পনেরো বছরেও শেষ হচ্ছে না পর্যটন নগরী কক্সবাজার বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ। উল্টো বিভিন্ন উন্নয়নে প্রকল্পের ব্যয় ছাড়িয়েছে দুই হাজার কোটি টাকা, তেমনি মেয়াদ বেড়েছে ছয় দফা। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে দ্রুত কাজ শেষ করতে চায় সিভিল এভিয়েশন। অবশ্য চলমান প্রকল্পকে অর্থের অপচয় হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। শুধু বিমানবন্দর নয়, বরং পর্যটক আকর্ষণে চিত্তবিনোদনের সুযোগ বাড়ানোর পরামর্শ খাত সংশ্লিষ্টদের।
সাগরের জলরাশি ছুঁয়ে ওঠানামা করবে প্রতিটি উড়োজাহাজ। যাত্রী বা পর্যটকদের মনজুড়ে থাকবে প্রশান্তির এক অনুভূতি। যার আকর্ষণে বাড়বে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা।
প্রকৃতির এই উচ্ছ্বসিত হাতছানিতে নির্ভর করেই ২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদে উন্নয়নের কাজ শুরু হয় কক্সবাজার বিমানবন্দরের। এরপর ২০১৫ সালে যোগ হয় আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার নতুন ধাপ। গত ১৫ বছরে প্রকল্পের মেয়াদ ৬ দফা বেড়ে ২০২৪ সালেও হয়নি শেষ। এতে প্রকল্প ব্যয় ৩০২ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৫ কোটি টাকায়।
বিগত সরকারের সময় নানা টালবাহানায় কাজ শেষ না হলেও বিমানবন্দরটির উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছেন বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বর্তমান চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূইয়া। তিনি বলেন, যেসব জমিজমা রয়েছে সেগুলো নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী আগানো হচ্ছে। কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর করলে ট্যুরিজম ও ইকো-ট্যুরিজম অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
ইতোমধ্যে বিমানবন্দরের রানওয়ে ২ হাজার ২২৫ ফুট বাড়িয়ে সম্প্রসারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ফুটে। যা দেশের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের রানওয়েগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ। আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে রানওয়ে আরো সম্প্রসারিত করে করা হচ্ছে ১০ হাজার ৭০০ ফুট। তবে প্রশ্ন হলো- সমুদ্র ছাড়া আর কী দেখতে আসবে পর্যটকরা?
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, গত কয়েকবছরে কক্সবাজারে অনেক হোটেলে-কটেজ হয়েছে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সেভাবে হয়নি।
আটাবের সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে বিমানবন্দরটিতে সম্প্রসারিত করার পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা, সেবার মান বাড়ানোসহ অনেক বিষয়েই গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে, চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরের দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। সেক্ষেত্রে স্বল্প দূরত্বে আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর কতটা লাভজনক হবে, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, গুরুত্ব ও জনসংখ্যা বিবেচনায় চট্টগ্রামের তুলনায় পিছিয়ে আছে কক্সবাজার। তাই স্বল্প দূরত্বে আরেকটি আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর তৈরি করলে খুব একটা লাভবান হওয়া যাবে না।
ভৌগোলিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় কক্সবাজার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এজন্য সাগর পাড়ের এ বিমানবন্দরকে পর্যটক ছাড়াও যে কোনো ফ্লাইটের রি-ফুয়েলিংয়ের জন্য টেকনিক্যাল ল্যান্ডিংয়ের লক্ষ্যে আঞ্চলিক হাব হিসেবে গড়ে তুলতে চায় সরকার
পাঠকের মতামত