পুরো নাম আজহার উদ্দিন ওরফে রাজা মিয়া। হরেক রকমের মজাদার চা বানিয়ে বিক্রি করে ইতিমধ্যেই তিনি গণমাধ্যমের সংবাদ হয়েছেন। এখন ‘রাজা মামা’ নামেই তার খ্যাতি। কেবল চা বিক্রি করে সারা দেশে ১৯টি আউটলেট খোলার রেকর্ড এখন পর্যন্ত রাজা মামারই।
রাজধানীর বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্থানে রয়েছে রাজা মামার চায়ের দোকান। সম্প্রতি পর্যটননগরী কক্সবাজারেও খুলেছে ‘রাজা চায়ের আড্ডা’ নামে তার চায়ের স্টলের শাখা।
গত শুক্রবার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেল একটি দোকানে অতিরিক্ত ভিড় মানুষের। বাহারি গোঁফ, মাথায় পাগড়ি আর রঙিন ঝলমলে পাঞ্জাবি পরা রাজা মামার মধ্যে দেখা গেল বেশ রাজকীয় ভাব। আর দোকানের সাজসজ্জার মধ্যেও রেখেছেন রাজপ্রাসাদের ভাব। সোনালি ও রুপালি তামা-কাঁসার নকশাদার কেতলি থরে থরে সাজানো। রয়েছে চা বানানোর হরেক রকম উপকরণ। জি না, কেবল চা-পাতা, দুধ আর চিনি নয়। এ যে ‘রাজা মামা’র চা। তাই চায়ের বাহারও সেই রকম। নানা ধরনের বাদাম, কিশমিশ, হরলিক্স, কফি, কফিমেট তার চায়ের অনুষঙ্গ। ১৫২ ধরনের স্বাদ নিয়ে রাজা মামা এসেছেন কক্সবাজারে।
কক্সবাজার শাখায় রাজা মামার নতুন আকর্ষণ হলো ‘বালি চা,’ যা দেশে প্রথম। এই বালি চা মূলত সাগরের বালির ওপর তাপ সৃষ্টি করে সেখানে তৈরি করা চা।
কথা হয় চা খেতে আসা পর্যটক রুমা-সাফুল দম্পতির সঙ্গে। তারা বলেন, এ চায়ের খবর পত্রিকায় পড়েছি। আজ খাচ্ছি। খুব ভালো চা। হরেক রকম মশলা ব্যবহার করছেন তিনি। হয়তো এ জন্যই তার চায়ের স্বাদ আলাদা।
চট্টগ্রাম থেকে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘রাজা চায়ের স্বাদই আলাদা। ১৫২ রকমের চা ভিন্ন রকম স্বাদ দেয়। আর স্টলের ডিজাইন তো প্রাসাদের মতো। দেখতেও ভালো লাগে।’
শত ব্যস্ততার মধ্যে থেকে একটু সময় বের করেন রাজা মামা দৈনিক বাংলার জন্য। জানালেন, তার রাজা মামা হয়ে ওঠার পেছনের কথা। ময়মনসিংহের ত্রিশালের নওধার গ্রামে ছয় ভাইবোন আর বাবা-মাকে নিয়ে ছেলেবেলা কেটেছে খুবই দুর্দশার মধ্যে। মানুষের বাড়িতে কাজ করা থেকে শুরু করে লাকড়ি কুড়ানো- সব ধরনের কাজই করেছেন পেটের দায়ে। একসময় ত্রিশাল রেলস্টেশনে চা-সিগারেট বিক্রির কাজ করতে করতে ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশনে চলে আসেন। সেখানে রেলস্টেশনের টয়লেটের ছাদে রাত কাটাতেন। এরপর সুযোগ হয় দুবাই যাওয়ার। সেখানে গিয়ে তিনি একটি চায়ের দোকানে কাজ পান। কিন্তু বিদেশের মাটিতে মন টিকল না। ভাবলেন, চা-ই যদি বিক্রি করতে হয়, তাহলে নিজের দেশে নয় কেন?
এরপর দেশে ফিরে সেই বিমানবন্দর রেলস্টেশনেই আবার শুরু করলেন চায়ের দোকান। তবে এবার অন্যভাবে। নতুন নতুন চা নিয়ে নতুন আঙ্গিকে। কাজে লাগালেন বিদেশে চা বিক্রির অভিজ্ঞতাকে। ব্যাস, এবার আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি রাজা মিয়ার।
তার ১৯টি স্টলে এখন ৬৫ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের প্রত্যেককে ১২ থেকে ২২ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন তিনি।
রাজা মিয়া বলেন, ‘২০ টাকার এক কাপ চায়ে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, হরলিক্স, কফি, কফিমেট, কিশমিশ, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ ইত্যাদি আরও নানা উপাদান দিয়ে থাকি। ফলে চায়ের স্বাদ হয় ভিন্ন। এটাই রাজা চা। এই একই স্বাদের চা দেশের বাইরে ৩০০ টাকায় বিক্রি করতাম। আরও নানা ধরনের চা থাকবে সামনে।’ প্রতি কাপ রাজা চায়ের দাম নিচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ টাকা। ইরানি, জাফরানি, ইন্ডিয়ানসহ দেশ-বিদেশের ১৫২ প্রকারের চা বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি।
মুজিববর্ষ উপলক্ষে সব মুক্তিযোদ্ধা ও প্রতিবন্ধীর জন্য বিনা মূল্যে চায়ের ব্যবস্থা করেছেন রাজা মামা। সুত্র: দৈনিক বাংলা