কাজের সন্ধানে উন্নত জীবনের আশায় ক্যাম্প ছাড়তে শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা। তাদের ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরইমধ্যে যৌথ অভিযান শুরু করেছে জেলা পুলিশ ও আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন)।
গত (১৯ সেপ্টেম্বর) অভিযানে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালিয়ে আটক করা হয়েছে ২৬১ জন রোহিঙ্গাকে। যাদের অধিকাংশের গন্তব্য ছিল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম।
সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের উখিয়া ডিগ্রী কলেজের সামনে স্থাপন করা হয়েছে চেকপোস্ট। তল্লাশি করা হচ্ছে প্রতিটি যানবাহন। যাত্রীদের পরিচয় পাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে অধিকাংশই রোহিঙ্গা।
যাচাই-বাছাই শেষে যানবাহন থেকে রোহিঙ্গাদের নামানো হচ্ছে সারিবদ্ধভাবে। জড়ো করা হচ্ছে চেকপোস্টের সামনে। বেশির ভাগ রোহিঙ্গার কাঁধে রয়েছে ব্যাগ। কাজের সন্ধানে অধিকাংশের গন্তব্যে ছিল কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম।
টেকনাফ থেকে কক্সবাজারগামী যাত্রীবাহী বাস থেকে নামানো রোহিঙ্গা রহিম ( ছদ্মনাম) বলেন, ‘চট্টগ্রামের দোহাজারি যাচ্ছিলাম। ওইখানে ক্ষেত-খামারে কাজ করি। এর আগেও দোহাজারি কয়েকবার গিয়েছি কাজ করতে। কিন্তু এবার ক্যাম্প থেকে দোহাজারি যাওয়ার পথে প্রশাসন ধরে ফেলেছে।’
আরেক রোহিঙ্গা ফোরকান( ছদ্মনাম) বলেন, ‘ক্যাম্পে বসবাস করি। কিন্তু দিন দিন ত্রাণ সহায়তা কমছে। যার কারণে চলতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাই কাজের সন্ধানে ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পুলিশের হাতে আটক হয়ে গেলাম।’
আরেক রোহিঙ্গা ছলিমুল্লাহ ( ছদ্মনাম) বলেন, ‘ক্যাম্প থেকে বের হয়ে রাস্তায় দাঁড়াই। তারপর ৬০ টাকা ভাড়ায় কক্সবাজারে যাওয়ার জন্য বাসে উঠি। এরপর কক্সবাজার থেকে নেমে আবার পটিয়া যেতাম। ওখানে শ্রমিকের কাজ করি।’
উখিয়া ডিগ্রী কলেজ এলাকার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, সেনাবাহিনীর চেকপোস্ট সরিয়ে নেয়ার পর অবাধে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে উখিয়া, কোটবাজার, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামে চলে যেত। কিন্তু ডিগ্রী কলেজের সামনে আবার চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়, এখন কিছুটা হলেও রোহিঙ্গাদের অবাধে ছড়িয়ে পড়া বন্ধ হবে।
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা রাশেদ চৌধুরী বলেন, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশীর কারণে দুর্ভোগ হচ্ছে। কিন্তু তারপরও এটা ভাল হচ্ছে। আমরা চাই, রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরে না যাওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকুক।
যৌথ অভিযানে ছিল কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও এপিবিএন। এখন থেকে প্রতিনিয়ত চেকপোস্ট বসিয়ে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
উখিয়াস্থ ৮ এপিবিএনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উক্য সিং বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে পালাতে রোহিঙ্গারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। বিশেষ করে যাত্রীবাহী বাস, সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক যোগে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামগামী হচ্ছে রোহিঙ্গারা। তাই চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ ও এপিবিএনের যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। এই অভিযান প্রতিদিনই অব্যাহত থাকবে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, অভিযান চালিয়ে যানবাহনে তল্লাশী করে ২৬১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। নাম ও ঠিকানা লিপিবদ্ধ করে পুনরায় তাদের স্ব-স্ব ক্যাম্পের ইনচার্জদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
উখিয়াস্থ ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক মো. আমির জাফর বলেন, উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবির থেকে রোহিঙ্গারা বাইরে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এসব চেকপোস্টে মঙ্গলবার অভিযান চালিয়ে ২৬১ জন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি রোহিঙ্গারা যাতে ক্যাম্প ছেড়ে কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামে যেতে না পারে।
পাঠকের মতামত