ছিলেন মামলার বাদী। এরপর হয়ে গেলেন প্রধান আসামি। স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার মাস্টারমাইন্ড আলোচিত-সমালোচিত সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার এখন ফেনী কারাগারে বন্দি।
অন্য সব সাধারণ বন্দির সঙ্গে সাধারণ একটি সেলে রাখা হয়েছে তাকে। কারাগারে আর সব সাধারণ বন্দির সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা।
কারাগারের একটি সূত্র জানায়, বাবুল আক্তার কোনো ডিভিশন পাননি। কারাগারের সাধারণ সেলে থাকেন তিনি। সেখানে ফজরের সময়ে ঘুম থেকে ওঠেন। নামাজ পড়ে দিন শুরু করেন পুলিশের এই সাবেক এসপি।
সকালে নাস্তা সেরে লাইব্রেরিতে বইপত্র পড়ে সময় পার করেন। কারাগারে দেওয়া খাবার খেয়ে থাকেন বাবুল আক্তার।
বাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগার থেকে মামলার তারিখের দিনে প্রোডাকশন ওয়ারেন্টের (পিডব্লিউ) মাধ্যমে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠানো হয়।
ফেনী কারাগারের ওই সূত্র বলছে, কারাগারে পরিবারের সঙ্গে মুঠোফোনেই যোগাযোগ করেন বাবুল আক্তার। তবে তার পরিবারের কেউ এখনো কারাগারে যাননি দেখা করতে। দুই সন্তান বাবুল আক্তারের বাবা-মার সঙ্গে থাকে।
ফেনী কারাগারের জেল সুপার মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘কারাগারের বিধি অনুযায়ী সব সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন বাবুল আক্তার। কারাগারে নামাজ-কালাম, বইপত্র আর পেপার পড়ে সময় কাটান তিনি।
২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতুকে গুলি চালিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
ঘটনার দিন সদ্য পদোন্নতি পাওয়া তখনকার পুলিশ সুপার বাবুল সদরদপ্তরে যোগ দিতে ঢাকায় ছিলেন। তার ঠিক আগে চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশে ছিলেন তিনি।
মিতু হত্যাকাণ্ডের পর চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন বাবুল আক্তার। তিনি তখন দাবি করেছিলেন, মিতু হত্যায় জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে।
তবে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে খোদ বাবুলের সম্পৃক্ততার তথ্য পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ইতিমধ্যে মিতু হত্যার কয়েক মাস পর পুলিশের চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন বাবুল।
২০২১ সালের মে মাসে এই মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয় পিবিআই। এরপরই বাবুলকে আসামি করে নতুন একটি হত্যা মামলা করেন মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন। এ মামলায় বাবুলকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে হেফাজতে নেয় পিবিআই। পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
বাবুল আক্তারের শ্বশুর সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মামলাটি এখনো তদন্তাধীন। পিবিআই তদন্ত করছে।’
মিতুর সন্তানদের বিষয়ে জানতে চাইলে মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘ওরা বাবুল আক্তারের পরিবারের কাছে রয়েছে। আমি ওদের আমাদের হেফাজতে আনার জন্য এক বছর আগে আদালতে মামলা করেছি। কিন্তু বাবুল আক্তারের পরিবার আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে ওদেরকে আদালতে আনছে না।’
দীর্ঘ আড়াই বছর দফায় দফায় তদন্ত সংস্থা বদল হওয়ার পর মিতু হত্যার রহস্য উদঘাটন করে পিবিআই। পিবিআই বলছে, সাবেক এসপি বাবুল আক্তার তার পরকীয়া প্রেমের জের ধরে সৃষ্ট পারিবারিক কলহকে কেন্দ্র করে ভাড়াটিয়া খুনি দিয়ে মিতুকে হত্যা করিয়েছে। তদন্তে এটা পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে।
সংস্থাটি বলেছে, চূড়ান্ত অনুমোদনের পর শিগগির এই মামলায় সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করা হবে আদালতে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম মেট্রোর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার নাঈমা সুলতানা ঢাকাটাইমসকে বলেন, মিতু হত্যা মামলার তদন্ত অনেকটাই গুছিয়ে আনা হয়েছে। দ্রুত এই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।
মামলার তদন্তে পিবিআই যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট চূড়ান্ত করেছে, তারা হলেন- মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার, তার বিশ্বস্ত ও প্রধান সোর্স মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, অস্ত্র সরবরাহকারী অস্ত্র ব্যবসায়ী মো. এহতেশামুল হক ভোলা, কিলিং মিশনের সদস্য মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু ও মো. শাহজাহান।
আসামিদের মধ্যে মুসা ও কালু পলাতক রয়েছেন। ভোলা জামিনে। অন্যরা জেলে। সুত্র: ঢাকা টাইমস্