রাজধানীতে ইয়াবার তিনটি চালান পরপর ধরা পড়েছে। এর মধ্যে দুটি চালান এসেছে আকাশপথে। এগুলোর একটি এনেছে মামা-ভাগনে, অন্যটি স্বামী-স্ত্রী। এই কারবারিরা রীতিমতো বিলাসবহুল কায়দায় ইয়াবা ফেরি করে। কক্সবাজার থেকে বিমানে উড়ে এসে ঢাকায় ইয়াবা পৌঁছে দেয়। ফেরেও বিমানে। অভিযান-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মাঝে কয়েক মাস বিরতির পর আবার আকাশপথে ইয়াবার চালান আসছে। সেই সঙ্গে ট্রেনেও আনা হচ্ছে এ মাদক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) পরিদর্শক দেওয়ান মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান সমকালকে বলেন, গ্রেপ্তার এড়াতে মাদক কারবারিরা একেক সময় একেক রুট ও কৌশল বেছে নেয়। তেমনই তারা এখন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে ফাঁকি দিতে বিমান ও ট্রেনে ইয়াবা আনছে। তবে আমাদেরও কড়া নজরদারি রয়েছে। নিয়মিত অভিযানে ধরা পড়ছে ইয়াবার বড় বড় চালান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৪ অক্টোবর ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে কফির নূর নামে এক রোহিঙ্গা ও তাঁর ভাগনে মো. জুবাইরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা কক্সবাজারের টেকনাফে থাকেন। সেখানকার মাদক কারবারিদের বাহক হিসেবে কাজ করেন। ইয়াবার চালান নিয়ে তারা কক্সবাজার থেকে বিমানে ঢাকায় আসেন। এখানে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এক কারবারির কাছে চালানটি পৌঁছে দেওয়াই তাদের কাজ। ছয় হাজার পিস ইয়াবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য তারা দু’জন ৩০ হাজার করে মোট ৬০ হাজার টাকা পান। বিমানভাড়াসহ যাতায়াতের যাবতীয় খরচ টেকনাফের ইয়াবা কারবারির। প্রতি মাসে তারা তিন থেকে চারবার ইয়াবা নিয়ে ঢাকায় আসতেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়। সেই হিসাবে মাসে তাদের আয় দেড় লাখ টাকার বেশি।
এ ঘটনার এক দিন পর ১৬ অক্টোবর বিমানবন্দর এলাকায় এক হাজার পিস ইয়াবাসহ এক দম্পতিকে গ্রেপ্তার করে ডিএনসি। তারা হলেন আলী জওহার ও ইভা আক্তার ইতি ওরফে জমিলা। তাদের মধ্যে জওহারের বাড়ি টেকনাফের হৃীলা ইউনিয়নে। তিনি শ্বশুরবাড়ি গাজীপুরে বেড়াতে আসার নামে সস্ত্রীক ইয়াবার চালান নিয়ে আসতেন। বিমানে উড়ে এসে ঢাকায় চালান পৌঁছে দিয়ে ফিরে যেতেন হৃীলায়। প্রতি পিস ইয়াবা পৌঁছানোর জন্য ১০ টাকা হিসেবে তিনি এই চালানের জন্য ১০ হাজার টাকা পান।
সর্বশেষ ১৭ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার নতুন বাজার এলাকা থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন হৃীলা ইউনিয়নের বাসিন্দা রোহিঙ্গা তুহাইল আহম্মদ, তাঁর ছেলে মোহাম্মদ শোয়াইব ও মোহাম্মদ আহাম্মদ। তাদের কাছে পলিথিনের প্যাকেটে তিন হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। তারা অবশ্য বাহক নন; নিজেরাই এগুলো বিক্রি করেন। টেকনাফ থেকে সড়কপথে এসে ঢাকার নির্দিষ্ট কিছু কারবারির কাছে বিক্রি করে টাকা নিয়ে ফিরে যান।
ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজারের ট্রেন যোগাযোগ চালু হওয়ার পর এই রুট ব্যবহার করেও শুরু হয়েছে ইয়াবা কারবার। যাত্রী বেশে ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে কারবারিরা। এক্ষেত্রে তারা কমলাপুরের বদলে আগের কোনো স্টেশনে নেমে যান। কারণ ঢাকা বিমানবন্দর ও কমলাপুর স্টেশনে নিরাপত্তার কড়াকড়ি রয়েছে।