আজকের একটা ঘটনা বলি। ধরা যাক ভদ্রলোকের নাম ইউসুফ। শুধু ইউসুফ, আগে পিছে কিছু নেই। তো এতো কাল ভদ্রলোক এই একটা নাম নিয়েই খুশি ছিলেন, কিন্তু সম্প্রতি তার ইচ্ছা হয়েছে পাসপোর্টে একটা পদবী যোগ করবেন। অনেক ভেবেচিন্তে তিনি একটা পদবী ঠিক করেছেন, আর দূতাবাসকে চাপ দিচ্ছেন তাকে নতুন নামে নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে। তা তার নতুন পদবীটা কি ? তা হচ্ছে ‘বেগম’!
এ প্রসঙ্গে আরেকটা ঘটনা পড়ে গেলো। সম্ভবত ২০০০ সাল, আমি তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমেরিকা সেকশনের সহকারী সচিব। একটা বাংলাদেশি পরিবার ডিভি পেয়ে আমেরিকা যাচ্ছে। পরিবারের সবাই ভিসা পেয়েছে, পায়নি শুধু একটি মেয়ে। মার্কিন দূতাবাস কিছুতেই তাকে ভিসা দেবে না , কারণ মেয়েটির বয়স বারো, আর নাম হলো “মিসেস লিপি আক্তার” (আমরা পরিবারটিকে সাহায্য করেছিলাম।।
ওই একই সময়ের ঘটনা। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশে আসবেন, সাথে আসবেন তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী । এ সময় মন্ত্রণালয়ে পত্রাকারে বিশাল একখানা কবিতা এসে পৌঁছলো, কবিতাখানা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে পৌঁছে দেওয়ার দাবীসহ। কবিতাটার একটা লাইন এখনো মনে আছে — “হে মহান নারী মেডেলিন অলব্রাইট, তোমার সবকিছু ভালো, সবকিছু যে ব্রাইট”! বলাই বাহুল্য, এতো কাজের চাপের মধ্যে প্রচুর আনন্দ দিলেও কবিতাটি শেষাবধি তার ডেস্টিনেশনে পৌঁছতে পারেনি।
আমি তখন সুইডেনে। একদল নারী জানালেন, তারা বিদেশের মাটিতে শাড়ি পড়তে পারেন না, কারণ স্কান্ডিনেভিয়ায় তাদের ব্লাউজ বানানোর দর্জি নেই। তাদের দাবী হলো, তারা তাদের ব্লাউজ পিস গুলো দূতাবাসে জমা দেবেন, এবং দূতাবাস কূটনৈতিক থলে যোগে সেই কাপড় ঢাকায় দর্জির কাছে পাঠাবে। ব্লাউজ তৈরি হলে দর্জি সেগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেবে, মন্ত্রণালয় সেগুলো আবার কূটনৈতিক থলের মাধ্যমে দূতাবাসে পাঠালে দূতাবাস ফাইনাল ডেলিভারি দেবে। কেন দূতাবাস এই সার্ভিস দেবে ? কারণ বিদেশের মাটিতে দেশের সংস্কৃতি তুলে ধরা যে দূতাবাসের কাজ! অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত।
লেখক: ম্যানিলায় নিযুক্ত বাংলাদেশি দূতাবাসের মিনিস্টার
পাঠকের মতামত