বিশেষ প্রতিবেদক:
শিক্ষককে মারধর ও হুমকির ঘটনায় ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগ এক সপ্তাহ বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। মারধর ও হুমকির শিকার হওয়া শিক্ষক হলেন ইংরেজি বিভাগের সিনিয়র প্রভাষক খোরশেদুল আলম। একই বিভাগের চেয়ারম্যান সদ্য যোগ দেয়া আহসান উল্লাহ জাহিদ তাকে মারধর ও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগে প্রকাশ। এই ঘটনায় শুক্রবার বিভাগের ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা খোরশেদুল আলমের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। এসময় তারা বিভাগে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি দাবিতে ভিসির কাছে স্মারক লিপি দিয়েছেন। এই নিয়ে দিনভর পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১মার্চ কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে চেয়াম্যারম্যান হিসেবে যোগ দেন আহসান উল্লাহ জাহিদ। যোগ দেয়ার দু’দিনের মাথায় ৩মার্চ বিভাগের আলোচনা সভার সামান্য বিষয় নিয়ে আহসান উল্লাহ জাহিদ ও একই বিভাগে সিনিয়র প্রভাষক খোরশেদুল আলমের মধ্যে মতপার্থক্য হয়। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে খোরশেদুল আলমকে মারধর করেন সদ্য যোগ দেয়া চেয়াম্যারম্যান আহসান উল্লাহ জাহিদ। এই ঘটনায় খোরশেদুল আলম কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়রি করেছেন।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে খোরশেদুল আলম বলেন, ‘বিভাগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা সভায় সদ্য যোগ দেয়া চেয়ারম্যান অন্যান্য শিক্ষকদের হেয় আচরণ করেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন ‘রাজার সামনে প্রজা যেভাবে বসে সে ভাবে বসেন’। এতে প্রতিবাদ করায় আমাকে চেয়ার নিয়ে মারতে উদ্যত হন তিনি। এক পর্যায়ে চেয়ার থেকে উঠে এসে ঘুষি মারেন। এরপরও ক্ষান্ত না হয়ে বিভিন্নভাবে হামলার চেষ্টা করেন। তবে ডিন এসে আমাকে অন্য কক্ষে নিয়ে গিয়ে রক্ষা করেন। তারপরও তিনি দরজায় গিয়ে লাথি মারেন।’
খোরশেদুল আলম বলেন, ‘এ ঘটনার পরও আহসান উল্লাহ জাহিদ আমাকে বিভিন্নভাবে কক্সবাজার ছাড়া করার হুমকি দেন। তাই আমি নিরাপত্তা চেয়ে থানায় সাধারণ ডায়রি করেছি।’
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আশ্চর্য্যজনকভাবে উল্টো খোরশেদুল আলমকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। এই ঘটনায় সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। সেই থেকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জনসহ নানা ভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় বাধ্য হয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা শুক্রবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। এক পর্যায়ে তারা ইংরেজি বিভাগের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একই সাথে তারা ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, অভিযুক্ত শিক্ষক আহসান উল্লাহ জাহিদকে বহিস্কারসহ শাস্তি দাবি এবং খোরশেদুল আলমকে পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়ে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আহসান উল্লাহ জাহিদ এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এই ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য তিনি এই প্রতিবেদককে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলতে বলেন।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি আবুল কাসেম বলেন, ‘শিক্ষকদের অপ্রীতিকর ঘটনাটি আমি অবহিত হয়েছি। এই ঘটনায় দু’শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ইংরেজি বিভাগ এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঘটনার তদন্তের জন্য ডিন জাকির হোসেনকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ সুত্র: সিবিএন
পাঠকের মতামত