দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ৭ জানুয়ারি। হাতে আর মাত্র ১৬ দিন বাকি থাকলেও কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) ও কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে ভোটের সমীকরণ বদলে যাচ্ছে। উচ্চ আদালতের আদেশে এই দুই আসনে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত দুই নেতা। বৃহস্পতিবার ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি মাঠে ফিরেছেন তারা।
এই দুই প্রার্থী হলেন-কক্সবাজার-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাইকোর্টের আওয়ামী আইনজীবী ফোরামের নেতা ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ এবং কক্সবাজার-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর।
তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার উচ্চ আদাতের আপিল বিভাগ থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন। আদেশ মতে নির্বাচন কমিশনার প্রতীকও বরাদ্দ প্রদান করেছে। দুই জনই ঈগল প্রতীক নিয়েছেন।
এ সংক্রান্ত কাগজপত্র কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবরে পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
কক্সবাজার-৩ আসনের প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন মনোনয়নপত্র দাখিল করতেও এসেছিলেন। কিন্তু বিকাল ৫টা অতিক্রম হওয়ায় বর্তমান সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করা হয়নি।
বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে যান ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ। আদালত মনোনয়নপত্র দাখিলের জন্য আদেশ দেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় অতিবাহিত হওয়ার ১১ দিন পর গত ১২ ডিসেম্বর ব্যারিস্টার মিজান সাঈদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে ১৫ ডিসেম্বর যাচাই-বাছাইকালে কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান সমর্থন ভোটারদের এক শতাংশ স্বাক্ষরে গড়মিল ও সংশ্লিষ্ট ভোটার স্বাক্ষর প্রদানের বিষয়টি অস্বীকার করায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল করেন। এরপর মিজান সাঈদ আবারও আদালতে যান।
বৃহস্পতিবার এক আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পান তিনি।
একইভাবে কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর। তিনি ৩০ নভেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের দিন মনোনয়নপত্র জমা দেন। যাচাই-বাছাইকালে ৪ ডিসেম্বর এক শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর গড়মিল থাকার কথা বলে মনোনয়নপত্র বাতিল করেন কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান। বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে প্রতীক বরাদ্দ পান তিনি।
কক্সবাজার জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহিন ইমরান জানান, মিজান সাঈদ ও নুরুল বশরের প্রার্থিতা ও প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনার কপিটি হাতে পেয়েছেন।
কক্সবাজারের ৪টি সংসদীয় আসনের মোট প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ২৬ জন। এর মধ্যে কক্সবাজার-১ আসনে সাতজন, কক্সবাজার-২ আসনে ছয়জন, কক্সবাজার-৩ আসনে ছয়জন এবং কক্সবাজার-৪ আসনে সাতজন।
কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু-ঈদগাঁও) আসনে আগের পাঁচজন প্রার্থীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যারিস্টার মিজান সাঈদ (ঈগল)। আগের ৫ প্রার্থী হলেন-আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল (নৌকা), জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ তারেক (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন (হাতঘড়ি), ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) শামীম আহসান ভুলু (কুড়েঁঘর), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ ইব্রাহিম (টেলিভিশন)।
এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাইমুম সরওয়ার কমলের সঙ্গে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুনের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো। এখন নতুন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছেন মিজান সাঈদ। যিনি দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে নানাভাবে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে আগের ছয়জন প্রার্থীর সাথে সংযুক্ত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর (ঈগল)। আগের পাঁচজন হলেন-আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন চৌধুরী ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার) ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।
এই আসনে আওয়ামী লীগের শাহীন আক্তারের সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তবে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. নুরুল বশর প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ায় বদলে গেছে এই সমীকরণ। টেকনাফ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরের রয়েছে নিজস্ব কর্মী বাহিনী। এ ছাড়া নানা গ্রুপের কারণে পুরো ভোটের মাঠ অনেকটা বদলে গেছে।
এ ছাড়া কক্সবাজারের অপর দুটি আসনের মধ্যে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলম (ট্রাক) ও বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমের (হাতঘড়ি) মাঝে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। যেখান অপর প্রার্থীরা হলেন-ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আবু মোহাম্মদ বশিরুল আলম (হাতুড়ি), জাতীয় পার্টির হোসনে আরা (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের মোহাম্মদ বেলাল উদ্দিন (মোমবাতি), স্বতন্ত্র প্রার্থী তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী তুহিন (ঈগল) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কামরুদ্দিন আরমান (কলারছড়ি)। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী নেই।
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক (নৌকা) অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে। বিএনএম’র প্রার্থী শরীফ বাদশাহ (নোঙ্গর)-এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর। এই আসনের অন্যান্য প্রার্থীরা হলেন-ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ইউনুস (মিনার), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান (চেয়ার), বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) মোহাম্মদ খায়রুল আমীন (একতারা) ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির (এনপিপি) মাহবুবুল আলম (আম)।