প্রকাশিত: ০১/০৫/২০২০ ১১:৪১ এএম
ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির
ইমাম খাইর, কক্সবাজারঃ

ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির
মহামারী করোনাভাইরাস আজ পুরো বিশ্ববাসীকে বিস্মিত করেছে। বিশ্ব মোড়ল শক্তিগুলো পর্যন্ত অসহায়। ছোট্ট একটি ভাইরাসের কাছে দূর্বল। করোনার মোকাবেলা করে করতে গিয়ে অপারগতা প্রকাশ করেছে ক্ষমতাধারীদের অনেকেই। সমাধানের উপায় ছেড়ে দিয়েছে বিশ্ব বিধাতার কাছে।
আর আমরা ক্ষুদ্র একটি দেশ। দরিদ্র এদেশের জনগণ বা সরকার কি পারবে করোনা মোকাবেলা করতে? আদৌ আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে? তথাপিও সরকারের সকল পর্যায়ের প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিরলস কাজ করছে চিকিৎসকরা। পর্যাপ্ত সাপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও থেমে নেই তারা। করোনার যুদ্ধে ইতোমধ্যে একজন চিকিৎসক মারা গেছেন।

করোনার সম্মুখযুদ্ধে কক্সবাজারের চিকিৎসকরাও রয়েছেন। প্রচন্ড ঝুঁকি জেনেও কাজ করছেন মাঠে, অফিসে, হাসপাতলে।
তার মধ্যে একজন মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির। যিনি কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক (ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ)।
কক্সবাজারে প্রথম শনাক্ত হওয়া মহিলা করোনা রোগির চিকিৎসা করে তাকে নিজেকেই ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হয়েছে। তবু থেমে যাননি এই যোদ্ধা। প্রতিনিয়ত টেলিমেডিসিন সেবা দিচ্ছেন। কোয়ারেন্টাইন পালন শেষে যথারীতি ডিউটি করছেন হাসপাতলে। জনসচেতনতা তৈরি করতে সোশ্যাল মিডিয়াতেও লিখছেন।
#ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজিরের ফেসবুক টাইমলাইনে সর্বশেষ প্রকাশিত স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

কক্সবাজারে মহেশখালী, কুতুবদিয়া ছাড়া বাকী সব উপজেলা এখন খুবই ঝুঁকিপুর্ণ।কক্সবাজার শহর টা মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
বাংলাদেশে ২৫০ এর বেশী ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানি। প্রতি কোম্পানির একটি করে গাড়িও কক্সবাজারে আসলে কমপক্ষে ২৫০ গাড়ির ড্রাইভার আসছে। অন্যান্য খাদ্য সামগ্রীর বা রোহিঙ্গাদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের গাড়ির কথা বাদই দিলাম। তারা ২ দিনের বেশী স্ট্যা করলে অবশ্যই পরীক্ষার আনতে হবে। তাদের কোম্পানির নিজস্ব পরিবেশে কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে হবে।
যেকোন প্রকারেই হোক আমাদের করোনা পরীক্ষার পরিমাণ ও ফলাফল প্রাপ্তির গতি আরো বাড়াতে হবে। জেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে কাজে লাগিয়ে উপসর্গযুক্ত রোগী বা বহিরাগত যে কাউকে ব্যাপক ভিত্তিক পরীক্ষার আওতায় নিয়ে আসতে হবে এবং সনাক্ত হওয়া রোগীদের পৃথক করে সুচিকিৎসা নিশ্চিত নিতে হবে।

যেসকল করোনার ক্লাষ্টার ক্রমবর্ধমান সেসকল এলাকায় যেমন- রামুর কাউয়ারখুব, খুরুশকুল, কক্সবাজার শহর এলাকা দ্রুততম সময়ের মধ্যে যথাযথ লক ডাউন বলবৎ করে সংক্রমণকে পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
লবন বা অন্যান্য কলকারখানা আরও ১ মাস বন্ধ রাখা উচিৎ। সম্ভব না হলে কতৃর্পক্ষের উচিৎ, প্রত্যেক শ্রমিকের করোনা পরীক্ষা করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কোয়ারনটাইন নীতিমালা অনুযায়ী কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করা।

সকল মার্কেট ও দোকানপাট আরো ১ মাস বন্ধ রাখা উচিৎ। অপারগতায়, কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মার্কেট কতৃপক্ষকে নিরাপদ পরিবেশ বজায় রাখার দায়িত্ব নিতে হবে।
স্কুল ও কলেজ সম্পূর্ণ করোনামুক্ত পরিবেশে খুলতে হবে।

সেম্পল কালেকশন প্রক্রিয়ায় একটি প্রতিবন্ধকতা হলো, সোয়াবষ্টিক ও টেস্টটিউবের অপর্যাপ্ততা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত ঢাকা হতে আনইন্টারেপ্টেড এগুলোর সরবরাহ নিশ্চিত করা।
চিকিৎসকদের জন্য উন্নত চিকিৎসা, নিরাপদ কোয়ারেনটাইনস্থল, উন্নত মানের আহার, যাতায়াত ব্যবস্থা ও ঝুঁকি ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কর্মস্থলে অসন্তোষ বিরাজ করবে যা কখনো কোভিড হসপিটালে কাম্য হতে পারে না।
গবেষণায় দেখা গেছে, জুতার তলার মাধ্যমে এই ভাইরাসটি হাসপাতাল হতে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই ক্লোরিন পানি দিয়ে জুতার তলা ধুয়ে বাসায় প্রবেশ করতে হবে। সারাদিন হেক্সিসল ব্যবহার না করে ঘনঘন সাবান দিয়ে হাত ধোয়া বেশী কার্যকর। তাই বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

সর্বাবস্থায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে ও জনসমাগমস্থল পরিহার করতে হবে।
কোন অবস্থাতেই করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা উচিত নয়। শতকরা ৯৫ ভাগ রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, প্রয়োজন হলে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা গ্ৰহন করতে হবে।
# বর্তমানে সরকার তার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ১০০ ভাগ করোনা নিয়ন্ত্রনে নিয়োজিত করেছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তা সকলের মাথায় রেখে সহিষ্ণুতা পরিহার করতে হবে।
বিশ্বের অনেক উন্নতদেশ সম্পূর্ণভাবে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যর্থ হয়েছে। ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধ করা সম্ভব না হলে আমরা কেউই রক্ষা পাব না। এই কথাটা চিন্তা করে বিভেদ বৈষম্য ও

ইগো ত্যাগ করে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দূর্যোগ মোকাবেলায় হাতে হাত রেখে কাজ করে যেতে হব।
#আল্লাহ আমাদের সহায় হোন,
ডাঃ মোহাম্মদ শাহজাহান নাজির।

পাঠকের মতামত

আসলে কি বয়কট করছি!

আমরা বাঙালি নতুন ইস্যু পেলে দৌড়ে তা দেখার জন্য উৎকণ্ঠা প্রকাশ করি। আজ বয়কট নিয়ে ...