এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজারঃঃ
কক্সবাজার পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ৩৪ কোটি টাকার কাজে ৪ কোটি টাকা নগদে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেছেন পাউবোর ঠিকাদাররা। মঙ্গললবার সকালে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলণের মাধ্যমে এ অভিযোগ তুলা হয়। পরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেন পাউবোর ঠিকাদার সমিতি।
অভিযোগে জানা যায়, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন কক্সবাজার পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষণের (পওর) বিভাগের অধীনে ঠিকাদারগণ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে টেন্ডারের মাধ্যমে কার্যাদেশ পেয়ে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার কাজ সমাপ্ত করেন। কাজ সম্পাদনের পরও কাজের বিল না পেয়ে ক্ষুদ্ধ ঠিকাদাররা ২৭ জুন সকালে ঘন্টাব্যাপী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস ঘেরাও করে রাখেন।
২৮ জুন মঙ্গলবার ২৮ জুন সকালে পাউবো ভবনের সামনে কক্সবাজার পানি ঠিকাদার সমিতি সংবাদ সম্মেলণের আয়োজন করেন। এর আগে ২৭ জুন পাউবোর অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলণে লিখিত বক্তব্যে ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে কক্সবাজার জেলায় সরকারের ‘অনুন্নয়ন খাতে (এনডিআর)’ বরাদ্দকৃত বাজেটের বাইরে গিয়ে প্রায় ৩৪ কোটি টাকার টেন্ডার আহবান করেন। কিন্তু পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকার পরেও নির্বাহী প্রকৌশলীর আশ্বাসের ভিক্তিতে ঠিকাদাররা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেন এবং কার্যাদেশ পেয়ে যথারীতি তাদের কাজগুলো সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করেন।
লিখিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, ইতিমধ্যে জুন ফাইনালের আগেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা তাদের কাজের বিপরীতে প্রাপ্য বিলের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে, তিনি ঠিকাদারদের ২০১৫-১৬ অর্থ বছর শেষ হওয়ার পূর্বে অর্থ্যাৎ ৩০ জুনের মধ্যে সমস্থ পাওনা বিল পরিশোধের গ্যারান্টি দেন। এমনকি উল্লেখ যোগ্য কোন চলমান বিল পরিশোধ না করেও চাপ প্রদানের মাধ্যমে কাজ করিয়ে নেন।
এদিকে, আগামী ৩০ জুন ২০১৫-১৬ অর্থ বছর শেষ হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা তাদের পাওনা বিল চাইতে গেলে তিনি বরাদ্দ না থাকার বিষয়টি গোপন রেখে নানা ছলছাতুরির আশ্রয় নেন। পরবর্তিতে উক্ত ঠিকাদাররা বোর্ডের হেড অফিস ও মন্ত্রনালয়ে খবর নিয়ে জানতে পারেন যে, কক্সবাজার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃক টেন্ডারকৃত ৩৪ কোটি টাকার কাজের বিপরিতে কোন বরাদ্দ নেই।
লিখিত বক্তব্যে আরো অভিযোগ করা হয়, এ অর্থ বছরে ৩৪ কোটি টাকার কার্যাদেশ প্রদানের জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান ঠিকাদারদের কাছ থেকে ৫% ও ১০% হারে অর্থ্যাৎ ১ কোটিতে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা সরাসরি ঘুষ আদায় করেন। আর এই বিশাল অংকের টাকা ঘুষ প্রদান করে কার্যাদেশ পেয়ে কাজ সমাপ্ত করার পরেও প্রাপ্য বিল পাওয়ার কোনরূপ সম্ভাবনা না দেখে তারা কর্মসূচি পালনে বাধ্য হন বলে জানান সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা।
ঠিকাদাররা আশংকা করেন, চলতি অর্থবছরে যদি ঠিকাদাররা তাদের বিল না পান অথবা বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী বদলি হয়ে যান তাহলে এই টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাদের দাবী, হয় ঠিকাদারদের যথাযত বিল পরিশোধ করা হোক, না হয় ঘুষের ৪ কোটি টাকা ফেরত দেয়া হোক। অন্তত ঘুষের টাকা ফেরৎ দিলে কিছুটা হলেও নিস্তার পাবে ঠিকাদাররা। বিল না পেলে ঠিকাদাররা যথাসময়ে ব্যাংক ঋণ, লেবার পেমেন্টসহ অন্যান্য পাওনা পরিশোধ করতে না পারলে পথে বসবেন অনেক ঠিকাদার।
সাংবাদিক সম্মেলণে উপস্থিত ছিলেন, কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ঠিকাদার সমিতির সভাপতি মোঃ আতিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, সদস্য রমজান আলী, হারুন, মজিবুর রহমান, মনজুর আলম চৌধুরী, মোঃ নাছির উদ্দিন মেম্বার, আনিসুর রহমান, ইব্রাহিম, রুপর চৌধুরী, আমির হোসেন, নজরুল ইসলাম, জাহাংগীর আলম, আবদু রশিদ।
এদিকে, ২৭ জুন রাতে স্থানীয় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত সমাবেশ কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সর্বস্থরের ঠিকাদারদের উপস্থিতিতে পরবর্তি কর্মসূচি ঘোষনা করা হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় পাউবো কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিক সম্বেলন, জেলা প্রশাসকের প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্বারকলিপি প্রদান, পরবর্তিতে পাউবো অফিস চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ ও ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেন।
অপরদিকে, মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান কাজের বিরীতে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঠিকাদাররা কাজ সম্পন্ন করেছে। কিন্তু বাজেটে অর্থ না থাকায় তাদের বিল যথাসময় দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বাজেটে বরাদ্দ পাওয়া গেলেই ঠিকাদাররা তাদের পাওনা পেয়ে যাবেন।