উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমারে সহিংসতার শিকার হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা এবং আশপাশের বাসিন্দাদের মধ্যে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছে সরকার। ঝুঁকিপূর্ণ এই সংক্রামক রোগের প্রার্দুভাব ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় টিকা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
দুই রাউন্ডে টিকা কার্যক্রম চলবে। ১০ অক্টোবর থেকে শুরু হবে প্রথম রাউন্ডের টিকা খাওয়ানো। এজন্য জাতিসংঘের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ৯ লাখ কলেরার ভ্যাকসিন বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। রোববার (০৮ অক্টোবর) সেগুলো বিমানযোগে কক্সবাজারে এসে পৌঁছেছে।
রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবার জন্য কক্সবাজারে অবস্থানকারী চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা.আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৮ হাজার ৪৯২ জন ডায়রিয়া ও অতি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। ৬ হাজার ৬২৬ জন আমাশয়ে ভুগছে। এখন পর্যন্ত কলেরা রোগী পাওয়া না গেলেও প্রায় ২৫ হাজার রোহিঙ্গা ঝুঁকিপূর্ণ ডায়রিয়া-আমাশয়ে ভুগছে।
‘যেহেতু অনেক ডায়রিয়া ও আমাশয়ের রোগী পাওয়া গেছে, এতে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার যথেষ্ঠ সম্ভাবনা আছে। সেজন্য আমরা কলেরা ভ্যাকসিন খাওয়ানো শুরু করছি। এতে রোহিঙ্গারা ১২ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে। ’
সম্প্রতি ইয়েমেনে আকস্মিকভাবে কলেরা ছড়িয়ে পড়ার পর ৬ লাখ মানুষ মারা গেছে জানিয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন বলেন, ইয়েমেনের মতো কোন পরিস্থিতি যাতে বাংলাদেশে সৃষ্টি হতে না পারে, সেজন্য সরকার আগাম সতর্কতা হিসেবে কলেরাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সকালে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক কক্সবাজারে কলেরার টিকা কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা.আবুল কালাম আজাদও তার সঙ্গে থাকবেন।
সূত্রমতে, ১০ অক্টোবর থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত সাতদিন প্রথম রাউন্ডের টিকা কার্যক্রম চলবে। এইসময়ের মধ্যে এক বছরের বেশি বয়সী সকলকে কলেরা ভ্যাকসিন খাওয়ানো হবে এক ফোঁটা করে।
৩১ অক্টোবর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে দ্বিতীয় রাউন্ডের টিকা কার্যক্রম। এই ছয়দিন এক বছর থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের কলেরার টিকা খাওয়ানো হবে।
কক্সবাজার জেলার উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ছাড়াও ৪০ টি কেন্দ্রে একযোগে চলবে কলেরার ভ্যাকসিন খাওয়ানোর কার্যক্রম। ভ্যাকসিন খাওয়ানোর পর এক গ্লাস বিশুদ্ধ পানি খাওয়ানো হবে।
টিকা কার্যক্রমের জন্য প্রতিটি কেন্দ্রে পাঁচজন স্বাস্থ্যকর্মীর সমন্বয়ে একটি করে টিম গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দুজন টিকা খাওয়াবেন। একজন টিকা খাওয়ানোর পর রোগীকে শনাক্তকরণ চিহ্ন দেবেন। একজন লাইনে দাঁড় করাবেন এবং আরেকজন ক্যাম্পে গিয়ে রোহিঙ্গাদের ডেকে আনবেন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা.আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, নতুন আসা রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি আশপাশের এলাকায় বসবাসকারী সকলেই কলেরার ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দা ও পুরনো রোহিঙ্গাসহ ৯ লাখ লোককে কলেরার টিকা খাওয়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারে বাস্তূচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করেন। লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের পর যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে অনেকেই ডায়রিয়া-আমাশয়ে ভুগছেন।
ডায়রিয়া ও অতি ডায়রিয়ার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে আইসিডিডিআরবি উখিয়া ও টেকনাফে চারটি কেন্দ্র খুলেছে।