ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৫/০৭/২০২৪ ৬:৩৩ পিএম

দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। চলমান কারফিউ আরও শিথিল করেছে সরকার। চালু হয়েছে সব সরকারি-বেসরকারি অফিস। বুধবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিসগুলোর সার্বিক কার্যক্রম চলে। এদিন সকাল থেকে রাজধানীর কোথাও কোনো সংঘাত-সহিংসতা ছিল না। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক দেখা গেছে। সড়কে যানবাহন আগের চেয়ে বেড়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল আগের মতোই আছে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে। মহাসড়কগুলোতে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে।

রাজধানীর ঢাকার পথেঘাটে তীব্র যানজটও দেখা গেছে। যানজটের কারণে অনেক এলাকার সড়ক অনেকটা স্থবির হয়ে পড়ে। সীমিত পরিসরে বিপণিবিতান ও দোকানপাট খুলেছে। পোশাক কারখানায় চালু হওয়ায় কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে। শেয়ারবাজাসহ বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু শাখায় লেনদেন হয়েছে। ফলে জমা-উত্তোলনের কাউন্টারে কিছু গ্রাহক থাকলেও বাকিগুলো ছিল অনেকটাই ফাঁকা। পে-অর্ডার, ঋণপত্র (এলসি) খুলতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়েন অনেক গ্রাহক।

ট্রেন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও আজ বৃহস্পতিবার থেকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। জানা গেছে, কারফিউ শিথিল অবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে স্বল্প দূরত্বে কিছু যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। ট্রেন চলাচলের এই সময় হবে ৫ ঘণ্টা। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-গাজীপুর এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল পথের কমিউটার ট্রেনগুলো চলাচল করবে। যদিও সচিবালয়সহ সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে উপস্থিতি ছিল কম। তবে সবকিছু কারফিউ শিথিল হওয়ায় এবং সীমিত পরিসরে চালু জনমনে স্বস্তি ফিরেছে বলেও জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু ব্যবসায়ীরা।

এদিকে কিছু কিছু এলাকায় মঙ্গলবার থেকেই পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও বুধবার থেকে সারা দেশে বাসা-বাড়িতে ইন্টারনেট চালু হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক।

আজ বৃহস্পতিবার কারফিউ বহাল থাকবে। তবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কারফিউ তুলে দিতে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বুধবার সচিবালয়ে সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসতায় নিহত পুলিশ ও আনসার সদস্যদের পরিবারের কাছে সহায়তার চেক প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা জানান।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন, শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি এই মুহূর্তে বিবেচনা করা হবে না। সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। গত সপ্তাহে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এ পরিস্থিতিতে কারফিউ জারি করা হয়। গত ১৯ জুলাই দিনগত রাত ১২টা থেকে বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতায় মাঠে নামে সেনাবাহিনী। বন্ধ হয়ে যায় দেশের স্বাভাবিক গতিশীল কার্যক্রম। তারপরে আবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। যদিও প্রথম দিন ২ ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ চলে। পরদিন ৩ ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। তবে টানা ৩ দিন সাধারণ ছুটির পর গতকাল বুধবার থেকে চালু হয় সরকারি-বেসরকারি সব অফিস। এদিন বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিসগুলোর সার্বিক কার্যক্রম চলে। তবে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীতে আজ বৃহস্পতিবার কারফিউ বহাল থাকবে। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ৭ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। এ ছাড়া বাকি জেলাগুলোতে সিদ্ধান্ত নেবে জেলা প্রশাসন।

এর আগে চলমান নাশকতা ও সহিংসতার কারণে গত রোববার ও সোমবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে মঙ্গলবারও সরকারি-বেসরকারি সব অফিস বন্ধ ছিল। সরকারের নির্বাহী বিভাগের আদেশে সারা দেশে সাধারণ ছুটি আর বাড়ানো হয়নি। টানা ৩ দিন সাধারণ ছুটির পর বুধবার থেকে চালু হয় সরকারি-বেসরকারি সব অফিস। এদিন বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত অফিসগুলোর সার্বিক কার্যক্রম চলে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সড়কে যানবাহন আগের চেয়ে বেড়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল আগের মতোই আছে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে। বুধবার সকাল ১০টা থেকে অফিস যাওয়ার তাড়া শুরু হয়ে যায়। সকালের দিকে রাজধানী ঢাকার পথেঘাটে বেশ যানজটও দেখা গেছে। এদিকে কিছু কিছু শপিং মল, দোকানপাটও খুলেছে। টার্মিনালগুলোতে থেকে বাস ছেড়ে যেতেও দেখা গেছে। তবে তুলনামূলক যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম ছিল।

বুধবার রাজধানীর সায়েদাবাদ, মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, কল্যাণপুর, বনানী, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে অন্যান্য দিনের তুলনায় গাড়ির চাপ বেশি। কোথাও কোথাও প্রচণ্ড যানজট। যানজটে ঢাকার রাস্তায় এক রকম স্থবির। আবার পর্যাপ্ত গণপরিবহন না পাওয়ায় এবং যানজটের কারণে অফিসগামীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে। অনেক বাসস্ট্যান্ডে শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কিন্তু বাসের সংখ্যা কম ছিল। সিএনজিচালিত অটোরিকশা যা আসছে, ফাঁকা নেই।

রাজধানীর বেইলি রোডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার দোকানপাট খুলেছে। তবে লোক সমাগম নেই বললেই চলে। বিশেষ করে ব্র্যান্ডের পোশাকের দোকানগুলো খুলতে দেখা গেছে। এসব শোরুমের কর্মীরা জানান, কারফিউ শিথিল করায় কয়েক ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবুও মনের মধ্যে এক ধরনের স্বস্তি কাজ করছে।

অ্যাস্ট্রোরিয়নের ম্যানেজার মিথিলা দত্ত বলেন, গত কয়েক দিন ধরে তো শোরুম খোলার পরিস্থিতি ছিল না। আজ বেশি সময় ধরে কারফিউ শিথিল থাকায় অনেকটা রিস্ক নিয়ে খুলেছি। ইয়ালোর কর্মী সোহাগ বলেন, কারফিউ শিথিল হওয়ায় শোরুম খুলতে হয়েছে।

ব্যবসায়ীরা বলেন, ৫টার পর আবার বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। তারা বলেন, একদিকে কম সময়ের জন্য দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। সাধারণত ক্রেতারা বিকালেই কেনাকাটা করতে এসে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে বিকাল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

জানা গেছে, গাবতলী থেকে উত্তরবঙ্গের দিকে, মহাখালী থেকে জামালপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট রুটের কিছু বাস এবং সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে কিছু বাস দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের দিকে ছেড়ে গেছে। তবে এসব বাসে যাত্রী সংখ্যা কম ছিল।

যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কেউ চিকিৎসা নিতে, কেউ আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে, কেউ বা ব্যক্তিগত কাজে ঢাকায় এসেছিলেন। কিন্তু তারা সবাই কারফিউতে ঢাকায় আটকা পড়েন। অবশেষ আজ সকাল থেকে তারা নিজ গন্তব্যে রওনা হতে পারছেন। তবে এই যাত্রায় তারা অনেকটা ভীত।

সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। বুধবার সকাল থেকে এসব বাস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যাচ্ছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় যাত্রী মুক্তাদিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে একটা কাজে ঢাকায় এসে আটকা পড়েছেন। আজ বাস চালু হওয়ায় এখন যাচ্ছেন। তিনি জানালেন, এই কয়েক দিন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়ি যেতে পারেননি।

হানিফ বাস কাউন্টারের আবদুল্লাহ বলেন, সকাল ৯টা থেকে বাস ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের ৩টি বাস ছেড়ে গেছে। তার মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গেছে দুটি আর ঢাকা থেকে বরিশালে গেছে একটি বাস। বিকাল ৫টা পর্যন্ত বাস চলবে।

কুমিল্লার লাকসামগামী তিশা পরিবহনের সুপারভাইজর মো. শান্ত বলেন, সকাল ৬টা থেকে বাস চলছে। চলবে ৫টা পর্যন্ত। তবে যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, কারফিউর মধ্যে বাজারে আসেননি অনেকে। তারা মোবাইলেও লেনদেন করতে পারেননি। রাত থেকে মোবাইল ডাটা সচল হবে আশা করছি। তখন শেয়ার কেনা-বেচা বাড়বে।

এদিকে কারফিউ শিথিল অবস্থায় বৃহস্পতিবার থেকে স্বল্প দূরত্বে কিছু যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে। ট্রেন চলাচলের এই সময় হবে ৫ ঘণ্টা। আগামীকাল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-গাজীপুর এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল পথের কমিউটার ট্রেনগুলো চলাচল করবে। এর বাইরে তিতাস কমিউটার ট্রেন ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে চলাচল করবে। ট্রেনটি সকাল সোয়া ১০টায় কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ছাড়বে আর দুপুর ১টা ৫ মিনিটে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফিরতি যাত্রা শুরু করবে।

কারফিউ শিথিল থাকার মধ্যে ৬ ঘণ্টায় যাওয়া আসা সম্ভব-এমন গন্তব্যেই ছুটবে কমিউটার ট্রেন ট্রেনগুলো। আন্তঃনগর ট্রেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় নেবে রেলওয়ে।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব হুমায়ুন কবির বলেন, প্রাথমিকভাবে ঢাকা থেকে কাছাকাছি দূরত্বে ট্রেন চলবে। দূরপাল্লার ট্রেন চালুর বিষয়ে বৃহস্পতিবার বৈঠক হবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতা রোধে চলমান কারফিউ দ্রুত তুলে নেওয়া হবে এবং এ নিয়ে সরকার কাজ করছে। বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামায়াত-বিএনপি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে কোটা আন্দোলন নিয়ে সহিংসতায় জড়িয়েছে। আমরা কারফিউ দিতে বাধ্য হয়েছি। সেনাবাহিনীকে ডাকতে হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করছি দুই-চার দিনের মধ্যে সব নিয়ন্ত্রণে আসবে। কারণ এ পরিস্থিতি দেশের মানুষ পছন্দ করে না।

তিনি বলেন, এখন কারফিউ শিথিল। কারফিউ রাখতে চাই না। থানা আক্রমণ করছে, পুলিশ মেরে ফেলছে, কেপিআইগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে। পুলিশ, র‌্যাব, আনসার, বিজিবি দায়িত্ব পালন করতে গেলে তাদের হত্যা করা হচ্ছে। সেজন্য আমরা বাধ্য হয়ে সান্ধ্য আইন বা কারফিউ জারি করেছি।

পাঠকের মতামত

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে ঢুকতে বিধিনিষেধ

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে বিধিনিষেধসহ ১০টি নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি ও বেসরকারি ...

আমাদের নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন: সিইসি

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ...