বঙ্গোপসাগরের মোহনায় রানওয়ে সম্প্রসারণসহ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরের উন্নয়নকাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে।
চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যে শতভাগ কাজ সম্পন্ন হবে। এ ছাড়া সেখানে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ২৭৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পের অন্তর্গত কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় আরও প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।
অতিরিক্ত ব্যয়-সংবলিত প্রকল্পে দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত অর্থসহ মোট ৩৬৬ কোটি ১২ লাখ টাকার ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বিমান মন্ত্রণালয়।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে এই প্রকল্পের কাজ ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পে আরও কিছু কাজ সংযোজন করা হয়েছে। লাগেজ বেল্ট ১টা ছিল, ২টা করা হবে।
স্পেস বাড়বে, তাই এয়ারকন্ডিশনিং সিস্টেম বাড়বে। সব মিলিয়ে অতিরিক্ত কাজের জন্য প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধি হবে। সংশোধিত এই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন মাসে শেষ হবে।
চলতি মাসে বিমান মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ড. সাইফুর রহমান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের নিজস্ব অর্থায়নে (২৭৭ কোটি ৮৮ লাখ) টাকা প্রাক্কলিত ব্যয় বাস্তবায়িতব্য কক্সবাজার বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটির স্কোপ অব ওয়ার্ক বৃদ্ধির কারণে ইতিমধ্যে ৩৬৬১২.৮৮ লাখ (তিনশত ছিষট্টি কোটি বারো লাখ আটাশি হাজার) টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রকল্পের অনুকূলে ২৬৫৭০.৪১ লাখ টাকার লিকুইডিটি সার্টিফিকেট সংগ্রহ করা হয়েছে। চিঠিতে প্রকল্পটিকে অতিরিক্ত ১০০৪২.৪৭ লাখ টাকাসহ মোট ৩৬৬১২.৮৮ লাখ (তিনশত ছিষট্টি কোটি বারো লাখ আটাশি হাজার) টাকার ছাড়পত্র সার্টিফিকেট দিতে বলা হয়েছে।
প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, সমুদ্রের বুকে রানওয়ে সম্প্রসারণসহ কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ হয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণ, ভূমি উন্নয়ন, পুনর্বাসন সংশ্লিষ্ট কাজ (থোক), বিদ্যমান রানওয়ে, ট্যাক্সিওয়ে বৃদ্ধিকরণ, রানওয়ে প্রশস্তকরণ, রানওয়ে শোল্ডার, ওভার রান নির্মাণ ইত্যাদি (২২০৬০৯.৬৯ বর্গ কিলোমিটার, বিদ্যমান গ্রাউন্ড ট্রিটমেন্ট ও বাঁধের রক্ষাকাজ (৪২৮২০.৫২) বর্গ কিলোমিটার, ভবনাদি নির্মাণকাজ (পাওয়ার হাউস ও সিসিআর রুম)-সহ অন্যান্য কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে।
শুধু এলজিইডির ব্রিজের নির্মাণকাজ ৯৯.৯০ শতাংশ, বিডব্লিউডিবির বাঁধ নির্মাণকাজ ৯৯.৯৫ শতাংশ, এয়ার ফিল্ড গ্রাউন্ড লাইটিং সিস্টেম-১ ও ডিভিওআর এবং আইএলএস স্থাপন কাজ ৯৯ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের ৪র্থ সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনসহ চলতি ২৩-২৪ অর্থ বছরে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থান, এলজিইডি ও বাপাউবোর কাজ ইত্যাদি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে সভা হয়েছে। শিগগিরই তা সরকার অনুমোদিত হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন থেকে আকাশপথে কক্সবাজার বিমানবন্দরে রাতেও ফ্লাইট নামবে সাগরঘেঁষা রানওয়েতে। একইভাবে সারা দিন কাটিয়ে রাতে ফেরা যাবে উড়োজাহাজে।
কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ ইউনুস ভুঁইয়া বলেন, প্রকল্পের কাজ প্রায় শতভাগ শেষ। নতুন ১ হাজার ৭০০ ফুটসহ এই বিমানবন্দরের রানওয়ে হয়েছে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। এখন দেশের দীর্ঘতম রানওয়ে সমৃদ্ধ বিমানবন্দর হবে কক্সবাজার।
এখন বি-৭৭৭-৩০০ ইআর, বি-৭৪৭-৪০০-এর মতো বড় আকারের বিমানগুলো এই বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক যাত্রী ভবন নির্মাণের কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্পে কিছু কাজ সংযোজন করায় ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের জুনে সব কাজ শেষ হবে।
পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই বিমানবন্দর শুধু পর্যটন নয়, যোগাযোগ ও অর্থনৈতিক বিকাশে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে।
উল্লেখ্য, ২০৩৫ সালের মধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর তথা রিজিওনাল হাব হিসেবে দিতে ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়)’ নামে একটি প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে।