ঢাকা : রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। কিন্তু খুশির বার্তা নিয়ে আসা এ ঈদ বিএনপির অনেক নেতার কাছেই বিষাদে পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে যারা কারাগারে রয়েছেন। তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় কারাগারে ঈদ করা বিএনপির নেতাদের সংখ্যা এবার কিছুটা কম।
নেতারা কারাগারে থাকলেও ঈদে তাদের স্মরণ করছে বিএনপি। কারাগারে থাকা নেতাকর্মী কিংবা তাদের পরিবারের কাছে দলের পক্ষ থেকে পৌঁছে দেয়া হয়েছে ঈদ উপহার। বিএনপি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু ও সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বেশ কয়েক বছর ধরেই কারাবন্দিদের সঙ্গে ঈদ করছেন। দলের যুগ্ম-মহাসচিব আসলাম চৌধুরী, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র অধ্যাপক আবুদল মান্নান, সিলেটের বরখাস্তকৃত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবসহ তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীও এবার কারাগারে ঈদ করবেন।
বিএনপির অনেক নেতা এবার বিদেশেও ঈদ করবেন। তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইংল্যান্ড ও ভারতে রয়েছেন।
খালেদা জিয়াকে ছাড়া এবারো বিদেশ বিভুঁইয়ে ঈদ করছেন তার বড় ছেলে তারেক রহমান। প্রায় আট বছর ধরে স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান এবং একমাত্র মেয়ে জাইমা রহমানকে নিয়ে ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে ঘরোয়া পরিবেশে এভাবেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন তিনি। তবে গত ঈদুল আজহা এক সঙ্গে উদযাপন করেছেন।
বুধবার স্থানীয় সময় সকালের দিকে লন্ডনের কিং স্টোন মসজিদে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন তারেক রহমান। তারপর তিনি বাসায় স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মী ও বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করে। বাংলামেইলকে এমনটাই জানিয়েছেন তারেক রহমানের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত লন্ডন বিএনপির এক নেতা। তবে তিনি নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, ২০১৪ সালের প্রথম দিকে চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা অবস্থাতেই ওই বছরের ১৯ জুলাই ঢাকা মহানগর বিএনপির ৫৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাবেক আহ্বায়ক খোকাকে নতুন কমিটিতে উপদেষ্টা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে চিকিৎসাধীন খোকা এবারো সেখানে ঈদ করছেন।
এছাড়া ভারতে ঈদ করতে হচ্ছে বিএনপির সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদকে। ২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরার একটি বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ বিএনপির এ নেতাকে ‘ধরে নিয়ে যায়’ বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। এক পর্যায়ে ওই বছরের মে মাসে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলংয়ে তার সন্ধান পাওয়া যায়। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে শিলং পুলিশের মামলা বিচারাধীন থাকায় তিনি দেশে আসতে পারছেন না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক এবং অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালামও বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। ফলে তাদেরকেও সেখানেই ঈদ করতে হচ্ছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ উঠার পরপরই ওসমান ফারুক দেশ ছাড়েন বলে জানা যায়।
ফেরারি হিসেবে ঈদ :
বিএনপির বিগত আন্দোলনের (দেশব্যাপী অনির্দিষ্টকালের অবরোধ) সময় থেকেই আত্মগোপনে চলে যান দলটির সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব বরকত উল্লাহ বুলু। আন্দোলন চলাকালে ‘মুখপাত্র’ সালাহউদ্দিন আহমেদ ‘নিখোঁজ’ হলে তিনি কিছুদিন দলের ‘মুখপাত্র’র দায়িত্ব পালন করেন।
জানা যায়, আত্মগোপনে থাকলেও বুলু কয়েকবার আদালতে আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশে সে অবস্থান থেকে সরে যান তিনি। শেষপর্যন্ত আর আত্মসমর্পণ করেননি তিনি। বুলুর বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় পরোয়ানা থাকায় ফেরারি হিসেবে এবার ঈদ করবেন তিনি।
অন্যদিকে, বিএনপির বিগত আন্দোলনে নাশকতার বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। তবে তিনি দেশে আছেন না বিদেশে চলে গেছেন, তা নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। সোহেলের বিরুদ্ধেও একাধিক মামলায় পরোয়ানা থাকায় তিনিও ফেরারি হিসেবে ঈদ করবেন।
পাঠকের মতামত