রাজধানীর রামপুরায় বেটার লাইফ হাসপাতালের সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয় বিক্ষোভকারীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সারা দেশে আজ ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক অবরোধ করে স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ বিক্ষোভকারীরা। এরই মধ্যে শুধু ঢাকায় ১০ জন ও মাদারীপুর ও নরসিংদীতে একজন করে নিহতের খবর পাওয়া গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভকারীরা। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর উত্তরায় পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে সংঘর্ষে ৬ জন, মোহাম্মদপুরে একজন, বাড্ডায় একজন, সাভারে একজন একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়া দেশজুড়ে বিক্ষোভে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক শ আহত হয়েছেন।
কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য এটিসি শামীম বলেন, ‘পুলিশ-ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ৪ জনের লাশ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে রয়েছে।’
উত্তরায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ৪উত্তরায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ৪
সেখানে নিহত চারজনের মধ্যে একজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনি হলেন—আইইউবিএটির (ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি) শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তানভীর (২৫)। তাঁর বাবার নাম সামসুজ্জামান এবং মায়ের নাম বীথি আক্তার।
তানভীরের খালা নার্গিস আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের ছেলের লাশ রাজউক কলেজে আছে। আমরা সেখানে যাচ্ছি।’ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরা চলে যাও। আমরা চাই না আর কোনো মায়ের বুক খালি হোক।’
উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে আরও দুজনের মরদেহ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মিজানুর রহমান।
বাড্ডা এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের সময় দুলাল মাতবর নামে একজন হাইয়েস গাড়ির চালক নিহত হন। ঘটনাস্থল থেকে তাঁকে উদ্ধার করে বনশ্রী ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
সাভারে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১ শিক্ষার্থী নিহত, আহত অর্ধশতাধিকসাভারে দফায় দফায় সংঘর্ষে ১ শিক্ষার্থী নিহত, আহত অর্ধশতাধিক
ঢাকার সাভারে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ইয়ামিন (২২) নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার বেলা ৩টার দিকে সাভারের পাকিজার মোড় এলাকায় হামলায় আহত হলে, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। রাজধানীর মিরপুরে এমআইএসটির ছাত্র ছিলেন ইয়ামিন।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে বিক্ষোভকারীদের মধ্য থেকে ফারহান ফাইয়াজ রাতুল নামের এক ছাত্র নিহত হয়েছেন। সে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর এলাকায় বিকেল সাড়ে তিনটার দিকেও থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। সেখান থেকে আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে মোহাম্মদপুর সিটি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। তার শরীরে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজ ও সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১ শিক্ষার্থী নিহত, আহত ৩০ নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ১ শিক্ষার্থী নিহত, আহত ৩০
এ ছাড়া মাদারীপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় শকুনি লেকে পড়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের ছাত্র ছিলেন। মাদারীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
যাত্রাবাড়ীতে শটগানের গুলিতে রিকশাচালক নিহতযাত্রাবাড়ীতে শটগানের গুলিতে রিকশাচালক নিহত
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোটা আন্দোলনে শটগানের গুলিতে এক যুবক নিহত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে পথচারীরা তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওই যুবক ঘটনার সময় রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিল। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩৫ বছর।
নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির সংঘর্ষে তাহমিদ ভুইয়া নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। এই আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভেলানগর-জেলখানা মোড় এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। নিহত তাহমিদ সদর উপজেলার চিনিশপুর নন্দীপাড়া এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে ও এনকেএম হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নরসিংদীর ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমান তাহমিদের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন