প্রকাশিত: ২৩/০৯/২০২১ ৯:০১ এএম

ইমাম খাইর, কক্সবাজার
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মালিকানা নিয়ে দুই পক্ষের রশি টানাটানি চলছে অনেক দিন। একপক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে কাদা ছোড়াছুড়িও কম হয়নি। এখনো অব্যাহত আছে। অবশেষে এক বছরের জন্য নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।

সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টির নানা অসঙ্গতি, অপূর্ণতা উল্লেখপূর্বক ১৬টি শর্তজুড়িয়ে সুপারিশও করা হয়েছে। শর্তাদির অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রতি ৩ মাস অন্তর কমিশনে পাঠাতে হবে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক মো. ওমর ফারুকের সাক্ষরে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে সময়সীমা বেধে দিয়ে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

১৬টি সুপারিশ হলো-
১) আগামী এক বছরের মধ্যে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য কক্সবাজার এলাকায় ২ একর নিষ্কণ্ঠক, অখন্ড ও দায়মুক্ত জমি ক্রয় করতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক ক্যাম্পাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনাদির প্ল্যান অনুমোদনপূর্বক স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করতে হবে।

২) বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ক্যাম্পাসটি আবাসিক হোটেলের জন্য তৈরী করা হয়েছিল, যা মোটেও শিক্ষাবান্ধব নয়। ভবনটির নীচে বাস কাউন্টার, বানিজ্যিক মার্কেট, বাস টার্মিনাল বিদ্যমান। যার কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যাপক গোলযোগ ও শব্দদূষণ লেগেই থাকে। ক্লাস রুম, কমন রুম ও বাথরুম কোনটিই শিক্ষাবান্ধব নয়। এখানে শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ বিদ্যমান নেই।

৩) কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নামে আইন অনুযায়ী বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজ ‘ট্রাস্ট এ্যাক্ট ১৮৮২’ অনুযায়ী সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ডীড এবং ‘সোসাইটিজ এ্যাক্ট ১৮৬০’ অনুযায়ী জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস কর্তৃক দ্রুত রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

৪) বিশ্ববিদ্যালয়টিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য, উপউপাচার্য ও ট্রেজারার নেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলর কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত না হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩১ (৬) ধারা মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও ট্রেজারার হিসেবে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই। আগামী ১ মাসের মধ্যে উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের নিমিত্তে প্যানেল পাঠাতে হবে।

৫) বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োজিত আছেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের পূর্ণকালীন নিয়োগ দানের ব্যবস্থা করতে হবে।

৬) শিক্ষা মন্ত্রণালয় মনোনীত অডিট ফার্ম দ্বারা এখনো পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়টিতে অডিট করা হয় নি, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৪৫ (২) ধারা সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আগামী ৩ মাসের মধ্যে বিগত বছরের সমস্ত অডিট সম্পন্ন করতে হবে। নির্ধারিত সময়সীমায় নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে সনদ বাতিলসহ দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

৭) আগামী ৩ মাসের মধ্যে সংরক্ষিত তহবিলে বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল থেকে অদ্যাবধি হিসেব করে সুদাসল সমেত পুনর্ভরণ করতে হবে। ব্যর্থ হলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৬ (৯) এর ধারা মতে থাকছে আইনগত ব্যবস্থা। ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়টির সংরক্ষিত তহবিলের অর্থ কমিশন ও সরকারের অনুমতি ছাড়া উত্তোলন করা যাবে না।

৮) প্রতিটি বিভাগে কমপক্ষে ১ জন পূর্ণকালীন অধ্যাপক/সহযোগি অধ্যাপক এবং সহকারি অধ্যাপকসহ কমিশনের শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ৩ মাসের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগপূর্বক কমিশনে অবহিত করতে হবে।

৯) বিশ্ববিদ্যালয়টিতে এখনো কোন ধরণের গবেষণা কার্যক্রম নেই। গবেষণাখাতে অর্থ বরাদ্দসহ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা প্রয়োজন।

১০) আইন অনুযায়ী বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদানের (৩% মুক্তিযোদ্ধা ও ৩% দরিদ্র ও মেধাবী) মধ্যে ঘাটতি রয়েছে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৯ (৪) ধারা অনুযায়ী ভর্তির আসন সংরক্ষণ ও বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

১১) আগামী ৩ মাসের মধ্যে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য চাকুরির প্রবিধানমালা তৈরী করে কমিশনের অনুমোদন নিতে হবে।

১২) বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ২০২০ সালে মাত্র ১টি সিন্ডিকেট সভা হয়। সিন্ডিকেটে কমিশন ও সরকার মনোনীত সদস্য এবং উপাচার্য মনোনীত ডীন ও বিভাগীয় প্রধান নেই। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ১৭ অনুযায়ী সিন্ডিকেট গঠন এবং কমিশনের সিন্ডিকেট পরিচালনার নিয়ম অনুযায়ী ‘সিন্ডিকেট সভা’ অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে হবে।

১৩) বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৭ বছরে একটিও সমাবর্তন হয়নি। নিয়মিত সমাবর্তন আয়োজন করতে হবে।

১৪) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রামসমূহ নির্দেশ অনুযায়ী ২ সেমিস্টার ভিত্তিক হলেও অধিকাংশ প্রোগ্রামের সিলেবাস হালনাগাদকৃত নয়। সিলেবাসসমূহ দ্রুত হালনাগাদের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

১৫) ক্লাসরুম, ল্যাব, সেমিনারকক্ষ ও লাইব্রেরী আধুনিকায়ন এবং শিক্ষা উপযোগী করতে হবে।

১৬) লাইব্রেরীতে বিষয়ভিত্তিক মৌলিক বই অন্তর্ভুক্ত, ইলেক্ট্রনিক জার্নাল সুবিধা, ইউডিএল এর সদস্যপদ গ্রহণ এবং ফটোকপি বই ও নোটবই অপসারণ করতে হবে। লাইব্রেরীর ‘বঙ্গবন্ধু কর্ণারে’ বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শ, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দর্শন এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক বই সংযোজনপূর্বক কমিশনে জানাতে হবে।

সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন সাপেক্ষে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ধারা ১১ অনুযায়ী কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাময়িক অনুমতির মেয়াদ ১ বছর বৃদ্ধি করতে পারে সরকার। তবে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সার্বিক শিক্ষার মান বিবেচনায় উক্ত সময়কালে নতুন ছাত্র ভর্তি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে এবং প্রতি ৩ মাস অন্তর শর্তাদির অগ্রগতি প্রতিবেদন কমিশনে প্রেরণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশসমূহ পালনে ব্যর্থ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাময়িক সনদের মেয়াদ বৃদ্ধি সমীচীন হবে না মনে করে কমিটি।

পাঠকের মতামত

যুক্তরাজ্যের প্রেস মিনিস্টার হলেন সাংবাদিক আকবর হোসেন

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন বিবিসি প্রতিনিধি আকবর হোসেন মজুমদার। রবিবার ...

আমাদের নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন: সিইসি

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ...

পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু

গাজীপুরের শ্রীপুরে পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে তিন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (২৩ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ...