বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম রানওয়ে ডিসেম্বরেই চালু হচ্ছে কক্সবাজারে। এরমধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক রূপ পাচ্ছে সমুদ্রসৈকত সংলগ্ন এই বিমানবন্দর। এই রানওয়ের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অবতরণের সময় উড়োজাহাজটি একেবারে সাগর ছুঁয়ে যাবে! কারণ ১০ হাজার ৭শ ফুট দীর্ঘ রানওয়ের মধ্যে ১৭শ ফুট তৈরি হয়েছে বাঁকখালী নদীর মোহনায় সাগর ভরাট করেই।
আর এই রানওয়ে দিয়েই বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী বিমানটিও এই কক্সবাজার বিমানবন্দরে নামার সুযোগ পাবে।
কিন্তু সেজন্য অবকাঠামোগত সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। বর্তমানে বিশ্বের যাত্রীবাহী সবচেয়ে বড় উড়োজাহাজটি হচ্ছে এয়ারবাস ৩৮০; যার যাত্রীধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৭শত। যদিও ওই উড়োজাহাজ বাংলাদেশ রুটে চলাচল করে না। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত চলাচল করে কেবল এয়ারবাস ৩২০ ও বোয়িং ৭৭৭ উড়োজাহাজ।
বিশ্বের অনেকগুলো দেশে বড় ফ্লাইট চালিয়েছেন ক্যাপ্টেন আজিজ আব্বাসী রফিক। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা ও বালি বিমানবন্দরে অবতরণের সময় যাত্রীরা যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি পান কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের সময়ও তেমন অনুভূতি পাবেন। ফলে কক্সবাজারমুখী পর্যটকরা আকৃষ্ট হবেন অনেক বেশি।’
শুধুমাত্র দীর্ঘতম রানওয়েই নয়; এই বিমানবন্দর ঘিরে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর ‘আঞ্চলিক হাব’ হিসেবে তৈরির জন্য কনসালটেন্ট নিয়োগের পরিকল্পনাও করেছে সরকার।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, একটি উড়োজাহাজ অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউরোপ যাচ্ছে কক্সবাজারের আকাশের ওপর দিয়ে। কক্সবাজার বিমানবন্দরে আমরা জ্বালানি তেল সরবরাহের রিফুয়েলিং সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাদেরকে অবতরণ করাতে পারি। অথবা জরুরি অবতরণেও কক্সবাজারকে কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। এতে রাজস্ব আয় হবে। পরবর্তীতে এই অবতরণ জনপ্রিয় করা গেলে বিদেশিদের জন্যও একটি হাব হয়ে ওঠতে পারে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সিনিয়র ফ্লাইট অপারেশনস ইন্সপেক্টর আজিজ আব্বাসী মনে করেন, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল চালু হলে বিমান আসা-যাওয়া অনেক বেশি বাড়বে। তখন ঢাকায় কুয়াশা, বৃষ্টিবাদল, টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে উড়োজাহাজ জরুরি অবতরণ করতে বিকল্প হিসেবে কক্সবাজারকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারব। এখন অনেক বিমানকে পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে যেতে হলে সেখানে নামার জন্য বাড়তি ডলার গুনতে হয়। তখন ডলার সাশ্রয় হবে আর ব্যয়টা দেশেই থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬৭৭৫ ফুট থেকে ৯ হাজার ফুট বাড়িয়ে বোয়িং ৭৭৭ বিমান নামার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে শুধুমাত্র ড্যাশ-৮ এবং এটিআর উড়োজাহাজই চলাচল করত এই বিমানবন্দর দিয়ে। ২০২১ সালের পর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক রূপ দিতে ১ হাজার ৯শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের এখন ৯০ শতাংশ কাজ শেষ।
প্রকল্পের অংশ হিসেবে রানওয়ে বাড়িয়ে ১৩ হাজার ফুট করা, দৃষ্টিনন্দন একটি আন্তর্জাতিক ভবন তৈরি করা; যেখানে কাস্টমস, ইমিগ্রেশন, লাউঞ্জ এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধা থাকছে। ভবন থেকে সরাসরি বিমানে ওঠানামার জন্য থাকছে একটি বোর্ডিং ব্রিজ। সবগুলোই তৈরি হয়ে চালু হবে আগামী ডিসেম্বরে। জানা গেছে, বর্তমানে এই বিমানবন্দর দিয়ে দেশের চারটি বিমান সংস্থার যাত্রীবাহী বিমান শুধুমাত্র ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচল করছে।
জানতে চাইলে কম সময়ে দ্রুত জনপ্রিয় হওয়া বেসরকারি বিমান সংস্থা এয়ার অ্যাস্ট্রার হেড অফ গ্রাউন্ড অপারেশনস কে এম জাফরুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কক্সবাজার বিমানবন্দর পুরোদমে চালু হলে তখন রাত নয়টায়ও আমরা ফ্লাইটে কক্সবাজার ছেড়ে আসতে পারব। ফলে একজন পর্যটক সকালে ঢাকা থেকে কক্সবাজার গিয়ে সারাদিন ভ্রমণ শেষে রাতেই ঢাকায় ফিরতে পারবেন। তিনি বলেন, শুধু তাই-ই নয়, আগামীতে কক্সবাজার-সিলেট, সৈয়দপুর-কক্সবাজারসহ অভ্যন্তরীণ রুটেও আমরা ফ্লাইট চালাতে পারব। কালেরকন্ঠ
পাঠকের মতামত