উখিয়া নিউজ ডটকম::
কক্সবাজারের মাতারবাড়ির গভীর সমুদ্র বন্দর ২০২৩ সালে পূর্ণাঙ্গভাবে চালু হবে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রকল্পটির ফিজিভিলিটি স্টাডি, দুটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং এবং একটি এপ্রাইজল মিশন হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসের মধ্যে ঋণ নেগোসিয়েশন কার্যক্রম শুরু হবে। জুনের মধ্যে ডিটেইল ডিজাইন এর ঋণ চুক্তি হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এ বন্দরে ২০২০ সাল থেকে শুরু হবে ৬০ কোটি ডলারের নির্মাণ কাজ। আর ২০২৩ সালে বন্দরের অধীনেই আনুষ্ঠানিকভাবে অপারেশন কার্যক্রম শুরু হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হলে আধুনিক কনটেইনারবাহী জাহাজ, খোলাপণ্যবাহী জাহাজ ও তেলবাহী ট্যাংকারকে জেটিতে ভিড়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের উপর চাপ কমবে, সেই সাথে দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি-রপ্তানির চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া মাতারবাড়ি এবং মহেশখালি অঞ্চলে গড়ে উঠা শিল্পাঞ্চলগুলোকে পণ্য পরিবহনে সহযোগিতা করা সম্ভব হবে।
মে মাসে ঋণ কার্যক্রম, জুনের মধ্যে ডিটেইল ডিজাইন চুক্তি
২০২০ সাল থেকে শুরু হবে ৬০ কোটি ডলারের নির্মাণকাজ
চট্টগ্রাম বন্দরের উপর কমবে চাপ, বৃদ্ধি পাবে আমদানি-রপ্তানি
দেশের অন্যান্য বন্দরে কন্টেইনার পরিবহনে বাড়বে সুযোগ
বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, জাপানের অর্থায়নে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ৪৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের কন্টেইনার জেটি এবং ৩০০ ফুট দৈর্ঘ্যের মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ করা হবে। ওই জেটিতে ১৬ মিটার গভীরতার জন্য মাদার ভেসেল ভিড়ার সুযোগ থাকায় একসাথে ৮ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে ভিড়তে পারবে। একটি জাহাজেই চট্টগ্রাম বন্দরের দ্বিগুণের চেয়েও বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা সম্ভব হবে। ফলে এখান থেকে ফিডার ভেসেলের মাধ্যমে দেশের অন্যান্য বন্দরে কনটেইনার পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর মাতারবাড়ি বন্দরে আরো একাধিক জেটি নির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকবে। কন্টেইনারসহ অন্যান্য কার্গোর পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে বন্দরের আয়তন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
এছাড়া মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর জাপানের কাশিমা এবং নিগাতা পোর্টের মডেলের আলোকে নির্মিত হবে। এ বন্দরটি সমুদ্র কিনারায় নয়, চ্যানেল তৈরির মাধ্যমে বন্দরকে সমুদ্রের সাতে যুক্ত করা হবে। সেই সাথে চ্যানেলে যাতে পলি জমতে না পারে সে লক্ষ্যে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণ করে পানির প্রবাহ রোদ করা হবে।
এদিকে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের হিন্টারল্যান্ডে কানেকটিভিটি উন্নয়নে গ্রহণ করা হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। সড়কপথে পণ্য পরিবহনে জাইকার অর্থায়নে সড়ক ও জনপথ বিভাগ মাতারবাড়ি পর্যন্ত সংযোগ সড়ক এবং রেলপথ বিভাগ ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা ভবিষ্যত মাতারবাড়ি বন্দরের সাথেও যুক্ত হবে। ফলে মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর ‘ইন্টারমডাল’ কানেকটিভিটির আওতায় চলে আসবে।
অপরদিকে দেশের ব্যবসা বাণিজ্যের বর্তমান অগ্রগতি আলোকে ২০৪১ সালের মধ্যে উৎপাদন খাতের ব্যাপক সম্প্রসারণ হবে। এ সময় বর্তমান প্রবৃদ্ধি অনুযায়ি কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ দাড়াবে ৫.৭ মিলিয়ন টিইইউস থেকে ৬.৫ মিলিয়ন টিইইউস এবং জাহাজের সংখ্যা হবে ৮ হাজার ২০০টি। এ ব্যাপক সংখ্যক জাহাজ এবং কনটেইনার হ্যান্ডেলিংয় জন্য আর একটি সমুদ্র বন্দরের বিকল্প নেই বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ সর্বোচ্চ ২৫০০ টিইইউস কনটেইনার নিয়ে ভিড়তে পারে। এ বন্দরে ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এবং ৯.৫ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ ভিড়তে পারে না। মাদার ভেসেল বন্দরের জেটিতে আসতে পারে না। ফলে ফিডার জাহাজ করে কনটেইনার আনা নেওয়া করতে হয়। এ কারণে প্রতিদিন ৩৫০০ থেকে ৩৮০০ টিইইউস আমদানি পণ্যের বেশি কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা যায় না। এসব বিবেচনায় মাতারবাড়ি অধিক ড্রাফটের জাহাজের সমুদ্র বন্দর কনটেইনার পরিবহনে বাংলাদেশের জন্য উত্তম বিকল্প হতে পারে।
বন্দর চেয়ারম্যান জুলফিকার আজিজ বলেন, মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দরের সাথে সড়ক ও রেলপথ সংযোগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মাতারবাড়িতে প্রাথমিকভাবে দুটি টার্মিনাল হবে। সেখানে ৩২০-৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এবং ১৬ মিটার ড্রাফটের ৮ হাজার টিইইউ’স কন্টেইনারবাহী জাহাজ ভিড়তে পারবে।
এদিকে গতকাল সোমবার ‘স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন ওয়ার্কশপ অন মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ট্রেনিং সেন্টারে।
কর্মশালায় জুলফিকার আজিজ বলেন, আমাদের হাতে যেসব প্রকল্প আছে। যেমন- পিসিটি, লালদিয়া ও বে-টার্মিনাল এগুলো শেষ হওয়ার পরও আমাদের সক্ষমতা হবে সাত মিলিয়ন টিইইউ’স। আমাদের আশা ২০২৩ সালের মধ্যে মাতারবাড়িতে নতুন বন্দরের অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারব। এর পরিচালনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
কর্মশালায় বন্দর পর্ষদ সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. জাফর আলম মাতারবাড়ি সমুদ্রবন্দর বিষয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
এতে জানানো হয়, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে কয়লা আমদানি ও খালাসের জন্য যে চ্যানেল ও টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে, সে একই চ্যানেল ব্যবহার করে সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে থাকবে দুটি টার্মিনাল। জাপানের কাশিমা ও নিগাতা বন্দরের আদলে নির্মিতব্য মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দরটিতে চ্যানেল তৈরির মাধ্যমে বন্দরকে সমুদ্রের সাথে যুক্ত করা হবে। চ্যানেলে পলি জমা বন্ধে পানি প্রবাহ রোধ করতে নির্মাণ করা হবে ‘ব্রেক ওয়াটার’।
অনুষ্ঠানে জাইকা প্রতিনিধি ওয়াতারু ওসাওয়া, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রতিনিধিসহ বন্দরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।