সকলকে বাংলা নববর্ষের শভেচ্ছা। কঠিন এক সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে আমাদের সবার জীবন। যখন মৃত্যু ভয়ে আমরা নিজেদেরকে চারদেয়ালে আবদ্ধ করে রাখতে শুরু করেছি, ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে প্রকৃতি নিজেকে তার পুরোনো রূপে মেলে ধরতে শুরু করেছে।করোনা প্রাদুর্ভাবের সাড়ে তিন মাস পূর্ণ হল আজ। এই সাড়ে তিন মাসের মাথায় এসে আজ আমরা প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাওয়া অনেক দৃশ্যই ফিরে পাচ্ছি। সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার ফিরে পেয়েছে অনেক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া লালকাকড়ার দৃশ্য, সাথে শামুক-ঝিনুক আর ডলফিনের আনাগোনা। যে ঢাকা শহরে আমরা ক’দিন আগেও দুর্গন্ধের দরূণ মনভরে নিশ্বাস নিতে পারতাম না, সেই কর্মব্যস্ত শহরেই আজ পরিচ্ছন্ন নির্মল পরিবেশ বিরাজমান। নেই যানবানের কালো ধোয়া, নেই যেখানেসেখানে পটাটো চিপসের খালি প্যাকেট কিংবা ড্রিংকসের খালি বোতল।
করোনাভাইরাসে যখন মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে, তখন প্রকৃতির নির্মল এই আবির্ভাব আমাদের কি শিক্ষা দিচ্ছে? কত নিষ্ঠুর আচরণই না আমরা করে যাচ্ছি প্রকৃতির সাথে প্রতিনিয়ত! আজ না হোক কাল, করোনার প্রাদুর্ভাব থেকে আমরা মুক্তি পাব হয়তো। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের ক্লান্তিহীন প্রচেষ্টায় প্রতিষেধকও তৈরি হবে। কিন্তু আমাদের স্বভাব কি পরিবর্তন হবে ? আমাদের অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য কি তৈরি হবে কোন প্রতিষেধ ?
আজ আমাদের এই করুণ পরিণতির জন্য আমরাই দায়ী। কেউকেউ বলবে না চীনারাই দায়ী । আমি বলবো আমরা মানুষেরাই দায়ী । সারা পৃথিবীজুড়ে যারা পরিবেশের উপর নিষ্ঠুর আচরণ করি, আমরা সবাই দায়ী। জাপানে আমার চার বছরের প্রবাসজীবনে আমি দেখেছি কিভাবে জাপনীরা তাদের দেশটাকে পরিচ্ছন্ন রেখেছে। শুধুমাত্র অভ্যাস! কেবল এটাকে পরিবর্তন করতে পারলেই সম্ভব।
আসুন, যদি বেঁচে থাকি, করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সবাই যারাযার অবস্থান থেকে সচেতন হয়ে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে সত্যিকারের বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলি।
বাড়ির চারপাশে যার যতটুকু জায়গা আছে তাতেই একটু একটু করে শাকসবজির চাষ করি। সামনে আরো খারাপ দিন আসতে পারে। বাজারে কিছু না পেলে, এগুলো দিয়েই হয়তো দিন পার করা যাবে।
জয় হোক পরিবেশের, জয় হোক মানবতার।
ঘরে থাকুন, সুস্থ থাকুন।
লেখক:
হোসাইন মাহমুদ
ইমেইল: [email protected]
পাঠকের মতামত