আজকের পত্রিকা
আলোচিত ও বহিষ্কৃত যুবলীগ নেত্রী শামিমা নূর পাপিয়া একাধিক মামলায় বর্তমানে কাশিমপুর মহিলা কারাগারে বন্দী। সেখানেও তিনি নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। এ বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এক নারী বন্দীর স্বজন।
নানা অপকর্ম প্রকাশ পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি দেশ থেকে পালানোর সময় বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার হন পাপিয়া। পরে যুবলীগ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে রাখা হয়েছে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারা কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, কারা অভ্যন্তরে পাপিয়া অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। সেখানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গড়ে তুলেছেন অনুগত বাহিনী। কারাগারে বন্দী অন্য নারীদের ওপর চালানো হয় নির্যাতন, ছিনিয়ে নেওয়া হয় টাকাপয়সা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। এ কাজে কয়েকজন কারারক্ষী এবং নারী বন্দী তাঁকে সহযোগিতা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি কারাগারে বন্দী এক নারীকে নির্যাতন নিয়ে তাঁর স্বজনদের দেওয়া লিখিত অভিযোগের মাধ্যমে বেরিয়ে এসেছে রোমহর্ষক ঘটনা। ভুক্তভোগী ওই বন্দীর ভাই গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিতভাবে সেই ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরে প্রতিকার চেয়েছেন।
মহিলা কারাগারের জেল সুপার ওবায়দুর রহমান নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া জড়িত বন্দীদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। দুজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার বন্দী নারী (৩৮) গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি ঢাকার কোতোয়ালি থানায় ১৫ জুন হওয়া একটি মামলায় বন্দী হিসেবে ১৬ জুন থেকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। ওই বন্দীর ভাই গতকাল রোববার গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে তাঁর বোনের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ দিয়ে বিচার চেয়েছেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২২ জুন সকাল ১০টায় বোনের সঙ্গে কারাগারে দেখা করতে যান। বোনের নাম-ঠিকানা নেওয়ার তিন ঘণ্টা পর সাক্ষাতের টিকিট কাউন্টার থেকে জানানো হয়, ‘ডিও নাই, দেখা করা যাবে না।’ তারপরও তিনি অপেক্ষা করতে থাকেন। পরে জামিনে বের হয়ে আসা লোকজনের কাছে তাঁর বোন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাঁরা জানান, বোনকে পিটিয়ে মারাত্মক আহত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে।
দেখা করতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান। পরদিন আবার কারাগারে বোনের সঙ্গে দেখা করতে যান। তখন কৌশলে জানতে পারেন, তাঁর বোনের কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। ১৮ জুন সেই টাকা কেড়ে নিতে মেট্রন ফাতেমা ও নাসিমা এবং কয়েদি যুবলীগ নেত্রী পাপিয়া, তাঁর সহযোগী সোনালী, আনন্দিকা, অবন্তিকা ও নাজমা তাঁর বোনকে সিসি ক্যামেরা নেই এমন স্থানে নিয়ে বেধড়ক মারধর করেন। এতে তাঁর বোন প্রস্রাব-পায়খানা করে দেন, রক্ত বমি করেন এবং একপর্যায়ে জ্ঞান হারান। জ্ঞান ফিরলে আরও কয়েকবার পেটানো হয়।
অভিযোগে বলা হয়, তাঁর বিশ্বাস, জেলের ভেতরে তাঁর বোনকে মারধর করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছে। এমনকি তাঁকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি কারা কর্তৃপক্ষ জানার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাঁর বোন বেঁচে থাকলে তাঁর সঙ্গে দেখা করানোর ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন তিনি।
ভুক্তভোগী ওই নারী বন্দীর ভাই দাবি করেন, পাপিয়া কারাগারে অপরাধ সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। কারাগারের কয়েকজন তাঁর সব অপকর্মে সহায়তা দিচ্ছেন। বন্দীরা তাঁদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ কিছুই করছে না।
তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. ওবায়দুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই নারী গোপনে ৭ হাজার ৪০০ টাকা নিয়ে কারাগারে আসেন। বিষয়টি পরদিন তদন্ত করে পাওয়া যায়। টাকার বিষয়ে কারাগারের মেট্রন জানতে চাইলে তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এ নিয়ে কয়েকজন কয়েদি তাঁকে চড়থাপ্পড় মারেন। পরে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তাঁকে যারা চড়থাপ্পড় মেরেছিল তাঁদের কারাবিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’
ওবায়দুর রহমান আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে জেল সুপার ফারহানা আক্তারকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সার্জেন্ট ইন্সপেক্টর শাহনুর ও ফারজানা। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া মেট্রন ফাতেমা ও নাসিমাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক মো. আনিসুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, লিখিত অভিযোগটি তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবিরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে সে অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।