উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ১৫/০১/২০২৪ ১০:০৭ এএম , আপডেট: ১৫/০১/২০২৪ ১০:১১ এএম

বৈশ্বিক অস্থিরতার কারণে দেশের জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের বাজারেও রয়েছে উত্তাপ। এ নিয়ে সংকট কাটাতে সরকার যখন নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে, তখন সীমান্তের ফাঁক গলে কক্সবাজারের উপকূল দিয়ে মিয়ানমারে পাচার হয়ে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রায় আমদানি করা জ্বালানি ও ভোজ্যতেল।

যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে দেশের বাজারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ধুঁকতে থাকা পাশের দেশ মিয়ানমারে এক লিটার অকটেনের দাম ৬০০ টাকা।

কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ থেকে এক লিটার অকটেন পাচার চক্রের নৌকায় তুলে দিতে পারলেই হাতে লাভ হিসেবে চলে আসছে নগদ ১৬৫ টাকা। আর মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সাগর থেকে মিয়ানমার উপকূলে পৌঁছালে সেই অকটেনের প্রতি লিটারে লাভ দাঁড়ায় ৩০০ টাকা।
মাদকের চেয়েও জ্বালানি তেল পাচারে হঠাৎ এমন অস্বাভাবিক লাভ দেখে এই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে উপকূলের মানুষ।
রাতের বেলা এভাবে প্রায়ই মিয়ানমারে জ্বালানি ও ভোজ্যতেল পাচারের খবর মিলেছে।

সাগরপথের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এমন পাচারের তথ্যে কক্সবাজারের র‍্যাব-১৫ এর সদস্যরা সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে এক চালানের দুই হাজার ৯০০ লিটার অকটেন উদ্ধার করেছেন। সেই সঙ্গে অকটেন পাচারের সঙ্গে জড়িত ছয় পাচারকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাচারে জড়িতরা জানিয়েছেন, ওই অকটেন ৬৯টি প্লাস্টিক কন্টেইনারে করে নৌকায় পাচার করা হচ্ছিল মিয়ানমারে।
র‍্যাবের একটি সূত্র জানিয়েছে, পাচারকারীরা উখিয়ার একটি তেলের পাম্প থেকে ওই অকটেন প্রতি লিটারে ১৩৫ টাকা করে কিনে মিয়ানমারে নিয়ে যাচ্ছিলেন।

র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল অ্যান্ড মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী জানান, সম্প্রতি কক্সবাজারের সাগরের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে চোরাকারবারি চক্র জ্বালানি অকটেন পাশের দেশে পাচার করে আসছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গত শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার সময় মেরিন ড্রাইভের দরিয়ানগর ব্রিজের ওপর বিশেষ অভিযান চালায়। অভিযানকালে টেকনাফ অভিমুখী দুইটি পিকআপ ভ্যান আটক করা হয়। সেখানে ৬৯টি কনটেইনারে দুই হাজার ৯০০ লিটার অকটেন পাওয়া যায়।

এসময় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের সোনারপাড়ার বাসিন্দা মো. আয়াছ ওরফে রিয়াজ (২২), মো. জসিম উদ্দিন (২০), আলী আকবর (৩৮), মো. সোহেল (১৯), মো. এহাছান উল্লাহ ওরফে রহমত উল্লাহ (২৩) ও রামুর হিমছড়ির বাসিন্দা মো. দেলোয়ার (২৪)।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, পিকআপে করেই ওই অকটেন মিয়ানমারমুখী নৌকায় নিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। পরস্পরের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন পেট্রোল পাম্প থেকে পাইকারি দামে জ্বালানি অকটেন কিনে বেশি মূল্যে অবৈধভাবে সাগরের বিভিন্ন চ্যানেল ব্যবহার করে মিয়ানমারে চোরাইপথে বেশি দামে পাচার করে আসছিলেন তারা।

বেশ কিছুদিন আগে থেকেই জ্বালানি ও ভোজ্যতেল মিয়ানমারে পাচার হয়ে আসছে জানিয়ে টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গণি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে আমাদের পুলিশ দুই দফার অভিযানে মিয়ানমারে পাচারকালে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের চালান জব্দ করেছে।

তিনি জানান, সদ্যসমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ লোকজনের ব্যস্ততার সুযোগটা পাচারকারীরা কাজে লাগিয়েছে। জ্বালানি ও ভোজ্যতেল পাচার রোধে আরও বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হলেও নানা কারণে তা ধরা যায়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমারে সে দেশের সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান গৃহযুদ্ধে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা এক প্রকার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি পশ্চিম আরাকানের (রাখাইন রাজ্য) বন্দর শহর মন্ডুর সঙ্গে জেলা ও বিভাগীয় শহর আকিয়াব এবং রাজধানী ইয়াংগুনের যোগাযোগ রক্ষাকারী সড়কও বিচ্ছিন্ন রয়েছে। এসব কারণে পণ্য পরিবহনে সর্বত্র মারাত্মক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে আকিয়াব, ভুচিদং, রাশিদং ও মন্ডুসহ পশ্চিম আরাকান এলাকায় নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। সেখানে জ্বালানি ও ভোজ্যতেলও ভোক্তার নাগালে নেই।

মন্ডুর ব্যবসায়ী আবুল কালাম জানান, বাংলাদেশের এক টাকার সমপরিমাণ হচ্ছে মিয়ানমারের ২৭.৫০ কিয়েত।

ওই শহরের ব্যবসায়ীরা বলেন, মন্ডু শহরে ৫০ কেজির এক বস্তা পুরান চালের দাম বাংলাদেশি টাকায় ৮ হাজার ৯২৮ টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম ১৭৮ টাকা। তবে সেখানে নতুন চালের দাম আরও কম। প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম এক হাজার ৪৫০ টাকা । প্রতি লিটার অকটেন ৬০০ টাকা, আর প্রতি লিটার ডিজেল ৪০০ টাকা।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের পেট্রোল পাম্পের মালিক রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, দেশে এখন প্রতি লিটার অকটেনের দাম হচ্ছে ১৩৫ টাকা ও ডিজেলের লিটার ১১১ টাকা।

বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন খোকন জানান, চট্টগ্রামের উপকূল দিয়ে গভীর সাগরপথেও সরাসরি মিয়ানমারে জ্বালানি পাচার হয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ থেকে উপকূলীয় এলাকার জ্বালানি তেলের এজেন্সিগুলো চট্টগ্রামের ডিপো থেকে ৯ হাজার লিটার সরাসরি সাগরের নৌকায় কনটেইনারে করে পাচার করে দেওয়ার তথ্য তার কাছে রয়েছে বলে দাবি করেন এই ইউপি চেয়ারম্যান।

তিনি জানান, মেরিন ড্রাইভে বসে এক লিটার অকটেন মিয়ানমারগামী নৌকায় তুলে দিতে পারলেই ১৬৫ টাকা নগদ লাভ হাতে আসে। এসব কারণে তার এলাকার লোকজনও জ্বালানি ও ভোজ্যতেল দেদারসে পাচার করছে মিয়ানমারে।

টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের চৌকিদার শহিদুল্লাহ জানান, ওই এলাকার বড় ডেইল, শীলখালী, জাহাজপুরা, হাজমপাড়া, মারিশবুনিয়া, নোয়াখালী পাড়া, মহেশখালীয়া পাড়া, হাবিরছড়া, কচ্ছপিয়া, করাচিপাড়াসহ আরও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে সাগরপথে জ্বালানি ও ভোজ্যতেলের চালান মিয়ানমারে পাচার করা হচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, বাহারছড়ায় পুলিশের একটি তদন্ত কেন্দ্র থাকলেও এ যাবত কেন্দ্রটির পুলিশ পাচারের কোনো চালান আটক করতে পারেনি। তবে এ বিষয়ে তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিদর্শক মশিউর রহমান দাবি করেন, পাচার নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করছেন।

পাঠকের মতামত

সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে নতুন সিদ্ধান্ত

কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী কেয়ারী সিন্দাবাদ নামক একটি জাহাজকে চলাচলের অনুমতি দিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। আরও ...

কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে গোপনে মিয়ানমারে গিয়ে যুদ্ধ করছে বহু রোহিঙ্গা

বাংলাদেশের কক্সবাজারে বিশ্বের বৃহত্তম শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি অংশ সক্রিয়ভাবে মিয়ানমারে সশস্ত্র লড়াইয়ে যোগ ...