কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি তৈরি বঙ্গবন্ধু টানেল। টানেলটি প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সাথে সংযুক্ত করবে এবং দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমিয়ে দেবে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। আর কয়েক দিন পর এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। বাংলাদেশ প্রবেশ করবে টানেল যুগে। যোগাযোগ উন্নয়নে ঘটবে এক বিশাল পরিবর্তন।
দেশের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে এই টানেলটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানেও এগিয়ে আসবে এই টানেলটি। সাশ্রয় হবে কর্মঘণ্টা, কাজে আসবে গতিশীলতা। মানুষের জীবন হবে স্বাচ্ছন্দ্যময়। বেড়ে যাবে ওই অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন। বাড়বে জাতীয় প্রবৃদ্ধি।
অক্টোবর মাসেই এই টানেল উদ্বোধন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এখন তারই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। পদ্মা সেতু চালুর ফলে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হয়েছে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের। ফলে অর্থনৈতিকভাবেও উপকৃত হয়েছে ওই এলাকাগুলি।
এবার বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের চিত্র পালটে যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দরকে সরাসরি আনোয়ারা উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করা ছাড়াও কক্সবাজারকে চট্টগ্রামের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত করবে এই টানেল।
ফলে, বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী বলে পরিচিত চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপক প্রসার ঘটবে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, এই টানেল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ককে। সেইসঙ্গেই চট্টগ্রামের সঙ্গে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ আরও সহজ হবে।
এই টানেলের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হারুনুর রশীদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী অক্টোবর মাসেই জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে এই টানেলটি। বাংলাদেশের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন যে আগামী ২৮ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করতে পারেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ ও চিন সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে করা হয়েছে এই টানেল। এর মধ্যে ২ শতাংশ হারে সুদে ৫৯১৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে চিন। ৩.৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ টানেলের সঙ্গে ৫.৩৫ কিলোমিটারের এপ্রোচ রোডের পাশাপাশি ৭৪০ মিটারের একটি সেতু রয়েছে। এটাই চট্টগ্রাম শহর, বন্দর এবং নদীর পশ্চিমদিককে যুক্ত করেছে পূর্বদিকের সঙ্গে।
এই টানেল ৩৫ ফুট প্রস্থ এবং ১৬ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট দুটি টিউব ১১ মিটার ব্যবধানে তৈরি করা হয়েছে। এমনভাবে তা তৈরি করা হয়েছে যাতে ভারী যানবাহন সহজেই টানেলের মধ্য দিয়ে চলতে পারে। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর শেখ হাসিনা এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে টানেলটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম টানেল টিউবের বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
বঙ্গবন্ধু টানেল চালু হলে চট্টগ্রামে এলাকায় অর্থনৈতিক কাজের আরও প্রসার হবে। কর্ণফুলীর দক্ষিণে আনোয়ারায় রয়েছে কোরিয়ান এবং চায়না ইপিজেড, সিইউএফএল এবং পারকি সমুদ্রসৈকত। আনোয়ারা দিয়েই কক্সবাজার, বাঁশখালী ও মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।
এই টানেল প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়েকে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করে দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার কমাবে। টানেলে ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার বেগে চলতে পারবে যানবাহনগুলি।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি এবং নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় পরিচালক আবু মোরশেদ চৌধূরী খোকা জানিয়েছেন, টানেলটি চালু হলে এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হবে, যা কক্সবাজারের বাণিজ্যিক এবং যোগাযোগের সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।