কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দ্বিতীয় রানওয়ে হচ্ছে। পাশাপাশি সেনা ও নৌবাহিনীর পৃথক ঘাঁটি নির্মাণ করা হবে। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিমানবন্দরসংলগ্ন সমুদ্রের কূল ঘেঁষে ৬৮২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বিমানবন্দরের মাস্টারপ্ল্যানে রয়েছে-আন্তর্জাতিকমানের ও সর্বাধুনিক টার্মিনাল ভবন, কার্গো কমপ্লেক্স, ট্যাক্সিওয়ে, রি-ফুয়েলিং ফ্যাসিলিটিজ, পার্কিং সুবিধা, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, আবাসিক ভবন। ২৩ মে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভায় এসব তথ্য তুলে ধরে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন অনিষ্পন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বিমানবন্দরে সেনা ও নৌবাহিনীর পৃথক এয়ারবেস (ঘাঁটি) স্থাপনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় স্থান চিহ্নিত করে রাখতে হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত হওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের কাছে জায়গা হস্তান্তর করা হবে। মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত আর্মি এভিয়েশন জমিতে কোনো স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবে না। কিন্তু অবৈধ দখলদাররা যাতে আবার দখল করতে না পারে সে ব্যাপারে সেনাবাহিনী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়।
সভায় আরও বলা হয়, প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের সেতুবন্ধন ও এভিয়েশন সেক্টরে বাংলাদেশকে রিওজনাল হাব হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে দেশের বিমানবন্দরগুলোর আধুনিকায়নে কাজ চলছে। এর ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসাবে কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রথম পর্যায় প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে প্রশস্ততা বাড়ানোসহ প্রাথমিকভাবে ৬ হাজার ৬৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। পাশাপাশি এ বিমানবন্দর থেকে সরাসরি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য স্বল্প পরিসরে আন্তর্জাতিক টার্মিনাল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এ ভবনের কাজ সম্পন্ন হবে। এরপর এ বিমানবন্দর থেকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হবে।
অপরদিকে এ বিমানবন্দর থেকে পূর্ণ লোডে সুপরিসর বিমান পরিচালনার লক্ষ্যে রানওয়েকে সমুদ্রের দিকে ১০ হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসাবে পরিচালনার জন্য এখানে বৃহৎ পরিসরে প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল ভবন, কার্গো কমপ্লেক্স, ট্যাক্সিওয়ে, রি-ফুয়েলিং ফ্যাসিলিটিজ, পার্কিং সুবিধা, কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী-ইতোমধ্যে বিদ্যমান রানওয়ের পশ্চিম পাশে সমুদ্রের কূল ঘেঁষে ৬৮২ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। আইকাও (আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন অরগানাইজেশন) স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য অধিগ্রহণের পুরো জমি দরকার হবে।
সভায় আরও বলা হয়, এ কারণে অধিগ্রহণ জমির মধ্যে অন্য কোনো সংস্থা যাতে কোনো ধরনের স্থাপনা দখল বা কোনো কিছু নির্মাণ করতে না পারে সেজন্য সরকারের কাছে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। জমির পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য মাস্টারপ্ল্যান রিভিউ, বিস্তারিত ড্রয়িং-ডিজাইন, ব্যয় প্রাক্কলন ও বিমানবন্দরের ভবিষ্যৎ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে দ্বিতীয় রানওয়ে নির্মাণের জন্য প্রকল্প সরকার অনুমোদন করে। এ প্রকল্পের আওতায় আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করে এসব কাজ সম্পাদন করা হবে।
সভায় সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়-‘আইকাও’ স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক সেফটি মান বজায় রেখে এবং ভবিষ্যতে বিমানবন্দর সম্প্রসারণের সুযোগ রেখে সেনা ও নৌবাহিনীর পৃথক এয়ারবেস করতে হলে অতিরিক্ত জমির প্রয়োজন হবে। যদিও সশস্ত্র বাহিনীর পত্রে বেজা/ঘাঁটি পরিমাণের কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। এরপরও ভবিষ্যতে বিমানবন্দর সম্প্রসারণ কাজের প্রভিশন রাখার পর সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক এয়ারবেস নির্মাণের বিস্তারিত বিবরণী যেমন অবকাঠামোর ধরন, জমির দাখিল করলে মাস্টারপ্ল্যানে সেনা ও নৌবাহিনীর এয়ারবেস নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। এর আগ পর্যন্ত জায়গাটি অন্য কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য ওই জায়গায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করতে হবে। এর পাশাপাশি খালি জায়গা যাতে অন্য কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য ওই এলাকায় দেওয়াল ও বেষ্টনি নির্মাণ করতে হবে।
বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী যুগান্তরকে বলেন, কক্সবাজারকে আন্তর্জাতিকমানের পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন উন্নয়নকাজ চলছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো বিমানবন্দরের উন্নয়ন কাজ। গোটা প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু হবে বলে আশা করছি। দেশি-বিদেশি পর্যটকরা কক্সবাজারে সহজে যাতায়াতসহ নানাবিধ সুবিধা ভোগ করবেন।
-যুগান্তর
পাঠকের মতামত