বজ্র ড্রাগনের দেশ ভুটান ঘুরে আসতে পারে স্বল্প খরচে।কক্সবাজার থেকে সড়ক পথে ভুটান যেতে হলে আপনাকে প্রথমেই ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, ভিসার মেয়াদ মাত্র দু’সপ্তাহ। অর্থাৎ আপনি যেদিন যাবেন তার কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ দিন আগে আপনাকে ভারতীয় ভিসা সেন্টার গুলশানে আবেদন করতে হবে।
ভিসা জমা দিতে যা লাগবে-
* ভিসা ফর্ম পূরণের সময় ভিসা টাইপ ট্রানজিট ও পোর্ট বাই রোড চ্যাংরাবান্ধা/জয়গাঁও সিলেক্ট করবেন।
* সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডযুক্ত দুই ইঞ্চি বাই দুই ইঞ্চি ছবি, ফরমের সাথে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিতে হবে।
* ন্যাশনাল আইডি বা জন্মসনদের ফটোকপি।
* বর্তমান ঠিকানার সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ বা গ্যাস বিল শেষ ৬ মাসের।
* চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এনওসি (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট), ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স এবং ছাত্রছাত্রীদের আইডি কার্ডের ফটোকপি।
* ডলার এন্ড্রোসমেন্টের (২০০ ডলার) কপি অথবা ব্যাংক স্টেটমেন্টের (১৫ হাজার টাকা থাকতে হবে) কপি।
* বর্তমানে ভুটানে হোটেল রিজার্ভেশনের কাগজও দেখতে চায় ভারতীয় হাইকমিশন। তাই ভুটানে যে হোটেল বুকিং দিয়েছেন, এর কাগজও জমা দিতে হবে।
* পাসপোর্ট ও সেটার ফটোকপি (পাসপোর্টের মেয়াদ সর্বনিম্ন ৬ মাস থাকতে হবে)। আগে ইন্ডিয়ান ভিসা থাকলে তারও ফটোকপি লাগবে। পুরাতন পাসপোর্ট থাকলে সেটা জমা দিতে হবে।
[caption id="attachment_66121" align="alignleft" width="5024"] উখিয়ায় পাওয়া যাচ্ছে দেশি ও অভ্যন্তরীণ বিমানের সব টিকিট[/caption]
* বাসে আসা যাওয়ার কনফার্ম টিকেট সেক্ষেত্রে শ্যামলী বা এসআর পরিবহন বা অন্য যেকোনো পরিবহনের বুড়িমারি বর্ডার-শিলিগুড়ি পর্যন্ত আসা যাওয়ার টিকেট। যেহেতু কনফার্ম টিকেট কাটবেন বাসের সেহেতু ভ্রমণ তারিখ ও হাইকমিশনে ভিসার আবেদন জমা দেয়ার তারিখের সঙ্গে ১০-১২ দিন গ্যাপ রাখবেন। কারণ, জমা দেওয়ার ৮ থেকে ১০ দিন পর ভিসা দেওয়া হয়। তাই বাসের টিকেটের তারিখ এর পরে হতে হবে। বাসের টিকেটের ফটোকপিও জমা দিতে হবে মূল কপির সাথে।
যেভাবে যাবেন
ট্রানজিট ভিসা নিয়ে সোজা চলে যান বুড়িমারি বর্ডারে। ঢাকা থেকে শ্যামলী, এসআর, মানিক আর নাবিলসহ কয়েকটি বাস ছাড়া হয়। ভাড়া ৮৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। রাত ৮টার মধ্যে এসব বাস ঢাকা থেকে ছেড়ে যায়। পরদিন সকালে অর্থাৎ ভোরে পৌঁছে যাবেন বুড়িমারি। মনে রাখবেন বাংলাদেশের এপাশের নাম বুড়িমারি আর ভারতের ওপাশের নাম চ্যাংড়াবান্ধা। বর্ডার খোলা হয় সকাল ৯টায়। এ সময়টুকু বসেই থাকতে হবে।
বাংলাদেশের ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে চ্যাংড়াবান্ধা যেতে হবে। সেখানেও রয়েছে বেশকিছু নিয়মকানুন। চ্যাংড়াবান্ধা থেকে আপনাকে যেতে হবে জয়গাঁও বর্ডার। ট্যাক্সিতে চলে যেতে পারেন। সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টার মতো। ট্যাক্সিতে ৪০০ রুপি মতো খরচ পড়বে জনপ্রতি। ৪ জন রিজার্ভ যেতে চাইলে লাগবে দেড় থেকে দুই হাজার রুপি। চাইলে বাসেও যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ কমে আসবে অনেকটাই।
জয়গাঁও থেকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন পয়েন্ট টেম্পোতে লাগবে ১০ রুপি, সময় ১৫ মিনিট। ইমিগ্রেশনের কাজ সেরে আপনাকে হেঁটেই ঢুকতে হবে ভুটান। এটা ভুটানের প্রবেশ পথ, ফুন্টসোলিং। এখানেই আপনাকে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেবে ভুটান।
এবার নিশ্চিন্তে ভুটান ঘোরার পালা। চাইলে সেদিন ফুন্টসোলিং থেকে যেতে পারেন। মোটামুটি কম খরচেই মিলবে ভালো হোটেল। এক রুম ১ থেকে দেড় হাজার টাকায় থাকতে পারবেন দু’জন। সময় বেশি না থাকলে সেদিন ফুন্টসোলিং না থেকে চলে যান পারো অথবা থিম্পুতে। ওখানেই বাসস্ট্যান্ড। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শেষ বাস। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে পারো কিংবা থিম্পু যেতে পারেন, ভাড়া নেবে ২৫০ রুপী, সময় লাগবে ৬ ঘণ্টা। তবে হাতে সময় থাকলে একদিন থেকে ছোট্ট শহর ফুন্টসোলিং ঘুরে দেখতে ভুলবেন না। সুন্দর সাজানো গোছানো শহরের পাশ দিয়ে রয়েছে চলেছে নদী।
কীভাবে যাবেন (2)
ভুটান ভ্রমণের জন্য প্রথমেই আপনার প্রয়োজন হবে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসার, যা কিনা ঢাকার গুলশান (এবং এখন অন্যান্য শাখাতেও পাওয়া যায়, যেমন চট্টগ্রাম) শাখা থেকে আপনি করে নিতে পারেন। এরপর আপনাকে শ্যামলী বাসের টিকেট আগেই করে রাখতে হবে (বাসের টিকেট ট্রানজিট ভিসার কাগজপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে)। আরামবাগ থেকে বাস ছাড়ে রাত ৮টায় এবং কল্যাণপুর থেকে ৯টায়।
একটা কথা মনে রাখবেন, শ্যামলীর এসি বাস (কিন্তু অবস্থা খুবই করুন) যা হোক বাস বুড়িমারী সীমান্তে পৌঁছাতে সময় নেবে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। তার মানে পরদিন সকাল ৭-৮টা। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিস খোলে সকাল ৯টায়, বাস আগে পৌঁছালে ‘Sometimes Abashik Hotel’-এ ফ্রেশ ও রেস্ট নিতে পারেন, জনপ্রতি ২০০ টাকা, কিন্তু চারজন হলে পড়তে পারে ৪০০ টাকা। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিসে কাজ শেষ হতে কিছুটা সময় লাগে। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। ইমিগ্রেশন অফিসের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে পায়ে হেঁটে প্রবেশ করুন ভারতে। চ্যাংড়াবান্ধা (ভারত) ইমিগ্রেশন অফিসে কাজ শেষ হতে তেমন সময় লাগে না, তাঁরা ভালোই দ্রুত কাজ করেন। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে ডলার/টাকা রুপিতে এক্সচেঞ্জ করে নিন (এখানেই ভালো রেট পাবেন)। ও হ্যাঁ, ডলার এক্সচেঞ্জের রসিদ নিয়ে নেবেন, পরে দরকার পড়তে পারে আপনার। ইমিগ্রেশন আর ডলার এক্সচেঞ্জের কাজ শেষ করে উঠে পড়ুন আপনার জন্য অপেক্ষারত চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে শ্যামলীর বাসটিতে। অথবা ট্যাক্সিতে করে চ্যাংড়াবান্ধা টু জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস (ভুটান সীমান্তের কাছে) যেতে পারেন, ভাড়া পড়বে ১০০০-১৫০০ রুপির মতো।
আপনি শ্যামলী বাসেই যেতে পারেন। তারপর ময়নাগুরি নামক জায়গায় নেমে একটা লোকাল বাসে উঠে সোজা হাসিমারা। এখানে ভাড়া জনপ্রতি ৫০ রুপি। সেখান থেকেই অটোতে জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস (ভুটান সীমান্তের কাছে) ভাড়া জনপ্রতি সাত রুপি।
ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে Departure/এক্সিট (সব ঠিক থাকলে সময় তেমন লাগে না) সিল লাগিয়ে সোজা ভুটান।
ভুটান ইমিগ্রেশন অফিস ফুন্টশোলিং-এ অবস্থিত জাস্ট ভুটান গেটের পাশেই, এখান থেকে on-arrival ভিসা নিতে হবে, এখান থাকে শুধু থিম্পু আর পারো-এর অনুমতি পাওয়া যাবে পুনাখা, হ্যাঁ ভ্যালী, বুমথাং ও অনন্য জায়গার অনুমতি পরে থিম্পু থেকে নিতে হবে আপনাকে, মনে রাখবেন ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস শুধু মাত্র বাংলাদেশি আর বিদেশি (Europe/ American etc)-দের জন্য সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে, কোনো সরকারি বন্ধ নেই। বাংলাদেশিদের ভুটানিরা খুব সম্মান করেন, কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসে আমাদের কে বলছিলেন কিছু বাংলাদেশিরা শুধু পাসপোর্টে সিল লাগানোর জন্য অনেক দিনের ভিসা নেয় আর এক-দুদিন পরই ফিরে আসে, এটা খুবই খারাপ। আমরাই ওদের বিশ্বাস নষ্ট করছি।
ফুন্টশোলিং ভুটান ইমিগ্রেশন অফিস থেকে on-arrival ভিসা নিয়ে আপনি চার সিটের একটি ট্যাক্সি ভাড়া করতে পারেন (১৮০০ রুপি দিয়ে), যা সোজা চলে যায় থিম্পু।
দর-দাম করে গাড়ি ভাড়া করতে হবে আপনাকে। আপনি ড্রাইভার নিতে পারেন নেপালি, ভুটানি। তারা খুব ভালো, পরবর্তীকালে আপনি যেই কদিন ভুটানে থাকবেন এদের ট্যাক্সিতে করে আপনি ঘুরতে পারেন সঙ্গে যে কদিন আপনি থাকবেন সারা দিনের জন্য ওদের গাড়িটি নিয়ে আপনি নিতে পারেন, যার মূল্য পড়তে পারে আনুমানিক ১১ হাজার রুপি। এরা খুব ভালো ইংলিশ আর হিন্দি জানে। তা ছাড়া তারা ড্রাইভার ও গাইড হিসেবে খুবই মিশুক ও বন্ধুত্বপূর্ণ।
মনে রাখবেন, ফুন্টশোলিং থেকে থিম্পু বাসেও যেতে পারবেন। শেষ বাসের সময় বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট, ভাড়া ২৪০ রুপি, সময় লাগবে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা।
ও ভালো কথা, আপনি আগে থাকেই একটা হোটেলে রুম বুক করে রাখতে পারেন। মনে রাখা ভালো, ভুটানে সব দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্ট সব কিছুই রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে বন্ধ হয় যায় (দু-একটি দোকান শুধু খোলা থাকে), তাই হোটেল বা রুম ঠিক আর ডিনার না করে নিলে খবর আছে।
ভুটানে থাকবেন কোথায়
ভুটানে দামি, কম দামি সব ধরনেরই হোটেল আছে। কিন্তু হোটেলে অবশ্যই দামাদামি করে উঠবেন…যেমন ৭০০-৮০০ রুপি থাকে ১৫ হাজার ++ রুপি পর্যন্ত, আপনি সর্বমিম্ন ৮০০ রুপি আর সর্বোচ্চ ১৫৪০ রুপি দামের হোটেলে থাকতে পারেন। সবগুলো হোটেলই নিশ্চিন্ত নিরাপদ।
ভুটানে যা দেখবেন
থিম্পু
সকালে ঘুম থেকে উঠে আপনি ৭টায় প্রস্তুত হয়ে হোটেল থেকে বের হতে পারেন ৮টার মধ্যে, তাড়াতাড়ি নাশতা করে পুরো থিম্পু ঘুরে দেখতে পারেন। কিন্তু মজার ব্যাপার কোনো রেস্টুরেন্টই সাড়ে ৯টা-১০টার আগে খোলে না। নাশতা তৈরি হতে হতে সাড়ে ১০টা। যা হোক, নাশতা করে আপনি বের হতে পারেন। এরপর ট্যাক্সি নিয়ে পুরো থিম্পু দেখতে পারেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরো থিম্পুর আশপাশে ঘুরতে পারেন।
থিম্পুতে সাইট সিইং-এর জন্য উল্লেখযোগ্য ও দর্শনীয় স্থানগুলো বুদ্ধ দর্দেনমা স্ট্যাচু, সীমতখা ডিজং, ন্যাশনাল তাকিন সংরক্ষিত চিড়িয়াখানা, কিংস মেমোরিয়াল চড়টেন, তাসিছ ডিজং, পার্লামেন্ট হাউস, রাজপ্রাসাদ, লোকাল মার্কেট, ন্যাশনাল স্কুল অব আর্টস, ন্যাশনাল লাইব্রেরি, বিবিএস টাওয়ার ছাড়া আরো অনেক কিছুই।
পুনাখা
আপনার উদ্দেশ্য পুনাখা হতে পারে । মনে রাখা ভালো পুনাখা, হাভেলি, বুম্থাং এই জায়গাগুলোতে যেতে থিম্পু ইমিগ্রেশন অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু কোনো কারণে যদি সরকারি ছুটির দিন হয়, ইমিগ্রেশন অফিস বন্ধ থাকে। তাই আপনি চলে যেতে পারেন পারোতে। মনে করে দেওয়া ভালো থিম্পু থেকে পারোর রাস্তা অসম্ভব রকমের সুন্দর। নিশ্চিত বলতে পারি আপনি এক মুহূর্তের জন্য আপনার চোখ বন্ধ রাখতে পারবেন না। পারো শহরে পৌঁছার পর হোটেল ঠিকঠাক করে ফ্রেশ হয়ে উদ্দেশ্য ঠিক করতে পারেন টাইগার নেস্ট-এ ওঠার। পারো শহর থেকে টাইগার নেস্ট-এর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড/পার্কিং প্লেসে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩০-৪৫ মিনিটের মতো, আর ট্যাক্সি স্ট্যান্ড/পার্কিং প্লেসে থেকে টাইগার নেস্ট-এ পায়ে হেঁটে উঠতে সময় লাগবে প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা (যেতে কষ্ট আছে, কিন্তু অনুভূতি সেই রকম, না গেলে বোঝানো যাবে না, পায়ে হেঁটে উঠতে কষ্ট হলে ঘোড়ার ব্যবস্থা আছে। টাইগার নেস্ট-এর বেজক্যাম্প পর্যন্ত ঘোড়ায় যাওয়া যাবে। খরচ পড়বে জনপ্রতি ৬০০ রুপি/ভুটানিজ গুল্ট্রুম), তারপর বিকেলটা কাটাতে পারেন অসম্ভব সুন্দর আর কাচের মতো স্বচ্ছ পানির পারো নদীর ধারে, এবং রাতে পারো শহরেই থাকতে পারেন। পরের দিন সকাল সকাল বের হয়ে পারোর আর বাকি অসাধারণ সুন্দর জায়গাগুলো দেখতে পারেন যেমন —
কিচু মনাস্টেরি, এয়ারপোর্ট ভিউ পয়েন্ট, ন্যাশনাল মিওজিয়াম/তা-ডিজং, পারো ডিজং, চেলে-লা-পাস ইত্যাদি
প্ল্যান রাখুন বিকেলের মধ্যে থিম্পুতে পৌঁছে যেতে এবং ইমিগ্রেশন অফিস থাকে পুনাখা যাওয়ার জন্য অনুমতি নিয়ে রাখতে পারেন। তারপর রাতে থিম্পুতেই থাকতে পারেন। পরদিন খুব সকালে ঘুম থাকে উঠে রওনা দিতে পারেন পুনাখা উদ্দেশ্যে। নাশতা করতে পারেন পথে, দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন পুনাখাতে। পথে অনেক জায়গায় থেমে থেমে অনেক অনেক ছবি নিতে পারেন আপনি। আবার বিকেলে রওনা দিতে পারেন থিম্পুর উদ্দেশে এবং রাতে থিম্পুতে থাকতে পারেন।
পুনাখার উল্লেখযোগ্য চমৎকার, যে জায়গাগুলো দেখলেই নিশ্চিত করে বলতে পারি মন ভরে যাবে। তা হলো দোচু-লা-পাস, পুনাখা ডিজহং, আর্চারি গ্রাউন্ড ইত্যাদি।
সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা করে আপনি রওনা দিতে পারেন। থিম্পুতে যে জায়গাগুলো বাকি ছিল, সেগুলো দেখতে পারেন। তারপর দুপুর ১২টার দিকে রওনা দিন ফুন্টশোলিংয়ে উদ্দেশ্যে, বিকেল চার-পাঁচটার মধ্যে ফুন্টশোলিং পৌঁছে যেতে পারেন, বিকেল, সন্ধ্যায় ফুন্টশোলিংয়েই ঘুরে দেখতে পারেন (রাতে ইন্ডিয়ান সাইডে গিয়ে, মুসলিম রেস্টুরেন্টে গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ ডিনার করতে পারেন) এবং রাতে ফুন্টশোলিংয়েই থাকতে পারেন।
খুব সকলে ঘুম থাকে উঠতে পারেন ৬টা ৫০ মিনিটে ফুন্টশোলিং ইমিগ্রেশন অফিস থেকে Departure/এক্সিট সিল নিতে পারেন। প্রথমে বলতে পারে আপনাকে ৯টার পর আসতে, তবে একবার অনুরোধ করাতেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে আপনাকে Departure/এক্সিট সিল দিয়ে দেবে, তারপর জয়গাঁও ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন অফিস যেতে পারেন ৭টা ৫০ মিনিটে। ওই খানে ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করে আপনি দুই ভাবে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পারেন।
১. জয়গাঁও থেকে হাঁশিমারা হয়ে ময়নাগুরি থেকে চ্যাংড়াবান্ধা এবং তারপর বুড়িমারী। ঠিক যাওয়ার সময় বাংলাদেশ থাকে যেভাবে গিয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই আগে থেকে শিলিগুড়িতে শ্যামলী বাস কাউন্টারের সঙ্গে ফোন করে নিশ্চিত করতে হবে যে আপনি বুড়িমারী থেকে বাসে উঠবেন।
২. জয়গাঁ থাকে অটোতে করে আপনি চলে যান হাসিমারা রেলস্টেশনের উদ্দেশে। এরপর শিলিগুড়ি চলে যাবেন, তবে আপনি ইচ্ছে করলে বাসে যেতে পারেন। সে জন্য আপনাকে জয়গাঁ থেকে সরাসরি বাসে উঠতে হবে। তবে এখানে খরচ বেশি পড়বে। হাসিমারা থেকে ট্রেন ১০টা ২০ মিনিটে, ভাড়া জনপ্রতি ৬০ রুপি। টিকেটে কোনো বগি নির্দিষ্ট করা থাকে না। আপনি একটা স্লিপার বগিতে উঠে পড়তে পারেন, আপনি শিলিগুড়ি পৌঁছে যেতে পারেন ২টার দিকে। বিকাল, সন্ধ্যায় কিছু শপিং করতে পারেন। রাতে শিলিগুড়িতেই থাকতে পারেন।
আপনি ভাগ্যক্রমে ভারতীয় ট্রানজিট ভিসায় ভারতে অবস্থানকালে সময় বেশি পেলে এই সুযোগে দার্জিলিংও ঘুরে আসতে পারেন।
শিলিগুড়িতেই ছোটখাটো শপিং করতে পারেন। শিলিগুড়ির মানুষ ভালো। বাংলাদেশ থেকে আপনি আসছেন শুনলে অনেকে গল্প করবে আপনার সঙ্গে, বাংলাদেশের প্রতি তাদের ভালোই টান আছে। সাকিব, মুস্তাফিজুর রহমানের তারা খুব ভক্ত। শিলিগুড়ি মালদাগুড়ি (শ্যামলী বাস কাউন্টার) থেকে বাস আছে ১টা ৩০ মিনিটে (দিনের একমাত্র বাস তা আবার রোববার বন্ধ থাকে)। চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশনে আসতে আসতে ৪টা বাজতে পারে। তেমন কোনো ঝামেলা ছাড়াই চ্যাংড়াবান্ধা-বুড়িমারী সীমান্ত পার হতে পারেন। বাংলাদেশে বুড়িমারী ইমিগ্রেশন অফিসের পাশে শ্যামলীর এসি বাস সাধারণত অপেক্ষা করে। এরপর আপনি এসি/নন এসি বাসেই ঢাকায় ফিরতে পারেন। পরদিন সকাল ৭টায় ঢাকার কল্যাণপুরে পৌঁছে যাবেন।
উভয় ক্ষেত্রেই ফিরে আসার বাসটিকেট শিলিগুড়িতে শ্যামলী বাস কাউন্টারে ফোন করে নিশ্চিত করতে হবে আপনাকে।
খরচাপাতি : জনপ্রতি আপনার খরচ পড়বে ১৫-১৬ হাজার টাকা (শপিং ছাড়া)।
মনে রাখা ভালো, সময়স্বল্পতার জন্য আপনি হয়তো হাভেলি ও বুম্থাং-এর মতো আকর্ষণীয় জায়গায় যেতে পারেননি। হাভেলি, বুম্থাং ঘুরলে খরচ কিছুটা বাড়বে।
আর সব কিছুতে ট্যাক্সি বাদ দিয়ে পাবলিক বাসে ঘুরলে খরচ কিছু কম পড়বে কিন্তু সময় বেশি লাগবে।
কিছু লক্ষণীয়
১. ভারতীয় ভিসাসহ পাসপোর্টের ফটোকপির কয়েক কপি, আর পাসপোর্ট সাইজের ছবি সঙ্গে রাখবেন।
২. ন্যাশনাল আইডি কার্ডের দু-তিনটি ফটোকপি।
৩. চাকরিজীবী হলে NOC (No Objection Certificate) ও স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ডের দু-এক ফটোকপি।
৪. ভুটানে সরকারি ছুটি অনেক বেশি, তাই সরকারি ছুটির লিস্ট দেখে ভ্রমণ প্লান করলে ভালো।
৫. ভুটানে কোথাও কোনো মসজিদ ও মুসলিম রেস্টুরেন্ট আপনার চোখে পড়বে না। ভুটানিজ ভাত, ডাল, সবজি খুবই মজার। তারপরও আপনার প্রয়োজন মনে হলে, বাংলাদেশ থেকেই কিছু, আচার, চাটনি, বিস্কুট নিয়ে যেতে পারেন।
৬. ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, ভুটান শতভাগ ধূমপানমুক্ত দেশ। কিন্তু বার সবার জন্যই খোলা। কোথাও কোনো সিগারেট কিনতে পাবেন না, ধূমপানের মতো বদভ্যাস থাকলে সিগারেট সঙ্গে করে নিয়ে নেবেন। পরবর্তী সময়ে তা বারে (smoking zone), হোটেলে অথবা পাহাড়ে ধূমপান করতে পারবেন, কিন্তু ধরা পড়লে কোনো কথা নেই, নগদ মোটা অঙ্কের জরিমানা। তবে ধূমপান না করাই ভালো।
৭. নিজস্ব প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র বাংলাদেশ থেকেই নিয়ে গেলে ভালো।