আজিজ রাসেল ::
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে দখলবাজ চক্র। চক্রটি এবার হকারদের কাছে প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে গণহারে চাঁদাবাজি করছে।
ওই চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছেন গুরা মিয়া, জাকির, জয়নাল, জালাল, আসাদ, হাবিবসহ ৮-১০ জনের একটি সিন্ডিকেট।
জানা যায়, সম্প্রতি সুগন্ধার সী ইন পয়েন্টের বালিয়াড়িতে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা নিজ উদ্যোগে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
নির্দেশনা অনুযায়ী সেখান থেকে স্থাপনার আংশিক অংশ সরানো হয়। ওই সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সকালে এসে রাতে গাড়ি সরিয়ে ফেলার আদেশ দেওয়া হয়।
২০২২ সালেও সুগন্ধার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তৎকালীন উচ্চ আদালতে রিট করার কথা বলে ১০/১৫ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এবারও একই মিশনে নেমেছে সুগন্ধার অসাধু ওই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট।
চক্রটি গুরা মিয়া ও জাকিরের নেতৃত্বে ঝিনুক, চায়ের দোকান, পানের দোকানসহ বিভিন্ন দোকান থেকে প্রশাসন, সাংবাদিক ও হাইকোর্টের নামে ৫ হাজার টাকা তোলা হচ্ছে। এখানে ৪০০ টি ছোট-বড় দোকান আছে। ৫ হাজার টাকা করে তোলা হলে ৪০০ টি দোকান থেকে উঠে ২০ লক্ষ টাকা।
দোকানদারদের বলা হচ্ছে সুগন্ধা পয়েন্টে স্থায়ীভাবে দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য ওই টাকা অবশ্যই দিতে হবে। যা দিয়ে ম্যানেজ করা হবে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের। এছাড়া উচ্চ আদালতে রিট করার জন্য মোটা অংকের খরচ লাগবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনুক, চা ও পানের দোকানগুলো আবারও স্থায়ীভাবে বসানোর পাঁয়তারা চলছে। জালাল ও আসাদ আবারও ২টি বৈদ্যুতিক মিটার স্থাপন করেছে। মিটারগুলো থেকে সব দোকানে অবৈধ সংযোগ দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া সুগন্ধা বায়তুল আমান জামে মসজিদের বিদ্যুৎ ব্যবহার করে সুগন্ধা পয়েন্টে পানি ছিটানোর কথা বলে প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
অবৈধ স্থাপনার জন্য আবারও শ্রীহীন হয়ে পড়েছে সুগন্ধা সৈকত। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। হয়রানি ও ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে পর্যটকেরা।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আগেও একই কথা বলে টাকা তোলা হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এবারও হয়তো সাধারণ দোকানদারদের টাকা হাতিয়ে নিতে এই অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। মূলতঃ আমাদের উচ্ছেদ করা হলে তাদের লাভ বেশি। তারা এই ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফ্রিশ ফ্রাই ব্যবসায়ী বলেন, তারা আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে রেখেছে। তাদের চাহিদা মতো টাকা না দিলে দোকান বসার সুযোগ নেই।
একাধিক ক্ষুদ্র হকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উচ্ছেদের কারণে এমনিতেই ক্ষতিগ্রস্ত আমরা। তারমধ্যে বিভিন্ন ইস্যু বানিয়ে কথিত হকার নেতারা চাঁদাবাজিতে নেমে পড়েছে। জেলা প্রশাসকের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি তদন্ত করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য।
অভিযোগের বিষয়ে চক্রটির অন্যতম হোতা গুরা মিয়া বলেন, টাকা ৫ হাজার না, ৩ হাজার করে তোলা হচ্ছে। আমাদের ব্যবসা করার সুযোগ দিন, আপনাদেরও লাভ হবে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাশেম ও হাবিব।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুগন্ধা পয়েন্টে সকালে গিয়ে রাতে চলে আসতে হবে। কোনভাবে স্থায়ী দোকান বসানো কোন সুযোগ নেই। প্রশাসনের নামে কাউকে টাকা না দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। কেউ টাকা তুললে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ মিটারও জব্দ করা হবে।