অনিয়ম-দুর্নীতির আঁতুড়ঘর কক্সবাজার বাস টার্মিনাল। ২০০১ সালে উদ্বোধন হওয়া কক্সবাজার বাস টার্মিনালে এক সময় প্রায় ৩০০ বাস রাখার জায়গা থাকলেও বর্তমানে ৫০টির বেশি বাস রাখার স্থান নেই। গত ৮ বছর নতুন করে বসানো হয়েছে প্রায় ৮০টি দোকান ও টিকিট কাউন্টার। এসব দোকান বাণিজ্যে ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতিতে মেয়র এবং পৌর সচিবের পাশাপাশি বিপুল টাকা অবৈধ আয় করেছে বাস টার্মিনালের অঘোষিত মালিক পৌরসভার কর্মকর্তা শিপক কান্তি পাল এবং সুপারভাইজার আনচার উল্লাহ।
জানা যায়, বাস টার্মিনাল সংশ্লিষ্টদের দাবি ইতোপূর্বে শিপক এবং আনচারের ছিল বাস টার্মিনালে অন্তত ১০টি নিজস্ব দোকান যা ইতোমধ্যে বিক্রি করে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আয় করেছে তারা। বর্তমানেও বেশ কয়েকটি দোকান বাণিজ্যে জড়িত। তাই তাদের দোসরসহ সকলের বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। কক্সবাজার বাস টার্মিনালে ১৫ বছর ধরে ব্যবসা করে আসা আমির হোসেন বলেন, এক সময় বাস টার্মিনালে অনেক প্রশস্ত জায়গা ছিল। তখন ২৫০ থেকে ৩০০টি বাস রাখার স্থান ছিল।
তবে বর্তমানে সর্বোচ্চ ৫০টির বেশি বাস রাখার জায়গা নেই। বেশিরভাগ দোকান এবং কাউন্টারের মাধ্যমে দখল করা হয়েছে। আর এই দখলের মূল কারিগর হচ্ছেন সাবেক মেয়র ও পৌর সচিব। তবে তাদের দোসর হিসেবে এই দুর্নীতিতে কাজ করেছে বাস টার্মিনালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিপক কান্তি দে ও সুপারভাইজার আনচার উল্লাহ। তারা এখানে অন্তত ১০টি দোকানের মালিক। যদিও এখন সব দোকান বিক্রি করে ফেলেছে তারা। প্রতিটি দোকান ৫ থেকে ৭ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। আবার এখানে কোনো দোকান হস্তান্তর বা বেচাকেনা হলে সেখানেও তারা কমিশন পান। মূলত পৌর সচিবের ক্ষমতা বলে তারা এখনো বেপরোয়া বাস টার্মিনালে।
মহেশখালীর বাসিন্দা শিপক কান্তি দে গ্রামের বাড়ি কালীমন্দির এলাকায় খবর নিয়ে জানা গেছে, শিপক কান্তি ১০-১২ বছর আগে কক্সবাজার পৌরসভায় চাকরির সুবাধে বিপুল টাকার মালিক বনে যায়। এলাকায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে যথেষ্ট। বাস টার্মিনালের আরেক ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, মহিউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীকে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় একটি দোকান বিক্রি করেছে শিপক এবং আনচার উল্লাহ। যা বর্তমানে টার্মিনালেই আছে। দোকানটি আগে প্রবেশ মুখে থাকলেও বর্তমানে পেছনের বাণিজ্যিক স্থানে আনা হয়েছে। ২ দিন আগে রাতে টার্মিনালের কর্মচারীরা নিজেই দোকানটি স্থানান্তর করেন। আর মহিউদ্দিন হচ্ছেন টার্মিনালের ৪টি দোকানের মালিক। এছাড়া নালা কামাল, মৃদুল, দিপংকারসহ অনেকেই এখানে দোকান এবং কাউন্টার বিক্রি করে কোটিপতি বনে গেছে। এ ব্যাপারে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের সুপারভাইজার আনচার উল্লাহ বলেন, আমি সামান্য কর্মচারী। মহিউদ্দিনের দোকানটির বিষয়ে শিপুল বাবু বলতে পারবেন। আমি যতটুকু জানি, দোকান সরিয়েছে এটা সত্য। তবে এখানে আমার কোনো লেনদেন নেই। সবকিছু শিপক বাবু বলতে পারবে। পৌরসভার কর্মচারী শিপক কান্তি দে বলেন, আমি এখন টার্মিনালের দায়িত্বে নেই। এখন নুরুল হক দায়িত্বে আছেন। আমি এসব বিষয়ে কিছুই জানি না। আর আমরা সামান্য কর্মচারী মেয়র-প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সচিব যা বলেন, আমরা তা পালন করি মাত্র।