উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে গড়ে উঠেছে ব্যাঙের ছাতার মতো লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী।
ওষুধের দোকানগুলোতে কোনো ধরণের ফার্মাসিস্ট না থাকলেও দেয়া হচ্ছে সবধরনের রোগের চিকিৎসা।
সরকারি রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়াই এন্টিবায়েটিক, ঘুমের ওষুধ ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট বিক্রয় করা হচ্ছে ফার্মেসী গুলোতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুতুপালং বাজার, রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প সড়ক, লম্বাশিয়া সড়ক, লম্বাশিয়া বাজার পর্যন্ত প্রায় শতাধিক ফার্মেসী রয়েছে। এসবের অধিকাংশই রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয় কিছু অসাধু ব্যক্তির নামে দোকানের মালিকানা দেখিয়ে রোহিঙ্গারা লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নুর মেডিকো ,একরাম মেডিকো, মায়মুন ফার্মেসী, হারুন মেডিকো, কেয়ার মেডিসিন, আজিজ ফার্মেসী, জুবাইর মেডিকো, সানাউল্লাহ ফার্মেসী সহ অসংখ্য ফার্মেসী রয়েছে রোহিঙ্গাদের পরিচালনায়। স্থানীয় কিছু দালাল চক্রের মাধ্যমে ওষুধ প্রশাসনকে ম্যনেজ করেই তারা চালাচ্ছে ফার্মেসী ব্যবসা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় কিছু ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে ড্রাগ লাইসেন্স হাতিয়ে নিয়ে রোহিঙ্গারা চালাচ্ছে ফার্মেসী ব্যবসা। এসব রোহিঙ্গা ফার্মেসীর মধ্যে রয়েছে মেসার্স মনজুর ফার্মেসী,নিশান মেডিকো, এ এম ফার্মেসি, রোকসানা ফার্মেসী,ফারজানা মেডিকো, রোকসানা ফার্মেসীসহ আরো অনেক ফার্মেসী।
ফার্মেসিগুলো রোহিঙ্গাদের হলেও তারা কৌশলে স্থানীয় ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিয়েছে ড্রাগ লাইসেন্স। নাম রয়েছে বাংলাদেশী ব্যক্তির ব্যবসা চালাচ্ছে রোহিঙ্গা। এভাবেই সব কিছু ওলট-পালট সিস্টেমে দায়সারাভাবে চলছে কুতুপালংয়ে ফার্মেসী ব্যবসা।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক ফার্মেসির মালিক বলেন, ‘ড্রাগ লাইসেন্স পাওয়াটা অনেক কঠিন ব্যাপার, তাই লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিনি। শুনেছি, আবেদন করলে নানা অজুহাতে অফিসের লোকজন টাকা-পয়সা চায়। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়াইতো ওষুধ বিক্রয় করছি, কোন সমস্যা তো হচ্ছে না। ওষুধ প্রশাসনের লোকজন এলে কিছু দিয়ে দেবো তাইলে চলে যাবে, সব চলে এখন সিস্টেমে বোঝেন না। স্থানীয়রা যেভাবে লাইসেন্স ছাড়া ফার্মেসী ব্যবসা করছে তেমনি রোহিঙ্গারাও মাসোহারা সিস্টেম টাকা দিয়ে ব্যবসা করছে হয়তো।
ওষুধ প্রশাসনের আইনে বলা হয়েছে, দোকানে মেয়াদ উত্তীর্ণ কোনও ওষুধ বিক্রি বা মজুদ রাখা যাবে না। ড্রাগ সার্টিফিকেট টানানো থাকবে হবে। ওষুধ বিক্রয়ের সময়ে ক্রেতাদের প্রতিটি ওষুধের নাম মূল্যসহ ক্যাশ মেমো প্রদান করতে হবে। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনও ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। দেশীয় ওষুধ ব্যতীত বিদেশি ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। এসব নিয়ম থাকলেও মানছেন না বেশির ভাগ ফার্মেসি।
কুতুপালং কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক আবছার উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে ওষুধ প্রশাসন ও এসিল্যান্ডকে আসতে দেখছিলাম কিন্তু কি করছে না করছে জানি না। রোহিঙ্গারা নিয়মিত ফার্মেসী ব্যবসা চালাচ্ছে কোন বাধা ছাড়াই।
কুতুপালং কেমিস্টস এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি’র সভাপতি ইকবালের সাথে এ বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, কুতুপালং রোহিঙ্গারা ফার্মেসী ব্যবসা করতেছে তবে তাদেকে সমিতিতে সদস্য করা হয়নি। কারণ তাদের লাইসেন্স নেই, এরা রোহিঙ্গা। কুতুপালং ড্রাগ সমিতিতে ৩৯ জন মতো সদস্য রয়েছে। সকলের লাইসেন্স আছে এবং তারা বাংলাদেশী। এর বাহিরেও অনেক ফার্মেসী রয়েছে তারা কিভাবে লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করছে আমরা জানি না। ওষুধ প্রশাসন নিয়মিত তাদের লাইসেন্স এর ব্যপারে কথা বলতে শুনি। কিন্তু কার্যকর হয়নি এখনো।
১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটলিয়ন(এপিবিএন) পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি সিরাজ আল আমিন জানান, রোহিঙ্গারা এক ক্যাম্প থেকে অন্য ক্যাম্পে যাওয়ার কথা বলে সিআইসি থেকে অনুমোদন নিয়ে বের হয়ে এসব করে। যারা কাটাতারের বাহিরে দৃশ্যমান ব্যবসা করতেছে, তাদের বিরুদ্ধে সিআইসি’রা চাইলে ব্যবস্থা নিতে পারেন।
এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার ঔষধ প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়ক কাজী মোহাম্মদ ফরহাদ (ভারপ্রাপ্ত) জানিয়েছেন, উখিয়ার কুতুপালং এ নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। লাইসেন্স বিহীন ফার্মেসী ও রোহিঙ্গা ফার্মেসি ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কাজ চলমান।
এছাড়া খুব শীগ্রই এসব বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
পাঠকের মতামত