দুই বিদ্রোহী প্রার্থী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য নুরুল আবছার ও কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সভাপতি শাহীনুল হক মার্শালের কারণে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরীসহ বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা (ভোটাররা)। অন্যদিকে দুই বিদ্রোহীকে দমাতে কেন্দ্রের দিকে তাকিয়ে আছে জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ।
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত ও সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে নির্বাচনী প্রচারণা বেশ জমে উঠেছে। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, সংরক্ষিত তিনটি ওয়ার্ডে ১১ জন নারী এবং ৯টি ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য পদে ৩৩ জনসহ সর্বমোট ৪৮ জন প্রার্থী জেলার ৭১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার (সদস্য), ৮ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান এবং চারটি পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের মন জয়ে চেষ্টার ত্রুটি রাখছেন না।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৭ অক্টোবরের জেলা পরিষদ নির্বাচণে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী মোটর সাইকেল, সাবেক পৌর মেয়র নুরুল আবছার তালগাছ, জেলা আওয়ামী লীগের প্রয়াত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজাম্মেল হকের ছেলে শাহীনুল হক মার্শাল আনারস এবং মঙ্গল পার্টি নেতা জগদিশ বড়ুয়া প্রজাপতি প্রতীকে লড়ছেন।
গেল সোমবার প্রতীক পেয়েই আনুষ্ঠানিক প্রচারণা নেমেছেন প্রার্থীরা। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব প্রচারণা অব্যাহতভাবে চলে আসছে তফসিল ঘোষণার পর থেকে। জেলার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ৯৯৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে আগামী জেলা পরিষদের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করবেন।
প্রার্থী ও ভোটারদের দেওয়া তথ্যমতে, যতই দিন ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচারণা জমে উঠছে। তবে চেয়ারম্যান পদের নির্বাচন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা। শেষ মুহূর্তে যদি বিদ্রোহী দমানো সম্ভব না হয় তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তক আহমেদ ধরাশয়ী হতে পারে শাহীনুল হক মার্শালের কাছে, এমনটাই অভিমত জানিয়েছেন ভোটাররা।
এ বিষয়ে উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নং ওয়ার্ডের সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন, চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক ও অপর দুই বিদ্রোহী প্রার্থী আবছার ও মার্শাল তিনজনই হেভিওয়েট। একদিকে মোস্তাক সাহেব বর্তমান পরিষদের চেয়ারম্যান। এর আগে প্রশাসক ছিলেন। তার আগে এমপি ছিলেন। অন্যদিকে আবছারের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তাও আকাশচুম্বী। তিনি চারবার কক্সবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান ও মেয়র ছিলেন এবং বাংলাদেশ চেয়ারম্যান সমিতির মহাসচিব ছিলেন। অপরদিকে মার্শাল কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম মোজােম্মেল হকের ছেলে। তাদের বাড়ি হক শন কক্সবাজারের মানুষের কাছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর হিসেবে পরিচিত। এছাড়া মার্শাল অপর দুই প্রার্থীর চেয়ে তরুণ। পরিবর্তনের ডাক দিয়ে ইতিমধ্যে তিনি অনেকের নজর কেড়েছেন। এই কারণে এবারের চেয়ারম্যানপদের ভোট নিয়ে ভোটাররা (আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধি) বিপাকে রয়েছেন। এব্যাপারে কেন্দ্রের নির্দেশনা দরকার।
তিনি আরও বলেন, জেলা পরিষদ থেকে নির্বাচন শেষ হলে ভোটারদের মূল্যায়ন করা হয় না। পরিষদ থেকে ওয়ার্ডভিত্তিক যে উন্নয়ন কাজ করা হয়, অতীতে তার সুষম বণ্টন ঘটেনি। আমরা চাই এবার যেন সেই মূল্যায়ন করা হয়।
উখিয়ার হলদিয়া পালংয়ের চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোস্তাক আহমেদকে মনোনয়ন দিয়েছেন। কিন্তু দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁরাও আওয়ামী লীগের। মার্শাল কক্সবাজার আওয়ামী লীগের প্রাণ মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে। ওই পরিবারের অবদানকে তো অস্বীকার করা যাবে না।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধি বলেন, বিদ্রোহী দমাতে না পারলে এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের জয়ী হওয়ার সম্ভবনা নেই। কারণ বেশিরভাগ ভোটারই জেলা পরিষদের অতীত আচরণ, বণ্টন ও কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট। সেক্ষেত্রে তারুণ্য নির্ভর পরিবর্তনের ডাক দেওয়া মার্শালই পরতে পারেন জয়ের মালা।
কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেকসহ সভাপতি ও বিদ্রোহী প্রার্থী শাহীনুল হক মার্শাল বলেন, আমার বাবা কক্সবাজার আওয়ামী লীগের কি সেটা সকলেই জানেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে আমি নির্বাচন থেকে সরে গিয়েছিলাম। কিন্তু মোস্তাক আহমদের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিতে অতীষ্ঠ হয়ে আওয়ামী লীগের জনপ্রতিনিধিরা (ভোটাররা) আমাকে জোর করে ফের নির্বাচনে দাঁড় করান।
তিনি আরও বলেন, আপনারা খবর নিলে জানতে পারবেন কক্সবাজার জেলা পরিষদ কতটা দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। আমি সেই অচলায়তনের পাহাড় ভাঙতে ভোটারদের চাপে পড়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমাকে যোগ্য মনে করে আবারও মনোনয়ন দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘদিন ধরে আমি জেলা পরিষদে কাজ করছি। এখানকার সব ভোটারদের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক। আমি আমার জয়ে বিশ্বাসী। তবে তবুও খারাপ লাগছে দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায়। বিষয়টি জেলা ও কেন্দ্রকে অবহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিদ্রোহীদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে আনতে জেলা আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত তারা না সরলে কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রিটার্নিং কর্মকর্তা কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানান, ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে জেলা পরিষদ নির্বাচন। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করতে জেলার ৯টি ভোট কেন্দ্র প্রস্তুতির কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনে সাধারণ ওয়ার্ড (৬ নম্বর) চকরিয়া উপজেলা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন আবু তৈয়ব। কিন্তু তার দাখিলকৃত হলফনামায় বিভিন্ন মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কাছে তৈয়বের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেন। শুনানি শেষে আবু তৈয়বের প্রার্থিতা বাতিল হয়। পরে আবু তৈয়ব উচ্চ আদালতে গেলে প্রার্থিতা ফিরে পান। এরপর প্রতিপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গেলে ফের আবু তৈয়বের প্রার্থিতা স্থগিত হয় ৮ সপ্তাহের জন্য। অবশ্য সেই আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে তৈয়বের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সুত্র: মহানগর নিউজ