তোফায়েল আহমেদ::
কক্সবাজারের পর্যটন স্পটগুলোতে জবরদখল ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। জমজমাট পর্যটন ব্যবসার উদ্দেশ্যে রাতারাতি এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের তোড়জোড় শুরু হয়।
অভিযোগ উঠেছে, দিনের বেলায় বাধার মুখে পড়ে রাতের বেলায় দখলবাজরা স্থাপনা গড়ে তুলছে। সাগরপারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও পরিবেশ রক্ষায় প্যারাবনের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
► রাতের অন্ধকারেও চলছে নির্মাণকাজ
► কেটে ফেলা হচ্ছে সাগরপারের প্যারাবন
সেই প্যারাবন পর্যন্ত কেটে গড়ে তোলা হচ্ছে রিসোর্ট। প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বার বার অভিযানেও এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ থেমে নেই।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘সরকারি জমি হোক আর ব্যক্তিগত জমি হোক, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোনো অবকাঠামো নির্মাণের সুযোগ নেই। প্যারাবন কাটাসহ খাল ও নদী শ্রেণির জমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
কোনোভাবেই পর্যটন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না।’
এদিকে পর্যটন ব্যবসার নামে জবরদখলের সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের হিমছড়ি ঝরনা এলাকা ও পেঁচারদ্বীপ সৈকতে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘পেঁচারদ্বীপ সৈকতের পাশে থাকা অন্তত ১০০ একর জমির প্যারাবন কেটে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। প্যারাবন কাটার নেপথ্যে জড়িত আসল ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।
স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের শ্রমিক হিসেবে এনে এসব কাজ করে। বাস্তবে মূল ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।’
এক্সকাভেটর (ভেকু মেশিন) দিয়ে রাতারাতি মাটি কেটে জমির শ্রেণিও পরিবর্তন করা হয় বলেও দখলদার;ের বিরুদ্ধে লভিযোগ রয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতের আঁধারে তারা হিমছড়ি ঝরনার পার্কিং এলাকায় বেশ কয়েকটি দোকান নির্মাণ করেছে।
রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে সহকারী কমিশনার ভূমি (এসি ল্যান্ড) সাগরপারের পেঁচারদ্বীপ এলাকায় গিয়ে অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে এক্সকাভেটর জব্দ করেছিলেন।
প্যারাবন কাটা, সরকারি জমি জবরদখল করে রিসোর্ট নির্মাণ ও রেজু খালের মোহনার তীরবর্তী পেঁচারদ্বীপ সৈকতের খালের ওপর অবৈধভাবে কাঠ-বাঁশের সেতু নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়।’
তবে সরেজমিনে তদন্ত করে স্থানীয় ধেছুয়া পালং ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সলিম উল্লাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দখলবাজরা পেঁচারদ্বীপ সৈকতের কয়েক একর সরকারি খাসজমি এরই মধ্যে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। তারা (দখলবাজ) কাউকেই পরোয়া করছে না। আমাকে বশে আনতে না পেরে এখান থেকে সরিয়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।’
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজনও পেঁচারদ্বীপ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।’ তিনি জানান, পেঁচারদ্বীপ এলাকার পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড নিয়ে এরই মধ্যে পরিবেশ আদালতের বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট ও কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আসেক উদ্দিন মো. আসিফ স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজুর নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মামলা করে এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
পাঠকের মতামত