আগামী শুক্রবার (১৪ মার্চ) আসরের নামাজ আদায়ের মাধ্যমে নব নির্মিত কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের (কাচারী পাহাড়স্থ সাবেক কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ) যাত্রা শুরু হবে। এর আগে একইদিন বেলা আড়াইটায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে নব নির্মিত কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধনের পর ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসেন দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করবেন। সংশ্লিষ্ট সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কক্সবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র কাচারি পাহাড়স্থ সাবেক কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি ভেঙে সেখানে আধুনিক ও নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে ৪ তলা বিশিষ্ট কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গণপূর্ত বিভাগ "প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬০ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (২য় সংশোধিত)" শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ সুরম্য ভবনটি নিমার্ণ করেছে।
কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানিয়েছেন, ১৭ কোটি ২০ লক্ষ ৭৮ হাজার টাকা ব্যয়ে বহুমুখী সুবিধা সম্বলিত ভবনটি নির্মাণ করা হয়। ভবনটির কাজ ইতিমধ্যে শতকরা একশত ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ভবনটির নীচতলায় গাড়ি পার্কিং, ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাম্প রুম, ইসলামি ফাউন্ডেশনের উপ পরিচালকের অফিস, পুরুষ মুসল্লীর অজুখানা, জেনারেটর রুম, লাশ ধোয়ার ঘর, প্রতিবন্ধীদের নামাজ কক্ষ, গণশিক্ষা কেন্দ্র, ডাইনিং রুম, রান্নাঘর, স্টোর রুম, ইসলামিক বুক সেন্টার ও গার্ডরুম। ২য় তলায় নামাজের মূল স্থান, পুরুষ মুসল্লীর অজুখানা, ইসলামি ফাউন্ডেশনের পরিচালকের অফিস, হিসাব রক্ষকের রুম, ইসলামি ফাউন্ডেশনের সাধারণ কর্মচারীদের রুম, ইসলামি গবেষণা কেন্দ্র, ইসলামি ফাউন্ডেশনের সহকারী পরিচালকের কক্ষ। ৩য় তলায় পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক নামাজের স্থান, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক অজুখানা, ইসলামি লাইব্রেরি ও সম্মেলন কক্ষ। ৪র্থ তলায় পুরুষদের নামাজের স্থান, হেফজখানা, পুরুষ মুসল্লীদের অজুখানা, ইমামের কক্ষ, শিক্ষককের কক্ষ, খাদেম ও মোয়াজ্জেমের কক্ষ, ২ টি গেস্ট রুম ও বারান্দা রয়েছে। নব নির্মিত কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের লোকবল নিয়োগের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন ৪টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করেছেন। পদগুলো হচ্ছে-ইমাম একজন, মোয়াজ্জেম একজন এবং খাদেম ২ জন।
নতুন মসজিদটিতে মহিলা পুরুষ মিলিয়ে মোট ১২ শত মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। ভেঙে ফেলা পুরাতন কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মসজিদ ও মসজিদের চেহেনে প্রায় দেড় হাজার মুসল্লী একত্রে নামাজ আদায় করতে পারতো। স্থানীয় মুসল্লীদের মতে, জনসংখ্যার আধিক্য ও জেলা সদরের মসজিদ বিবেচনায় নব নির্মিত জেলা মডেল মসজিদে কমপক্ষে ৩ হাজার মুসল্লী একত্রে নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকলে ভালো হতো। মুসল্লীদের মতে, এখন জুমা, বিশেষ বিশেষ ইসলামি দিবস, রমজানে নব নির্মিত জেলা মডেল মসজিদে মুসল্লীদের স্থান সংকুলান না হওয়ার আশংকা রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান ও আনুষাঙ্গিক কাজের জন্য নব নির্মিত মসজিদে প্রচুর স্থান বরাদ্দ করায় মূলত নামাজের জায়গা সংকুচিত হয়ে গেছে। এছাড়া, প্রয়োজনের তুলনায় অজুখানা সংখ্যাও অপ্রতুল হয়েছে বলে মন্তব্য করেন, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন মুসল্লী। এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ জানিয়েছে, মসজিদের ডিজাইন, প্ল্যান উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকল্পের কাজ শুরু করার আগেই অনুমোদন করা হয়েছে। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের সময় পূর্ব অনুমোদিত ডিজাইন, প্ল্যান তাদের পরিবর্তন করার কোন সুযোগ নেই।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সাধারণ) নিজাম উদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে নব নির্মিত কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। এসময় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ.ফ.ম খালিদ হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি, চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। উদ্বোধনের পর আসরের নামাজের মাধ্যমে সর্বস্থরের মুসলমানদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদটি উম্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস এর আগমন উপলক্ষে কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
ইসলামি ফাউন্ডেশন কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক ফাহমিদা বেগম জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুস কর্তৃক কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সফল করতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ১৯১৯ খৃষ্টাব্দে কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা মুনসী উজির আলী সহ কয়েকজন হিতৈষী ব্যক্তির উদ্যোগে কক্সবাজার জেলা সদরে এ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমে মসজিদটির নাম ছিল 'মুনসী উজির আলী মসজিদ'। পরে এটিকে 'কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ' হিসাবে নামকরণ করা হয়। এখন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজার জেলা মডেল মসজিদ ও ইসলামীক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসাবে নামকরণ করা হয়েছে।