উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
এগিয়ে চলছে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেল লাইন প্রকল্পের কাজ। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ২০২১ সালের দিকে দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হবে। এ প্রেক্ষাপটে পর্যটন শহর কক্সবাজারে যাত্রী পরিবহনে বিশেষ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ট্যুরিস্ট কোচ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে। এ-সংক্রান্ত একটি ডিপিপি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রেলওয়ে।
প্রস্তাবটি রেল মন্ত্রণালয় ঘুরে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। প্রস্তাবনায় ৫৪টি কোচের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৫৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে প্রতিটি কোচ আমদানিতে খরচ পড়বে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা। প্রকল্প ব্যয়ের ৭৮ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ সরকার এবং ২৭৮ কোটি টাকা ধরা হয়েছে প্রকল্প সহায়তা।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের প্রতিটি মিটার গেজ কোচ আমদানিতে গড়ে ব্যয় হয় ২ থেকে ৩ কোটি টাকা। এসি কোচ আমদানিতে খরচ এর চেয়ে কিছুটা বেশি পড়ে। কিন্তু ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্যুরিস্ট ট্রেন চালুর জন্য প্রতিটি ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকা দামে ৫৪টি বিলাসবহুল কোচ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেলওয়ে। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনাও (ডিপিপি) চূড়ান্ত করেছে রেলের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।
জানা গেছে, ট্যুরিস্ট কার আমদানির বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য চলতি বছরের মার্চে একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে রেলওয়ে।
রেলওয়ের যুগ্ম মহাপরিচালক (মেকানিক্যাল) মঞ্জুরুল আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন যুগ্ম মহাপরিচালক (অপারেশন) মুরাদ হোসেন ও প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী (পূর্ব) মো. আনোয়ার হোসেন।
এ কমিটি গত মাসে প্রতিবেদন দিয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পরই চলতি মাসের শেষদিকে ডিপিপি প্রস্তুত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রেলওয়ে।
কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, শুরুতে ঢাকা ও কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই জোড়া ট্রেন পরিচালনার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাওয়ার কারণে এক জোড়া ট্যুরিস্ট ট্রেনের রেক সংগ্রহের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়।
এ হিসেবে প্রতিদিন সকাল ও বিকালে ঢাকা থেকে দুটি ট্রেন এবং একই সময়ে সকাল ও রাতে কক্সবাজার থেকে দুটি ট্রেন চলাচল করবে।
৫৪টি কোচের মধ্যে অত্যাবশ্যকীয় কোচগুলো ছাড়া ২০ শতাংশ কোচ স্পেয়ার হিসেবে যাত্রাপথের উভয় প্রান্তে মজুদ রাখা হবে। তবে ট্যুরিস্টদের জন্য বিশেষ সুবিধা সংবলিত হওয়ায় এসব কোচের দাম কিছুটা বেশি হওয়া অস্বাভাবিক নয় বলে দাবি করেছেন তারা।
রেলের তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে থাকছে ছয়টি মিটার গেজ ট্যুরিস্ট কোচ (সিটি), ১৩টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), ২২টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিইজেসিসি), সাতটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি) এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর)।
এর মধ্যে শুধু কোচের দাম ধরা হয়েছে ২৫৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি কোচের ক্রয়মূল্য ধরা হয়েছে গড়ে ৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা করে। প্রকল্পের বাকি টাকা আমদানি প্রক্রিয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় করা হবে। এ হিসেবে কোচ আমদানি বহির্ভূত প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০১ কোটি টাকা, যা অস্বাভাবিক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, কোচ সংকট মোকাবেলায় সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বেশ কয়েকটি প্রকল্প নিয়েছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৫০টি কোচ সংগ্রহের প্রকল্প হাতে নেয়া হয় ২০১৫ সালে। এ প্রকল্পে ২০০টি মিটার গেজ কোচ সংগ্রহে ব্যয় ধরা হয়েছে মাত্র ৫৮০ কোটি টাকা। এই হিসাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত, শোভন চেয়ারসহ আনুষঙ্গিক কোচ সংগ্রহে প্রতিটিতে গড়ে ব্যয় হচ্ছে ২ দশমিক ৯ কোটি টাকা। ফলে ট্যুরিস্ট কারের জন্য প্রতিটি কোচে ৬ কোটি ৬০ লাখ টাকার ব্যয় প্রস্তাব অযৌক্তিক বলে মনে করছেন রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী ও ট্যুরিস্ট ট্রেন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই কমিটির সদস্য মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্যুরিস্ট ট্রেনে অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ফলে প্রতিটি কোচ আমদানিতে যে ব্যয় প্রস্তাব করা হয়েছে, তা যৌক্তিক বলে মনে করি।
তবে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রেলওয়ে যাত্রী খাতে আয় বাড়াতে সচেষ্ট। সারা দেশে রেলের যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা থাকলেও ট্যুরিস্ট কার বা বিলাসবহুল ট্রেন পরিচালনায় রেলের অভিজ্ঞতা নেই। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে বিশ্বের যেসব দেশে ট্যুরিস্ট কার বা ট্রেন চলাচল করে, সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে হবে। এজন্য যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এদিকে রেললাইন নির্মানের জন্য অধিগ্রহনকৃত কক্সবাজার সদর উপজেলার ভূমি মালিকরা জানান, ক্ষতিপূরনের চেক পেতে চরম হয়রানি, ভোগান্তি ও বিড়ম্বনা পেতে হচ্ছে। বৃহত্তর ঈদগাঁও এলাকার একাধিক ভূমি মালিক বলেন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূৃমি অধিগ্রহন শাখায় কর্মরত কানুনগো ও সার্ভেয়ারদের অসাধু ও ঘুষখোর সিন্ডিকেটের অনিয়ম-দূর্ণীতির কাছে সবাই জিম্মি হয়ে আছেন। এ ছাড়াও এসব কর্মকর্তাদের সহায়তায় নির্দিষ্ট কয়েকজন দালালদের একটি ধান্ধাবাজ চক্রও এখানে গজিয়ে উঠেছে। ভূক্তভোগীরা জানান, কথিত “এডভোকেট” নামধারী কয়েকজন দালাল সারাদিন এল ও অফিসে দাঁড়িয়ে থাকে। এসব দালাল সারাদিন এল ও অফিসে ঘুরঘুর করে। দালালদের মাধ্যমে কানুনগো সার্ভেয়ারগন গনহয়রানি ও ঘুষবাণিজ্যে নেমেছেন। কর্মকর্তা-দালালদের যৌথ সিন্ডিকেট বিশেষ করে কথিত “এডভোকেট” নামধারী দালালদের হয়রানি বন্ধ না হলে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচী দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জমির মালিকরা।
চট্টগ্রামে চকবাজার থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাজনীন ...
পাঠকের মতামত