আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন ভবনের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার লিজে (বেসরকরিভাবে টেন্ডারে) পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। দেশের একমাত্র এই আইকনিক রেল স্টেশন ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় চলবে রেলওয়ের অপারেশনাল কার্যক্রম। যাত্রীদের থাকা–খাওয়ার তারকা মানের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টারসহ অন্যান্য যাবতীয় সেবা এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব বেসরকারি খাতে লিজ দেয়া হচ্ছে। এই ব্যাপারে দোহাজারী–কক্সবাজার রেল লাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনের কাজ চলতি মাসে শেষ হবে। কাজ শেষে স্টেশনের নিচতলা এবং দ্বিতীয় তলায় রেলওয়ের অপারেশনাল কাজ চলবে। উপরে তৃতীয় তলায় শপিংমল, ৪র্থ তলায় তারকা মানের হোটেল, ৫ম তলায় কমিউনিটি সেন্টার প্রাইভেট খাতে লিজ দেয়ার চিন্তা ভাবনা চলছে। কারণ হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টারের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে হবে। তারকা মানের হোটেল, শপিংমল এবং কমিউনিটি সেন্টার পরিচালনার জন্য এতো স্টাফ আমাদের রেলে নেই। আন্তর্জাতিক মান যাতে বজায় থাকে এই কারণে এইগুলো প্রাইভেট খাতে লিজ দেয়ার ব্যাপারে ঊর্ধতন মহলে চিন্তাভাবনা চলছে।
সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দোহাজারী–কক্সবাজার ১০১ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মধ্যে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন ভবনটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২১৫ কোটি টাকা।
গত মাসে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশনের প্রতিটি কাজ সরেজমিনে পরির্দশন করেছেন সরকারি রেল পরির্দশক (জিআইবিআর) ইঞ্জিনিয়ার ফরিদ আহমেদ। পরির্দশনকালে তিনি স্টেশন বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ, বিল্ডিংয়ের প্রতিটি ফ্লোর, স্টেশন ভবনের হোটেল, ইন্টেরিয়রের কাজ, প্লাটফর্ম, ট্র্যাক, সিগন্যালিং সিস্টেম, ইলেক্ট্রিক্যাল সিস্টেমসহ প্রতিটি কাজ সরেজমিনে দেখেছেন বলে জানান। এসময় তিনি স্টেশন ভবন নির্মাণে বেশ কিছু ত্রুটি শনাক্ত করেন। বিষয়টি তিনি রিপোর্টে উল্লেখ করবেন বলে জানিয়েছেন।
দেশের বৃহৎ ও দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশনটি দেখতে ঝিনুকের আদলে, এশিয়ার বৃহৎ রেল স্টেশন।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেল স্টেশনের কাজ শেষে যাত্রীদের জন্য যুক্ত হচ্ছে অত্যাধুনিক অনেক সুযোগ–সুবিধা। এখন পুরো স্টেশন ভবনের কাজ শেষে যাত্রীদের চলন্ত সিঁড়ির মাধ্যমে সেতু হয়ে চড়তে হবে ট্রেনে। গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রয়েছে বড় ৩টি জায়গা। স্টেশন ভবনে রয়েছে কাউন্টার, স্বাগত জানানোর কক্ষ, তারকা মানের হোটেল, রেস্তোরাঁ, শপিংমল, কমিউনিটি সেন্টার, মালামাল রাখার লকার, শিশু যত্ন কেন্দ্র, মসজিদসহ অত্যাধুনিক সব ধরনের সুযোগ–সুবিধা। কেউ চাইলে রাতের ট্রেন ধরে সকালে কক্সবাজার পৌঁছে মালামাল স্টেশনে রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকত বা পর্যটন স্পট ঘুরে রাতে ফিরে যেতে পারবেন। আর বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এই আইকনিক স্টেশনে প্রতিদিন ৪৬ হাজার করে যাত্রী গমনাগমন করতে পারবেন।
রেলপথটি ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ ডিসেম্বর থেকে। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম থেকে একটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হচ্ছে। কিন্তু আইকনিক স্টেশন ভবন নির্মাণে প্রায় ১ বছর বিলম্ব হয়। যদিও প্রকল্প মেয়াদ আরো এক বছর বাড়ানো হয়েছে।
পাঠকের মতামত