জমে উঠেছে কক্সবাজার-৪ (উখিয়া - টেকনাফ) আসনের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটযুদ্ধ। নৌকার প্রার্থী শাহীন আক্তারকে ঠেকাতে জোটবদ্ধ হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের নুরুল বশরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একাংশ।
ভোটাররা বলছেন, ভোট যুদ্ধে নৌকার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঈগল। আর হেভিওয়েট এ দুই প্রার্থী একে অপরকে ঘায়েল করছেন বাক-যুদ্ধেও।
ভোটের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই উখিয়া-টেকনাফের নির্বাচনী মাঠ জুড়ে চলছে গরম হাওয়া। চূড়ান্ত লড়াইয়ে নিজেদের স্থান দখলে সরব প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন হেভিওয়েট দুই প্রার্থী নৌকা প্রতীকে শাহীন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ঈগল প্রতীকের নুরুল বশর ও তাদের সমর্থকরা। সভা-মিছিল করে পাড়া-মহল্লা চষে বেড়াচ্ছেন তারা। ভোটকে সামনে রেখে এলাকার প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লায় প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে। মাইকিং, গণসংযোগে মুখরিত পুরো উখিয়া-টেকনাফ।
নৌকা প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী শাহীন আক্তারের পক্ষে নির্বাচনী পুরো দায়িত্ব পালন করছেন তার স্বামী ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদি। আর ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর। তাই আওয়ামী লীগসহ মূল অঙ্গসংগঠনগুলো স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশরের পক্ষে কাজ করছে বলে জানা গেছে।
তারা বলছেন, গত ১৫ বছরে বদি ও তার পরিবারের কাছে অবমূল্যায়িত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নুরুল বশরের পক্ষে মাঠে রয়েছে, তাই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন নৌকার মাঝি শাহীন।
উখিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা জহির হোসেন এমএ বলেন, যিনি সংসদে কোনো কথা বলতে পারেন না। জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন না। তাকে কিভাবে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত করতে ভোট দেব। তাই এবার পরিবর্তন হিসেবে অন্য কাউকে আমরা নির্বাচিত করব।
টেকনাফের সাবরাং ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হোসাইন বলেন, নৌকা প্রার্থী শাহীন আক্তারের অবস্থান খুবই ভাল। উখিয়া-টেকনাফের প্রতিটি এলাকায় মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। আগামী ৭ জানুয়ারি নৌকা বিপুল পরিমাণ ভোটে জয়লাভ করবে বলে আশাবাদী তিনি।
টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, এমপি শাহীন আক্তার গত পাঁচ বছর উখিয়া টেকনাফের মানুষের জন্যে অনেক কিছু করেছেন। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে কাজ করেছেন তিনি।
নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শাহীন আক্তার বলেন, ৭ তারিখ জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে উচিত জবাব দিবেন। নৌকা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে বলে আমার বিশ্বাস।
শাহীন বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুবলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সভাপতি যারা বলেছিল যে, নৌকা যার আমরা তার' এটা আপনারা সকলেই জানেন। যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা দিয়েছেন তখন তারাই নৌকা যার আমরা তার বলেছিল, তারা এখন নৌকা যার আমরা তার না ঈগল যার আমরা তার এটা বলছে। সুতরাং ঈগল সকলের গোস্ত খায়। ঈগলের গোস্ত কেউ খায় না। ঈগলের গোস্ত খাওয়া হারাম। ঈগল ঈগলের গোস্ত খায়। এলাকার মানুষ এটা বুঝবে। ৭ তারিখ জবাব দেবে। যে চিল নিয়ে তারা আসছে, এ চিলের বদনাম আমরা সহ্য করতে পারছি না। এখানে এসেই দেখি বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের, আল্লাহ যে যে রকম তাকে সে রকম প্রতীক দিয়েছেন। এটাই মাথাই রাখতে হবে।
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের জন্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এই সুযোগ কোনভাবে হাত ছাড়া করা যাবে না। উখিয়া-টেকনাফের মানুষ একটি কালো চক্রের হাতে বন্দি। যারা মাদক, মানবপাচার ও অপহরণের মতো ভয়াবহ ঘটনার কারিগর হয়ে উঠেছেন। দেশব্যাপী একটি বদনামের অংশ হয়েছে। নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়েছেন আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরাও। মানুষ এটার পরিবর্তন চান। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের সাবেক বর্তমান নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন। আমি উখিয়া-টেকনাফকে মাদক-মানবপাচার ও সন্ত্রাসী মুক্ত একটি নিরাপদ এলাকা করতে চাই। জনতা আমার সঙ্গে। আমি বিজয়ী হব।
কক্সবাজার-৪ উখিয়া-টেকনাফ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন আক্তার (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুরুল বশর (ঈগল), জাতীয় পার্টির নুরুল আমিন ভুট্টো (লাঙ্গল), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ফরিদুল আলম (আম), তৃণমূল বিএনপির মুজিবুল হক মুজিব (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐক্যজোটের মোহাম্মদ ওসমান গনি চৌধুরী (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ ইসমাইল (ডাব)।
এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২৬,৯৭১ জন, পুরুষ ভোটার ১৬৭,১৪০ জন ও নারী ভোটার ১৫৯,৮২৯ জন। আর মোট কেন্দ্র ১০৪টি।