মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার::
কক্সবাজারে মাচায় মাছ শুকাচ্ছেন শ্রমিকেরা। সম্প্রতি নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লি থেকে তোলা ছবি। আজকের পত্রিকা
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে শুঁটকি উৎপাদনের ধুম পড়েছে। জেলার ৯ শতাধিক মহালে ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক ও মৎস্যজীবী সামুদ্রিক মাছ শুকানোর মহাযজ্ঞে নেমেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদ ও উঠানে মাচা বেঁধেও মাছ রোদে দেওয়া হচ্ছে।
মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলায় ৪১ হাজার টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। উৎপাদনে জড়িত ৭২৮ জন খামারি। এবার অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসার আশা করছেন উৎপাদনকারীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সাগর ও নদ-নদীতে মাছ শিকারে ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা গত ৩ নভেম্বর শেষ হলে শুঁটকি মহালগুলোতে উৎপাদন শুরু হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এ কার্যক্রম চলবে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকদের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার শুঁটকি চট্টগ্রাম, সিলেট ও সৈয়দপুরে নিয়ে যান ব্যবসায়ীরা। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে কক্সবাজারের শুঁটকি। এই শুঁটকির বেশি চাহিদা থাকে পর্যটন মৌসুমে।
দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকির কেন্দ্র কক্সবাজার বিমানবন্দরসংলগ্ন নাজিরারটেক। এখানে ছোট-বড় প্রায় ৭০০ মহাল রয়েছে। এ ছাড়া কুতুবদিয়া, মহেশখালী, সোনাদিয়া, টেকনাফ, সেন্ট মার্টিন, উখিয়া ও পেকুয়ায় রয়েছে আরও ২ শতাধিক মহাল।
সম্প্রতি নাজিরারটেক শুঁটকিপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, শত শত নারী-পুরুষ শুঁটকি উৎপাদনে কাজ করছেন। কেউ মাচায় মাছ বিছিয়ে দিচ্ছেন, কেউ শুকিয়ে তোলা মাছ বস্তাবন্দী করাসহ নানা প্রক্রিয়ায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। জিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের একটি মহালে পাঁচমিশালি শুঁটকি থেকে বাছাইয়ের কাজ করছিলেন খালেদা বেগম ও আয়েশা বেগম। দুজনে জানান, শুষ্ক মৌসুমে ৬ থেকে ৭ মাস মহালে কাজ করেন তাঁরা। সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা বেতন পান। তাঁদের মতো অন্তত ১৫ হাজার নারী এখানকার মহালগুলোতে দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন।
উৎপাদনকারী জিয়াউল হক বলেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত কক্সবাজারে ভরপুর পর্যটক থাকেন। তাঁরা বাড়ি ফেরার সময় শুঁটকি কিনে নিয়ে যান। পাশাপাশি শহরের অন্তত ১ হাজার ২০০ রেস্তোরাঁয় শুঁটকির ভর্তাসহ নানা পদের রান্না হয়। ফলে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি আতিকউল্লাহ বলেন, ‘দুই বছর ধরে সমুদ্র উপকূলে মাছের আকাল চলছে। শুঁটকি উৎপাদনে আমদানি করা মাছের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। ফলে শুঁটকির দামও এই দুই বছরে বেড়েছে। সপ্তাহে দুই দিন এখানে বাজার বসে। সেখান থেকে ৩৫-৪০টি ট্রাকবোঝাই শুঁটকি চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। একেকটি ট্রাকে ৮ থেকে ১০ টন শুঁটকি যাচ্ছে।
শুঁটকির চাহিদার বিষয়ে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী জানান, জেলায় উৎপাদিত শুঁটকির সারা দেশে আলাদা কদর রয়েছে। এগুলো মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হচ্ছে।
এ নিয়ে কথা হলে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান বলেন, ভেজাল ও বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এখন বলা যায়, কক্সবাজারে নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদন হচ্ছে।