ডেস্ক রিপোর্ট::
কক্সবাজারে রেললাইন প্রকল্প সবার জন্য আশীর্বাদ হলেও সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিকদের চোখের পানিতেই ভাসতে হচ্ছে। চোখের সামনেই পানির দরে চলে যাচ্ছে বাপদাদার জমিজিরাত। প্রতি শতকে মাত্র ৩১ হাজার টাকায় নিয়ে যাচ্ছে শত বছরের চাষাবাদের জমি। এর মধ্যেও নিজের জমির টাকা পেতে উৎকোচ হিসাবে টাকা দিতে হচ্ছে ১০ %থেকে ১৫% টাকা অথচ এই জমির প্রকৃত বাজার মূল্য তার চেয়ে অনেক বেশি। অথচ তার পাশের ইউনিয়নের মানুষজন জমির ক্ষতি পূরনের টাকা পাচ্ছে তার ৪ থেকে ৫ গুন বেশি। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত আর উন্নয়ন প্রকল্প এগিয়ে নিতে সাধারণ মানুষ জমি ছাড় দিলেও তাদের অন্তরের কান্না থামছেনা। তাই জমির প্রকৃত মূল্য ক্ষতিপূরন হিসাবে পেতে স্থানীয় সাংসদ ও প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন নাপিতখালী এলাকার সাধারণ মানুষ।
কক্সবাজার সদর উপজেলা ইসলামপুর ইউনিয়নের নাপিতখালীর বাসিন্দা রুহুল আমীন বলেন, আমরা বাপ দাদার সময় থেকে কৃষি পেশার উপর নির্ভর,আমাদের অন্যকোন আয়ের পথ নেই। পৈত্রিক সূত্র থেকে পাওয়া জমি জিরাত চাষাবাদ করেই জীবনের এতট াবছর পার করেছি কিন্তু বর্তমানে রেললাইন প্রকল্প কাজে আমার নিজের প্রায় ১ একরের কম (২ কানির মত জমি পড়েছে) সেখানে ক্ষতি পূরন হিসাবে আমাদেরকে নাকি দিবে কানিতে ৮ লাখ ৪০ হাজার ৯২০ টাকা। এর মধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ফাইল জমা দিতে এবং কাগজপত্র যোগাড় করতেই চলে গেছে বহু টাকা। এছাড়া জমির ক্ষতিপূরনে টাকা পাওয়ার জন্য ১০% থেকে ১৫% টাকা উৎকোচ হিসাবে দিতে হচ্ছে এটা সবাই বলছে। ইতি মধ্যে অনেকে আমাদের বাড়িতে এসে যোগাযোগ করছে উৎকোচের রেইট নিয়ে। সত্যিকথা হচ্ছে যখন থেকে শুনেছি আমাদের জমি রেললাইনে পড়েছে সেদিন থেকে রাতে ঠিকমত ঘুমাতে পারিনি। কারন আমি হয়তো বা কোন মতে চলতে পারবো কিন্তু আমার পরবর্তি প্রজন্ম কি করবে ? আর ক্ষতিপূরনের টাকা এত কম যা কল্পনাও করা যায় না। কারন নাকি আমাদের জমি মৌজা রেইট খুব কম তাই।
আরেক ভুক্তভোগী নাজেম উদ্দিন বলেন, আমরা শুনেছি মহেশখালী মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যূৎ প্রকল্প করতে সেখানেও অনেক জায়গায় জমির মৌজা রেইট কম ছিল। কিন্তু পরে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং প্রশাসন মিলে মানুষের উপকারের জন্য মন্ত্রনালয়ে তদবির করে জমির মৌজা রেইট বাড়িয়ে এনেছে এখন মানুষ ভাল মুল্য পাচ্ছে। আমাদের নাপিতখালীর মানুষের জন্য কেউ এগিয়ে আসলে এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বড় উপকার হতো।
এ ব্যপারে ইসলামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অছিয়ুর রহমান বলেন, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের মানুষ রেললাইনের জমি পড়েছে হিসাবে খুশি কিন্তু আমাদের নাপিতখালী ইউনিয়নের মানুষের চোখের পানি থামছে না,কারন আমাদের জমি গুলো আমাদের জন্য স্বর্ণের খনি কিন্তু আমাদের সেই মূল্যবান জমিগুলো নিয়ে যাচ্ছে পানির দরে,আমার নিজের জমি পড়েছে ১ একরের বেশি। সেখানে ক্ষতিপূরন হিসাবে যে টাকা সরকার দেওয়ার কথা বলছে সেই টাকা আমরা কয়েক বার জমিতে ধান রোপন করলে বা সবজি চাষ করলেই পাই। এখন আমাদের জমিটিও নিয়ে যাচ্ছে আর টাকা পাচ্ছি না। আমাদের নাপিতখালী মৌজার শতকের মূল্য ২১০২৩ টাকা। সেই হিসাবে আমাদের ক্ষতিপূরন দিচ্ছে নাকি দেড়গুন হিসাবে ৩১ হাজার টাকা। সেখান থেকে ১৫% যদি কমিশনের টাকা চলে যায় তাহলে আর থাকে কি। এ জন্য যাদের জমি রেললাইনে পড়েছে তাদের চোখের পানি থামছে না।
সাবেক চেয়ারম্যান মাস্টার আবদুল কাদের বলেন,আমাদের পার্শবর্তি ইউনিয়ন ঈদগাওতে জমির ক্ষতিপূরন পাচ্ছে কানি প্রতি ৯০ লাখ আর আমরা পাচ্ছি মাত্র ৮ লাখ,আর ঝিলংজা ইউনিয়নে পাচ্ছে প্রতি কানিতে ১ কোটি ৭৫ লাখ তাহলে আপনারাই বলুন আমরা কি দোষ করেছি। আমাদের এলাকার অনেক মানুষ কান্না করছে। আমাদের দাবী স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং জেলা প্রশাসন চাইলে মানুষের কান্না থামাতে পারেন। যদি জমির মৌজা রেইট বাড়িয়ে জমির ক্ষতিপূরন দেওয়া যায় তাহলে মানুষের মনে কিছুটা হলেও শান্তি আসবে। আর সরকারি ভাবে ঘোষনা আছে ক্ষতিপূরন ৩ গুন কিন্তু এখানে দেড়গুন কেন বলছে সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) কাজী আবদুর রহমান বলেন, জমির মৌজা রেইটের উপর নির্ভর করে ক্ষতিপূরনের টাকার মানদন্ড। আর ক্ষতিপূরন যদি ঝিলংজা বা ঈদগাওতে ৩ গুন হয় তাহলে নাপিতখালীতেও ৩ গুন হবে দেড়গুন হওয়ার কোন সম্ভবনা নেই। মোট কথা মানুষের জন্য উপকারের জন্য প্রশাসন সব সময় সচেস্ট আছে