কক্সবাজার-২ আসনের ভোটের মাঠ কুতুবদিয়া ও মহেশখালীতে গত নির্বাচনে অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল থেকে লড়াই করেছেন চাচা ও ভাতিজা। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আশেক উল্লাহ রফিকের সঙ্গে তাঁর চাচা সাবেক সংসদ সদস্য আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদের মুখোমুখি লড়াইয়ের আগে যদিও অনেক হিসাব-নিকাশ রয়েছে।
বিএনপি নির্বাচনে গেলে এই আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ। আওয়ামী লীগেও মনোনয়ন পেতে পারেন অন্য কেউ।
এক দশক আগেও লবণ, চিংড়ি ও মিষ্টি পান উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল মহেশখালী। পাশের কুতুবদিয়া দ্বীপের মানুষের জীবন-জীবিকাও লবণ ও মাছ চাষকেন্দ্রিক। কিন্তু এখন পাল্টেছে মহেশখালীর দৃশ্যপট। নির্মাণাধীন মাতারবাড়ী তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, গভীর সমুদ্রবন্দর, সোনাদিয়া ইকো ট্যুরিজম পার্কসহ নানা উন্নয়নে বিশ্ব অর্থনীতিতেও নাম ছড়িয়েছে। কুতুবদিয়ায় দল ও ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বরাবরই পিছিয়ে ছিল। তবে এই উপজেলায় স্বাধীনতার এত দিন পর মানুষ বিদ্যুৎ-সংযোগ পাচ্ছেন। এ কারণে এবার ভোটারদের টানতে পারবেন বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা মহেশখালীতে সরকারের গৃহীত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা করছেন। অন্যদিকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি ভেতরে-ভেতরে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে তৎপর।
১৯৯১ সালের নির্বাচনে এমপি হন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ ইসহাক মিয়া। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাকে হারিয়ে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য হন আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ। ২০০১ সালে পুনরায় আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে হারিয়ে আলমগীর ফরিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে মনোনয়নে ছিটকে পড়েন আলমগীর ফরিদ। তাঁর পরিবর্তে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ মনোনয়ন পান। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিশিষ্ট পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিমকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সাল থেকে প্রতি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদল করা হয়।
তবে ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আশেক উল্লাহ রফিক। ২০১৮ সালে তিনি বিএনপি প্রার্থী আলমগীর ফরিদ ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদকে হারিয়ে এমপি হন।
আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে কুতুবদিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর বলেন, ‘এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অনেক যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন। তবে আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হিসেবে বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিক জনপ্রিয় এবং তিনিই এগিয়ে।’
আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী আমার আমলেই এলাকায় বেশি উন্নয়ন হয়েছে। ভোটাররা উন্নয়ন বিবেচনায় আগামী নির্বাচনেও নৌকার বিজয় অক্ষুণ্ন রাখবেন।’
পাশাপাশি এবার মনোনয়নের দৌড়ে আলোচনায় আছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, পরিবেশবিজ্ঞানী ড. আনসারুল করিম ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ওসমান গনি। তাঁরা নিয়মিত এলাকায় সামাজিক অনুষ্ঠানে আসা-যাওয়া ও কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।
বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে থাকলেও এখানে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে বলে জানান দলীয় নেতারা। এই আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, কক্সবাজার-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। দীর্ঘদিন ধরে দলে সালাহউদ্দিন ও আলমগীর ফরিদের মধ্যে দ্বন্দ্ব রয়েছে।
ভারতের মেঘালয়ে অবস্থানরত সালাহউদ্দিন আহমেদ মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বেশ জনপ্রিয়। যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে তিনি দুই উপজেলায় উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছিলেন। এ সুবাদে তাঁর অনুসারীরা এখানে তাঁকে প্রার্থী করাতে তোড়জোড় শুরু করেছেন। তিনিও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন।
কক্সবাজার জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ ইউসুফ বদরী বলেন, ‘স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা চান, সালাহউদ্দিন আহমেদ সেখানে নির্বাচন করুক। এবার সেই দাবি বেশ জোরালো হয়েছে। তিনি দেশে ফিরলেই এ বিষয়ে আরও খোলাসা হওয়া যাবে।’
তবে আলমগীর ফরিদ বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচনে গেলে আমিই এই আসনে প্রার্থী হব। ১৯৯৬ সাল থেকে এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছি। অতীতের মতো ভবিষ্যতেও ভোটাররা আমাকে নির্বাচিত করবেন।’ জামায়াতে ইসলামীর নেতা হামিদুর রহমান আজাদ এবারও প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। সুত্র: আজকের পত্রিকা