ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০৮/১১/২০২৪ ১০:০৪ এএম

কক্সবাজার রেলপথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয় ২০২৩ সালের ১লা ডিসেম্বর। বর্তমানে এ রেলপথে ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত দুটি ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত আরেকটি ট্রেন চলছে।

কক্সবাজার রেললাইন ছিল গত সরকারের অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্প। কিন্তু এ মেগা প্রকল্প চালু হওয়ার এক বছরের মধ্যেই মেগা মেগা ভুলত্রুটি ধরা পড়েছে।

অভয়ারণ্য এলাকায় রেলের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু, প্রথম বছরেই বন্যায় রেললাইন বেঁকে যাওয়া, দেশের প্রথম আইকনিক রেল স্টেশনে শেড বেয়ে পানি পড়াসহ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে ত্রুটি বিচ্যুতিগুলো।

এমন অবস্থায় ১০১ কিলোমিটারের রেলপথটি গত মঙ্গলবার ও বুধবার সরেজমিন পরিদর্শন করেছে সরকারি রেল পরিদর্শন অধিদপ্তর (জিআইবিআর)।

প্রকল্পের কাজ প্রায়ই শেষ। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে রাজনৈতিক বিবেচনায় গত বছরের ১ ডিসেম্বর থেকে রেললাইনটি দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করেছে।

জানা যায়, দোহাজারি-কক্সবাজার রেলপথের প্রায় ২২ কিলোমিটার বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকা আছে। এ পথ দিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে বন বিভাগ শুরুতে আপত্তি জানায়।

তখন রেলওয়ে পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো নির্মাণ, হাতি চলাচলে দুটি ওভারপাস-আন্ডারপাস নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় কাজ করে দেওয়ার আশ্বাস দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত কাজগুলো করা হয়নি। হাতি চলাচলে তৈরি করা আন্ডারপাসটি সরু।

এটি দিয়ে হাতির দল চলাচল করতে পারবে না। ফলে গত ১৩ অক্টোবর ট্রেনের ধাক্কায় একটি হাতির মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে, ২১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয় কক্সবাজারে। কিন্তু সেটির ওপরের শেড থেকে পানি চুইয়ে স্টেশনের প্লাটফর্ম হয়ে যাত্রীদের গায়ে পড়ছে। ড্রেনেজের পানি উপচে প্লাবিত হয় প্লাটফর্ম। বিঘ্নিত হচ্ছে স্টেশন পরিচালন কার্যক্রম।

তাছাড়া, দোহাজারি-সাতকানিয়া-লোহাগাড়া-চুনতি-হারবাং-ডুলাহাজরা-অভয়ারণ্য ভেদ করে চকরিয়া-রামুর মাঝখান দিয়ে চলে যাওয়া রেলপথের বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজনীয় কালভার্ট নির্মাণ না করায় গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে রেলপথ বেঁকে যায়, ধসে যায় রেললাইনের মাটি। বন্যা-পরবর্তীতে স্থানীয়দের দাবির মুখে চারটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়।

তাছাড়া, রেলপথের পাহাড়ি এলাকায় রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ, উভয়পাশে শক্তিশালী ও উঁচু রিটার্নিং ওয়াল নির্মাণ না করায় গত বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ভেঙে রেললাইন ভরাট হওয়ার ঘটনা ঘটে। একই সঙ্গে ওয়ালের পকেট গেটগুলো অরক্ষিত রাখায় রেললাইনের ওপর হাতিসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ওঠার সুযোগ আছে।

অপরদিকে, দোহাজারি-কক্সবাজার পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বর্ষার সময় পানি প্রবেশ করে। প্ল্যাটফর্মের শেডের উচ্চতা স্বাভাবিক নিয়মের চেয়ে উঁচু হওয়ায় প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রীরা বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

প্রতিটি স্টেশন ভবনের অভ্যন্তরে পানি প্রবেশ করে। ফলে প্রকল্পের সমীক্ষা, কাজের মান, ডিজাইনসহ নানা কাজ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়।

সরকারি রেল পরিদর্শন অধিদপ্তরের পরিদর্শক প্রকৌশলী ফরিদ আহমেদ বলেন, দুই দিন ধরে পুরো রেললাইন সরেজমিন পরিদর্শন করেছি।

পরিদর্শনে আমরা রেলপথ, লেভেল ক্রসিং, পয়েন্ট ক্রসিং, পাহাড় ধস, ট্র্যাকের কাজ, সিগন্যালিং সিস্টেম, নিরাপত্তাব্যবস্থা, ইলেকট্রিক্যাল লেভেল এবং আইকনিক স্টেশনসহ সব কিছু দেখেছি। এ ব্যাপারে আমরা বিশেষজ্ঞদের মতামত নেব।

একই সঙ্গে আমরা পরিদর্শন টিমও একটি পর্যবেক্ষণ দেব। সব মিলে আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দেব। এর পর প্রতিবেদন মতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী সবুক্তগীন বলেন, প্রকল্পটি বিদেশি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ মতে করা হয়েছে। পাহাড়ের উভয় পাশে লতা-ঘাস ও গাছ লাগানো হয়েছে।

তাছাড়া, ট্রেনের ধাক্কায় হাতি মারা যাওয়ার পর উভয় পাশ দিয়ে যাতে হাতি রেললাইনে নামতে না পারে সেজন্য উঁচু করে ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে। হাতি নামার পথটি ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৬ জুলাই দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল একনেক।

নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা ৪৭ লাখ টাকা। পরে রামু-ঘুমধুম অংশ বাদ দিয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ১২ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং ২০১৮ সালের জুলাই মাসে কাজ শুরু হয়। ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয়। ১ ডিসেম্বর থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি দুটি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার একটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করা হলেও সেটি এখন বন্ধ আছে

পাঠকের মতামত