শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার::
কক্সবাজার উত্তর ও দক্ষিণ বনবিভাগের সহায়তায় গড়ে উঠেছে নীরব সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল বৃক্ষরাজির বিশাল ক্যানভাস ষোল হাজার বনভুমিকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে।‘যতদুর চোখ যায় ঐ দূর নীলিমায় চোখ দুটি ভরে যায় সবুজের বন্যায়’। সবুজ আর সমারোহে ভরে গেছে কক্সবাজার বন অধিদপ্তরের সৃজিত সামাজিক বনায়ন।
গত অর্থ বছরে ১৬ হাজার একর বন ভুমিতে সৃজন করা হয়েছে ১ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির চারাগাছ। সামাজিক বনায়নের বিপরীতে ১৬ হাজার ৬১৩ জন উপকারভোগী নিয়োগ করা হয়েছে। বর্তমানে সবুজে সমারোহে ভরে উঠেছে বনায়নগুলো।
মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে উঠা দৃষ্টিনন্দন বনায়ন এখনপর্যটক-দর্শণার্থীদের কাছে বিনোদনের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকে চলন্ত গাড়ী থামিয়ে সড়কের উভয় পাশের সবুজ বনায়নে কিছুক্ষণের জন্য প্রকৃতির অপার স্বাদ ও ছবিধারণ করে নিচ্ছেন নিয়মিত। বেত বাগান, মেধাকচ্ছপিয়ায় প্রাকৃতিক গর্জন বাগানে সবুজ সমারোহ দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছে।
বনবিভাগ সুত্র মতে, গত ২০১৫-২০১৬ অর্থ বছরে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের অধীনে ১৩ হাজার ১৫৮ একর বনভুমিতে চারা রোপন করা হয়েছে ৯০ লাখ। এর মধ্যে টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার সদর রেঞ্জের আওতাধীন বনবিটগুলোর উচ্ছেদকৃত ২১০ একর বনভুমিতে রোপন করা হয় ২৯ লাখ ৭৫ হাজারটি চারাগাছ। রামু দুছড়ি এলাকায় ৮’শ একর বন ভুমিতেও অনুরূপ চারা রোপন করা হয়। এসব বনায়নের বিপরীতে ১৪ হাজার ৪৮ জন উপকারভোগী নিয়োগ করা হয়।
সুত্র মতে, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি, ফাসিয়াখালী, রাজঘাট, ঈদগাঁও, ঈদগড়, মেহেরঘোনা, বাঁকখালী, জোয়ারিয়ানালা ও সদর রেঞ্জের বিভিন্ন বিটে ২ হাজার ৯৬১ একর বনভুমিতে বনায়ন সৃজন করা হয়। তৎমধ্যে ৭০১ একর বনভুমিতে পুনঃবনায়ন (দ্বীয় আর্বত বাগান) করা হয়েছে। নিয়োগ করা হয়েছে ২ হাজার ৫৬৫ জন উপকারভোগী। এসব বনাঞ্চলে ১৯৫২-৫৩ সাল থেকে শুরু করে এখনও অব্যাহত রয়েছে বনায়ন সৃজনের কাজ। একই সঙ্গে চলছে বনাঞ্চলের মূল্যবান বৃক্ষরাজি রক্ষায় বনকর্মী ও বন জায়গীরদারদের প্রাণপণ প্রচেষ্টাও। বন নির্ভরশীলদের বননির্ভরশীলতা কমাতে বিকল্প জীবিকায়নের কাজ করছে বেশ’কয়েকটি এনজিও।
সুত্র মতে, ইতোপূর্বে সৃজিত বনায়নের গাছ পরিপূর্ণতা লাভ করায় গাছ কেটে আয়লব্দ অর্থ ৪৫% সরকার ও ৪৫% উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণের পর অবশিষ্ট জমা ১০% টাকা স্বীয় আর্বত বাগান সৃজন করা হয়েছে।
উত্তর বনবিভাগ সুত্রে জানা গেছে, বনবিভাগের অধীনে ১৩ কিঃমিটার সড়কে সামাজিক বনায়নে ১৩ হাজার চারা রোপন করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, তের কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠা দৃষ্টিনন্দন বনায়ন এখনপর্যটক-দর্শণার্থীদের কাছে বিনোদনের বাড়তি আকর্ষণ হিসেবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। ভ্রমণে আসা পর্যটকদের অনেকে চলন্ত গাড়ী থামিয়ে সড়কের উভয় পাশের সবুজ বনায়নে কিছুক্ষণের জন্য প্রকৃতির অপার স্বাদ ও ছবিধারণ করে নিচ্ছেন নিয়মিত। বেত বাগান, মেধাকচ্ছপিয়ায় প্রাকৃতিক গর্জন বাগানে সবুজ সমারোহ দেখে পর্যটকরা মুগ্ধ হচ্ছে।
কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির জানান, স্থানীয় দরিদ্র জনগণকে উপকারভোগী হিসেবে সম্পৃক্ত করে পরিচালিত সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমে সুফল পাচ্ছে উপকারভোগীরা।
তিনি বলেন, সামাজিক বনায়নের ফলে অংশীদার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ভূমিহীন, দরিদ্র, বিধবা ও দুর্দশাগ্রস্থ গ্রামীণ জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা নিশ্চিত হচ্ছে।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কেরামত আলী মল্লিক বলেন, সামাজিক বনায়নের ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তাদের স্বনির্ভর হতে সহায়তা করছে। অংশীদারদের খাদ্য, পশুখাদ্য, জ্বালানী, আসবাবপত্র ও মূলধনের চাহিদা পূরণে বনবিভাগ সক্ষম হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, বন ও বনভুমি রক্ষায় নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বনকর্মীদের পাশাপাশি অংশীদাররাও। সৃজিত বনায়নগুলো দিনদিন বেড়ে উঠছে। আর যে সব বনায়ন পরিপুর্ণতা পেয়েছে তা কেটে নতুন বনায়ন করা হচ্ছে। এতে করে দেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে, স্থানীয় জনগণও উপকৃত হচ্ছে। সরকারও আয় করছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
পাঠকের মতামত