রাসেল চৌধুরী, মানবজমিন::
কক্সবাজার পৌরসভায় নির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ চলছে সমানতালে। ভোটের অংকে কক্সবাজার পৌরসভা বরাবরই আওয়ামী লীগের জন্য ঊর্বর হলেও মনোনয়ন প্রত্যাশী হেভিওয়েট প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রার্থী সিলেকশনে দলের হাই কমান্ডকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ২০১১ সালের ২৭শে জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে একই দলের রাশেদুল ইসলাম বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ায় জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সরওয়ার কামাল বিজয়ী হন। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশী বিএনপি-জামায়াত ঘরণার প্রার্থীদের তালিকা সংক্ষিপ্ত হলেও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা দীর্ঘ। আসন্ন পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এবার যাদের নাম আলোচিত হচ্ছে, তারা হলেন- কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক ৪ বারের পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা রাসেদুল ইসলাম, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক কায়সারুল হক জুয়েল।
আওয়ামী লীগের টিকেটে মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের তালিকা লম্বা হলেও মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সমপাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। তারা ইতোমধ্যে পৌরসভার অধিকাংশ ওয়ার্ডে কৌশলে গণসংযোগ শুরু করেছেন। কুশলবিনিময় করছেন সাধারণ মানুষের সাথে।
মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান জানান, গতবার মনোনয়ন পাওয়ার পর পৌরবাসী তাকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। তার পক্ষে চারদিকে জনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু দল বিরোধী কতিপয় ব্যক্তি একাট্টা হয়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করে তাকে হারিয়ে দেয়। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন বলে জানান তিনি। বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে পৌর এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। মানুষ এসব উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে। এছাড়া অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। তাই এবার দলীয় মনোনয়ন পেলে কোন ষড়যন্ত্রই এবার তার বিজয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। দলীয় নেতাকর্মী ও জনগণই সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।
ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তিনি মুখ খুলছেন না। কৌশলে পথ চলছেন। বক্তব্যও দিয়েছেন কৌশলী। বলেছেন, যে কোন নির্বাচনে দু’টি জিনিস দরকার। একটি জন সমর্থন অন্যটি দলীয় সমর্থন। আমার জনসমর্থন আছে, জনসমর্থন বিবেচনায় দল মনোনয়ন দিলে আমি নির্বাচন করবো। ইতিমধ্যে পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসন ও অভ্যন্তরীণ সড়কের উন্নয়নের মাধ্যমে পৌরবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। পৌর এলাকাভিত্তিক রাজনীতিতে শক্ত অবস্থানে থাকা অপর দু’নেতা নুরুল আবছার ও রাশেদুল ইসলামের প্রচার প্রচারণা এখনো দৃশ্যমান না হলেও তারাও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন এটা নিশ্চিত।
কক্সবাজার পৌর এলাকায় সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বরাবরই জনপ্রিয়। জনগণের ভোটে তিনি পরপর চার বার পৌর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। জনপ্রিয়তায় কিছুটা ভাটা পড়লেও এখনো তিনি ফ্যক্টর। দলীয় মনোনয়ন পেলে তিনি সহজে জয়ী হয়ে আসবেন এমন ধারণা তার সমর্থকদের। নুরুল আবছার জানান, মাঠ পর্যায়ে জরিপ করে মনোনয়ন দিলে তিনি মনোনয়ন পাবেন। আর দলীয় মনোনয়ন পেলে জয়ী হওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পৌরসভায় দু’বার ভোট করেছেন রাশেদুল ইসলাম। তিনি জানান, শত ষড়যন্ত্র ও বাধা বিপত্তির পরও পৌরবাসী তার সাথে ছিলেন। এবারও ভোট করার জন্য পৌরবাসীর চাপ রয়েছে বলে জানান তিনি। তবে এবার স্বতন্ত্র নয়, দলীয় ব্যানারে নির্বাচন করবেন তিনি। বলেন, দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবো। তিনি মনোনয়ন দিলেই ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন বলে জানান জেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ নেতা। রাশেদুল ইসলাম রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তার পিতা এডভোকেট জহিরুল ইসলাম সাবেক সাংসদ ও জেলা গভর্র্নর ছিলেন। তার জেঠাতো ভাই নজিবুল ইসলাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চাচাতো ভাই ইসতিয়াক আহম্মেদ জয় জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি। তাই পৌরসভার রাজনীতিতে এই পরিবারটিও একটি ফ্যাক্টর। পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অপর নেতা কায়সারুল হক জুয়েল। তার মরহুম পিতা একেএম মোজাম্মেল হক পৌরসভার একাধিকবার চেয়ারম্যান ছিলেন। একেএম মোজাম্মেল হকের সর্বকনিষ্ট ছেলে কায়সারুল হক জুয়েল। ভদ্র ও বিনয়ী ছেলে হিসেবে তার সুনাম রয়েছে। তরুণ প্রজন্মের কাছেও তিনি বেশ জনপ্রিয়।
কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১১ সালের ২৭শে জানুয়ারি। ৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশিত হয়। একই বছরের ১৯শে ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনের কার্যালয়ে নির্বাচিতদের শপথ গ্রহণের সময় নির্ধারিত ছিল। অন্যান্য পৌরসভার নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলররা শপথ গ্রহণ করলেও ৪ দফা সময় পরিবর্তনের পরেও শপথ গ্রহণ হয়নি। ফলে আগের পৌর পরিষদ দীর্ঘ আড়াই বছর বাড়তি দায়িত্ব পালন করে। এতে শপথ গ্রহণের দাবীতে ২০১৩ সালের ২৭শে জানুয়ারি নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কক্সবাজারে হরতাল পালন করে। পরে ২০১৩ সালের ২০শে জুলাই নির্বাচিত পৌর মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ বাক্য পাঠ করান জেলা প্রশাসক। দায়িত্ব নেয়ার পর নির্বাচিত মেয়র সরওয়ার কামাল বেশিদিন দায়িত্ব পালন করতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতার মামলা ও দুর্নীতির মামলার অভিযোগপ্রত্র আদালত গ্রহণ করায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় মেয়র সরওয়ার কামালকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে। পরবর্তীতে মন্ত্রণালয় ২০১৫ সালের ২৪শে নভেম্বর প্যানেল মেয়রকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে চিঠি ইস্যু করেন। প্যানেল মেয়র-১ জিসান উদ্দিন ও প্যানেল মেয়র-২ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নাশকতার মামলা থাকায় দায়িত্বভার নিতে পারেননি। প্যানেল মেয়র-৩ কুহিনুর ইসলাম বর্তমান মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে সমর্থন করায় মন্ত্রণালয় মাহবুবুর রহমান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসাবে দায়িত্ব প্রদান করেন।