মাইনউদ্দিন শাহেদ, কক্সবাজার
টানা ছুটিতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে এখন ভরপুর পর্যটক। শহরের লাবণি, সুগন্ধা ও কলাতলী সৈকতে দিনে অন্তত এক লাখ পর্যটক সমুদ্র দর্শনে নামছেন। বেড়াতে আসা পর্যটকদের বড় অংশই গোসলে নামতে চান। কিন্তু সৈকতে সৃষ্টি হওয়া গুপ্ত খালের (ছোট-বড় খাদ) কারণে গোসলে নামা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গুপ্তখালে তলিয়ে গিয়ে অনেক সময় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন পর্যটকেরা।
ঝুঁকি এড়াতে পর্যটকদের সতর্ক করে মাইকিং করছেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা, জেলা প্রশাসনের বিচ-কর্মী ও লাইফ গার্ড সদস্যরা। এর পাশাপাশি সৈকতের ঝুঁকিপূর্ণ ও নিরাপদ এলাকায় নিশানা উড়ানো থাকে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। সৈকত ব্যবস্থাপনায় থাকা জেলা প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে সাগরে নামতে বিভিন্ন নির্দেশনা ও নিরাপদ গোসলের জন্য এলাকা করার কথা বললেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।
চলতি বছর কক্সবাজার শহরের সৈকতে গোসলে নেমে অক্টোবর মাস পর্যন্ত ৫ মাসে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ নভেম্বর টেকনাফ সমুদ্রসৈকতে গোসলে নেমে স্থানীয় তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এসব মৃত্যু বেশির ভাগই সৈকতের জোয়ার-ভাটা অঞ্চলে সৃষ্টি হওয়া খাদে তলিয়ে গিয়ে ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট শহরের কলাতলী পর্যটন এলাকার তিন কিলোমিটার সৈকতের মাঝামাঝি অবস্থিত। এই পয়েন্টে এখন বেশি পর্যটক সমাগম ঘটে। আজ শনিবার বিকেলে এই সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, সৈকতের জোয়ার ভাটা অঞ্চলের বালিয়াড়ি ভাগ করে খালের সৃষ্টি হয়েছে। এই খাল উত্তরে সিগাল পয়েন্ট ও দক্ষিণে ডিভাইন পয়েন্ট পর্যন্ত ৫০০ মিটার বিস্তৃত। এই খাদের কারণে পর্যটকেরা সরাসরি সাগরের ঢেউয়ের কাছাকাছি যেতে পারছে না। তবে বেশির ভাগ পর্যটক লোনাজল মাড়িয়ে সাগরে নামছেন।
সিলেটের বিয়ানীবাজার থেকে সপরিবারে বেড়াতে এসেছেন কলেজশিক্ষক আকমল হোসেন। তিনি বলেন, আট বছর আগে এই সৈকতে এসেছিলাম। তখন সৈকতের বালিয়াড়ি আরও চওড়া ছিল। এখন দাঁড়ানোর জায়গা নেই। চেয়ার-ছাতা, বিচ বাইক, ঘোড়া ও হকারের জন্য হাঁটা যায় না।
গুপ্ত খাল বা খাদ সম্পর্কে গোসলে নামা পর্যটকদের সতর্ক করা হচ্ছে জানিয়ে জেলা প্রশাসনের বিচ কর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন বলেন, ভাটার সময় দুই থেকে পাঁচ ফুট গভীর এসব খাদ ভেসে ওঠে। আবার জোয়ারের সময় তলিয়ে যায়। জোয়ারের সময় গোসলে নেমে খাদে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে।
সৈকতে গোসলে নেমে বিপদের সম্মুখীন হওয়া পর্যটকদের উদ্ধারে কাজ করে সি-সেফ লাইফগার্ড। চলতি বছর ৫৬ জন পর্যটককে ভেসে যাওয়ার সময় উদ্ধার করেছে এই সংস্থা। সি-সেফ লাইফগার্ডের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইমতিয়াজ আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গত বছর থেকে সৈকতে গুপ্ত খাল বা খাদ বেশি দেখা দিচ্ছে। এ বছর ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে সৈকতের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। এতে একাধিক গুপ্ত খাল ও বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সৈকতে নেমে পর্যটকদের কেউ কেউ গর্তে পড়ে তলিয়ে যান।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বোরি) ওশানোগ্রাফি ও জলবায়ু বিভাগের জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু শরীফ মো. মাহবুব ই কিবরিয়ার নেতৃত্বে একদল বিজ্ঞানী সৈকতের বালিয়াড়ির ভাঙন নিয়ে গবেষণা করছেন। অনুসন্ধান শেষে গত ৭ অক্টোবর তাঁরা একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এতে বলা হয়, কক্সবাজার শহর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার সমুদ্র উপকূলে পর্যটকদের পছন্দের স্পট সুগন্ধা, লাবণি ও কলাতলীর তিন কিলোমিটারে ভাঙন সবচেয়ে বেশি। এর পাশের দরিয়ানগর পর্যটনপল্লি এবং হিমছড়ি এলাকাও ভাঙছে।
পাঠকের মতামত