নিউজ ডেস্ক:: তারিক জামিলের বর্ণনায়- তিউনিসিয়া সফর শেষে আমি দুবাই আসলাম। দুবাই আসার পর এক ভাই বলল, ‘এখানে বীণা মালিকের বিয়ে হয়েছে।অর্ধনগ্ন পোশাকের কারণে সে অনেক সমালোচিত ও বিতর্কিত’। আমি তাকে বললাম, আমাকে বীণা মালিকের সাথে সাক্ষাৎ করাও। তারা অবাক হয়ে বলল আপনি দেখা করবেন? আমি বললাম হ্যাঁ। বীণা মালিক আমার এখানে এসে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানাল। আমি বললাম ঠিক আছে আমি নিজে গিয়েই দেখা করব যদি তিনি অনুমতি দেন। বীণা মালিক দেখা করতে রাজি হল।
আমি তার ওখানে গিয়ে বললাম, ‘বেটি (মেয়ে) শুভ বিবাহে তোমাকে অভিনন্দন। আল্লাহ তোমাকে আদর্শ ও ভাল স্ত্রী হিসাবে কবুল করুক। তোমার বিবাহে আমি আনন্দিত। আমি পত্রিকায় ও মানুষের কাছে যখন তোমার ব্যাপারে নেতিবাচক কথা শুনতাম তখন আমি তোমার জন্য দোয়া করতাম আর তোমার সাথে দেখা করারও আমার ইচ্ছা ছিল। আজ দেখা হয়েছে। শুধু এই অল্প কথায় হয়েছে তার সাথে আমার। আমি তার চোখে পানি দেখলাম। তারপর আমি উঠে চলে আসলাম। চলে গেলাম দুবাই থেকে জেবুতি।
জেবুতি থেকে ফিরে আসার পর বীণা মালিক ও তার স্বামী আমার সাথে দেখা করতে এল। বীণা মালিক বলল, ‘মাওলানা, আপনি আমার জীবনকে বদলে দিয়েছেন। আমি বললাম, বেটি আমি তো কিছুই করিনি। কোনো নসিহত, কোনো জায়েজ-নাজায়েজ নিয়ে কোনো কথায় তো হয়নি তোমার সাথে। অশ্রুসজল চোখে বীণা মালিক বললেন ‘না আপনি আমাকে মেয়ে বলে ডেকেছেন। আপনার মত আলেম আমাকে মেয়ে বলতে পারে? মা-বাবাই যেখানে মেয়ে হিসাবে গ্রহণ করছে না। আপনি আমাকে মেয়ে বলে ডেকেছেন। আমার জীবন বদলে গেছে। আমি আপনাকে কথা দিলাম যে উড়না দিয়ে আজ মাথা ঢেকে রেখেছি সেই উড়না মৃত্যুর আগে কখনও মাথা থেকে নামবে না।’
২০১৩ সালে আসাদ বাসির খানের সঙ্গে দুবাইতে বিয়ে হয় তার। তার পর থেকেই নিজেকে ফিল্মি দুনিয়া থেকে সরিয়ে নেন তিনি।
বছর দেড়েক পরে ছেলে সন্তানের জননী হন বীনা মালিক। ছেলের নাম রাখেন আব্রাম। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ফের মা ন পাকিস্তানি অভিনেত্রী বীণা মালিক। আমেরিকার ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
ওইদিন কন্যাসন্তান জন্মানোর পরেই টুইট করে তিনি জানান, ‘আমাদের দুনিয়ায় আমার ছোট্ট রাজকন্যাকে স্বাগত।’ সঙ্গে মেয়ের ছবিও পোস্ট করেন বীণা।
দু’বছরের ছেলে আব্রামের সঙ্গে মিলিয়ে বীণা মেয়ের নাম রেখেছেন আমল।
তিনি বলেছেন, ‘মেয়ে হওয়ায় আমি খুব খুশি। আব্রাম আর আমলকে নিয়ে আমার প়ৃথিবীটা পরিপূর্ণ হল।’
মেয়ে হওয়ার পর এখন মন দিয়ে সন্তানদের বড় করবেন বলেই জানিয়েছেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
সেলিব্রিটি রিয়ালিটি শো ‘বিগ বস’-এ এসে প্রথম নজর কাড়েন বীণা। এর পর বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি।
বীণা মালিক কথা রেখেছেন। সেই থেকে মাথায় উড়না ছাড়া তাকে দেখা যায়নি। তখন থেকে চলচ্চিত্রকেও বিদায় জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টা সহজ নয়। কোটি-কোটি যুবকের হার্টথ্রব ছিলেন। যশ, খ্যাতি, সম্পদ মোটকথা গ্লামার জগতের সব ছেড়ে এসেছিলেন। মিলিয়ন টাকার প্রোগ্রাম, অনেক বলিউড মুভির অফার ছেড়ে ফিরে এসেছেন নিজ ধর্ম ইসলামের পথে। বীণা মালিকের ভাষায় সেভেন স্টার হোটেলেও তার ঘুম আসত না। এত যশ, খ্যাতির পরেও তার মনে সুখ ছিলনা। ধর্ম পালনের পর সেই সুখ তিনি খোঁজে পাচ্ছেন।
আলেম-উলামারা চাইলে খ্যাতির মোহে মগ্ন গ্লামার জগতের অর্ধনগ্ন মডেলদের কাছেও দাওয়াত নিয়ে যেতে পারেন। হয়ত অনেকেই ইসলামে ফিরে আসবে। পাকিস্তানের অন্যান্য আলেম যখন তাকে পতিতা হিসাবে গণ্য করে তার ব্যাপারে বিদ্বেষ পোষণ করত, নিজের মা- বাবাও যখন তাকে স্বীকার করতে চাইত না তখন তারিক জামিল সাহেবের বেটি ডাক বীণা মালিকের জীবনটাই বদলে দিল।
বিয়ের পর বদলে গেছেন পাকিস্তানি মডেল-অভিনেত্রী বীণা মালিক। এখন তিনি সংসার ও ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করেছেন। মিডডের খবরে জানা গেছে, বিয়ের আগে স্বল্প পোশাক, বিবসনা ছবি কিংবা একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে প্রায়ই খবরের শিরোনামে থাকতেন বীণা। ২০১১ সালে তিনি ‘বিগ বস’ থেকে গ্ল্যামার দুনিয়ায় উঠে আসেন। আবেদনময়ী উপস্থিতি এবং ছবি দিয়ে স্বল্প সময়ে সবার নজর কাড়েন।
কিন্তু হুট করে ২০১৩ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুবাইয়ের ব্যবসায়ী আসাদ বাশির খান খাতাকের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন বীণা। মূলত এরপর থেকেই তিনি ক্যারিয়ারে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন। সম্প্রতি ওমরাহ পালন করেছেন বীণা। তারই ধারাবাহিকতায় অভিনয় থেকে দূরে থাকারও ঘোষণা দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ২৯ বছর বয়সী বীণা মালিক বলেন, ‘আমি এখন একজন ধার্মিক নারী। আমার আজকের অবস্থানের জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।’
সূত্রটি আরো জানিয়েছে, আগামীতে বীণা অবসর সময়টা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করবেন বলেও দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। এদিকে বীণার স্বামী আসাদ বশির খানও স্ত্রীর উচ্ছৃঙ্খল অতীতকে ভুলে তাকে ভালো মানুষ হতে সহায়তা করে যাচ্ছেন।