প্রকাশিত: ২৪/১০/২০১৬ ৯:১৮ এএম

হেলাল উদ্দিন সাগর::
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতি কিছুতেই থামছেনা। কর্তার পর কর্তা পরিবর্তন হয় কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতির কোন পরিবর্তন হয়না। অনিয়ম – দুর্নীতি যেন কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের চিরচেনা বন্ধু। পথে পথে টাকা গুনতে হয় পাসপোর্ট করতে আসা সাধারণ মানুষের। এরপরও নানা ভোগান্তির কোন শেষ নেই বলে জানান পাসপোর্ট ইস্যু করতে আসা সাধারণ মানুষ। সাবেক উপ সহকারী পরিচালক শওকত কামালের নানা অনিয়ম দুর্নীতির কারণে ফেঁসে উঠেছিল কক্সবাজার জেলার সাধারণ মানুষ। আন্দোলন সংগ্রাম করে দুর্নীতিবাজ শওকত কামালের বদলি করতে পেরেছেন এখানকার প্রতিবাদীরা কিন্তু পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম দুর্নীতির কোন পরিবর্তন আসেনি। উপ সহকারী পরিচালক শওকত কামালের পরিবর্তে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন আবু নাঈম মাসুম। ধার্মিক ভঙ্গি আবু নাঈম মাসুম যোগদানের পর কর্মকর্তা – কর্মচারীদের অতিরিক্ত ক্ষমতার বাহ্যিক কিছু পরিবর্তন দেখা গেলেও অভ্যন্তরীণ অনিয়ম দুর্নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি। গত ৯ অক্টোবর রবিবার পেশাগত দায়িত্ব পালনে পাসপোর্ট অফিসে যায় এই প্রতিবেদক ও সহকর্মী ইফতেখারুল ইসলাম জুয়েল। পাসপোর্ট অফিসের গেইটে অবস্থানরত আনসার সদস্যরা এক সেবা গ্রহীতাকে ধাক্কাচ্ছেন। এসময় প্রতিবেদকরা উপস্থিত হলে আনসার সদস্যরা তাদের সাথেও অসৌজন্যমুলক আচরণ করেন। আইডি কার্ড ও ভিজিটিং কার্ড ইস্যু করার পর আনসারদের অনুমিত পাওয়া গেল ভিতরে প্রবেশের। ভিতরে প্রবেশ করার পর দেখা গেল সব কর্মকর্তা – কর্মচারীদের চোখে যেন হাল পড়েছে। সাংবাদিক যেন তাদের বাপ দাদার শত্রু। সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুমের কক্ষে ঢোকার পথে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিএস অপেক্ষা করতে বলেন। প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষা করার পর অনুমতি পাওয়া গেল। আবু নাঈম মাসুমের কক্ষে প্রবেশ করে অবাক হয়ে গেলাম। ওনি কি বাঙ্গালী না ইংলিশ ম্যান বুঝতে পারলামনা। অফিসে ঢোকার পর থেকে শেষ পর্যন্ত ইংরেজিতে কথোপকথন করতে থাকেন। যে দেশে ভাষার জন্য যুদ্ধ করে ত্রিশ লাখ লোক শহীদ হয়েছেন এবং দুই লাখ মা – বোনের ইজ্জত নষ্ট হয়েছে সে দেশের সরকারি কর্তা কেন বাংলা বলতে নারাজ বিষয়টি অবাক করেছেন প্রতিবেদককে। ভাবলাম হয়তো নিজের ডিমান্ড দেখার জন্য ভাব নিয়েছেন কিন্তু না আমার ধারণা ভুল। কর্তার মেজাজ খারাপ সাংবাদিক অফিসে যাওয়াতেই, তাই তার এই ব্যবহার। অভিযোগ আছে, কক্সবাজার হতে পাসপোর্ট ইস্যু করে গত সাড়ে ৬ বছরে প্রায় পৌনে ৫ কোটি টাকা আয় করেছে বহিরাগমন পাসপোর্ট অধিদপ্তর। এর পরেও গ্রাহক হয়রানি কমেনি। দ্বিগুন বেড়েছে পাসপোর্ট অফিসের অনিয়ম-ভোগান্তিÍ। বছরের পর বছর ধরে চলা কর্মচারীদের দুর্নীতি আর দালাল সিন্ডিকেটের আধিপত্য এখন যেন প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে এখানে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারির সৃষ্ট আইন ও সহকারী পরিচালকের  হেয়ালিপনা এবং ইচ্ছাকৃত অনিয়মের কারণে এখানকার অবস্থাকে আরো নাজুক করেছে। তার বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠছে ভোগান্তির শিকার লোকজন। তারা আবারও বিক্ষোভসহ আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে।

ঝিলংজা ইউনিয়নের এস এম পাড়ার তাহেরুল ইসলাম নামের এক লোক বলেন, মাস – ছ’য়েক আগে আমার মা হজ্ব পালনের জন্য পাসপোর্টের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ব্যাংক জমা দিয়ে আবেদন করেন। কিন্তু পুলিশ তদন্তের সময় তাদের (পুলিশকে) চাহিদামত ঘুষ দিতে না পারায় মিথ্যা প্রতিবেদন পেশ করে। এখন অফিসে আসছি করণীয় কি জানার জন্য। অফিস বলছে পুনরায় নতুন করে ব্যাংক ড্রাপ করে আবেদন করতে হবে। আগে জমা দেওয়া টাকার কি হবে কিছু বলেনা।
এই বিষয়ে সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুমকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, আমি পুরাপুরি পুলিশ তদন্তের উপর নির্ভরশীল।
ব্যাংকে জমা দেওয়া টাকার কি হবে জানতে চাইলে তিনি কোন প্রশংসনীয় উত্তর দিতে পারেনি।

এদিকে পাসপোর্ট বইয়ে জঘন্য গরমিল রেখে পাসপোর্ট দেওয়া হচ্ছে পাসপোর্ট গ্রহীতাদের। রশিদ মামুন নামের এক ব্যক্তি তার এনালগ পাসপোর্ট ডিজিটাল করতে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যান। এতে তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়েও জঘন্য গরমিল সমৃদ্ধ পাসপোর্ট তার হাতে দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুমের স্বাক্ষরিত পাসপোর্টের ছবি সংযুক্ত অংশে রশিদ মামুনের ছবি থাকলেও ব্যক্তিগত পরিচয় অংশে নুর আহমদ নামের অন্যজনের ঠিকানা। রশিদ মামুন বলেন, ভুল পাসপোর্ট দিয়ে এখন ঠিক করতেও টাকা চাচ্ছেন।

এই বিষয়ে সহকারী পরিচালক আবু নাঈম মাসুম বলেন, প্রিন্টের সময় ভুল চলে আসছে। সংশোধন করে দেওয়া হবে। টাকা চাওয়ার বিষয় তিনি অস্বীকার করেন।

রাজস্ব আয়ের দিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে এ অফিসটি। কিন্তু অনেক দিন প্রচলিত ‘দুর্নীতির আখড়া পাসপোর্ট অফিস‘ এই কথা। আয়ের ক্ষেত্রে যতটা এগিয়ে যাচ্ছে, তার চেয়ে বেশি এগিয়ে যাচ্ছে দুর্নীতিতে। পাসপোর্ট অফিসের বাইরে, ভেতরে যেখানে যাবেন সেখানেই ওই একই শব্দ! ঘুষ আর দুর্নীতি।

এদিকে চিহ্নিত দালাল সিন্ডিকেটের বেশ ক’জনের নাম পাওয়া গেছে। তারা হলো সাহাব উদ্দিন জনি, তার ভাগিনা সালাম, ঘোনারপাড়ার সাইফুল, ঈদগাওয়ের আমিন, চকরিয়ার সাইফুল ইসলাম, কালু সোলেমান, রাজুর ভাগিনা দাবীদার লম্বা ইলাহী,  টেকনাফের জাফর আলম প্রকাশ বর্মী জাফর, চৌফলদন্ডির আমিন, খুরুশকুলের সুজন কান্তি, মিটাছড়ির নাছির উদ্দিন, টেকনাফের আয়াছ রনি, পেকুয়ার কুহুল আমিন। এরাই বর্তমানে পাসপোর্ট অফিস নিয়ন্ত্রণ করছে। এই পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরেই আশপাশে গড়ে উঠেছে দালাল অফিস ও দালাল সমিতি। তাদের দ্বারা অসম্ভবকে সম্ভব করা যাচ্ছে। রোহিঙ্গারাও কৌশলে পেয়ে যাচ্ছেন এদেশীয় পাসপোর্ট।

এই বিষয়ে সহকারী পরিচালক সাংবাদিকদের বিষয়টি তদন্তের অনুরোধ জানান। তিনি আরোও বলেন, তার সাথে কোন দালালের সম্পর্ক নেই। তাই তিনি দালাল সম্পর্কে কিছু জানেননা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাদ যেন জেলাবাসী পাই সেজন্য কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের রোষানল থেকে পাসপোর্ট অফিসকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট মহলের প্রতি আহবান জানান কক্সবাজারবাসী।

পাঠকের মতামত

কক্সবাজারে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু, দৈনিক উৎপাদন ৩০ মেগাওয়াট

কক্সবাজার সদর উপজেলার বাঁকখালী নদীর খুরুশকুল উপকূলে বায়ুবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হয়েছেছবি: প্রথম আলো কক্সবাজার সদর উপজেলার ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে টার্গেট কিলিং!

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে ‘টার্গেট কিলিং’। ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড ...

জান্নাতুলকে খুনের কথা আদালতে স্বীকার করলেন কক্সবাজারের রেজা

রাজধানীর পান্থপথে আবাসিক হোটেলে চিকিৎসক জান্নাতুল নাঈম সিদ্দিকা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন ...