যেতে পারবেন। কিন্তু ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার ১৪ মাস পরও স্টেশন বিল্ডিংটি চালু করতে পারেনি রেল কর্তৃপক্ষ। যার কারণে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে ট্রেন যাত্রীরা স্টেশনের সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। আইকনিক স্টেশন ভবনের কাজ শেষ হতে আরো ২–৩ মাস লাগবে। কিন্ত রেল স্টেশন ভবনের কাজ শেষ হলেও রেলযাত্রীদের স্টেশন ভবনের সুযোগ–সুবিধা পেতে আরো সময় লাগবে। কারণ এই ভবনের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ভবনের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার বেসরকরিভাবে টেন্ডারে পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
দোহাজারী–কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের কাজ এক–দুই মাসের মধ্যে শেষ হবে। সব কাজ শেষ, এখন শুধুমাত্র ম্যানেজমেন্টের কাজ চলছে। কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, কাজ শেষে আইকনিক স্টেশনের নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলায় রেলওয়ের অপারেশনাল কাজ চলবে। তৃতীয় তলায় শপিংমল, ৪র্থ তলায় তারকা মানের হোটেল, ৫ম তলায় কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার জন্য প্রাইভেট খাতে লিজ দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। কারণ হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। তারকা মানের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার মতো এত স্টাফ রেলের নেই। আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে এই কারণে প্রাইভেট খাতে লিজ দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন মহলে চিন্তাভাবনা চলছে। লিজ দেওয়া হলে এর মান বজায় থাকবে।
সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী–কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা। এদিকে গত ৬ নভেম্বর কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের প্রতিটি কাজ সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন সরকারি রেল পরিদর্শক (জিআইবিআর) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ। পরিদর্শনকালে তিনি স্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ, বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্লোর, স্টেশন ভবনের হোটেল, ইন্টেরিয়রের কাজ, প্ল্যাটফর্ম, ট্র্যাক, সিগন্যালিং সিস্টেম, ইলেকট্রিক্যাল সিস্টেমসহ প্রতিটি কাজ দেখেছেন। এ সময় তিনি স্টেশন ভবন নির্মাণে বেশ কিছু ক্রটি সনাক্ত করেন। বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্টে উল্লেখ করবেন বলে আজাদীকে জানিয়েছিলেন। এ সময় তিনি অনেক কিছু সুপারিশও করেছিলেন

পাঠকের মতামত