উখিয়া নিউজ ডটকম::
বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত কেন্দ্রীক রোহিঙ্গা পাচারকারী সিন্ডিকেট ও ঘাটগুলো ক্রমান্বয়ে সরব হয়ে উঠছে বলে খবর পাওয়া গেছে। স্থল ও জলজ সীমান্তের অন্ততঃ ১৩টি পয়েন্ট দিয়ে মিয়ানমারের জাতিগত সহিংসতা কবলে পড়া অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে বিচ্ছন্ন ভাবে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু হয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘ ইতিমধ্যে রাখাইন প্রদেশে উক্ত সহিংসতার ঘটনায় ৩০হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং তাদের জন্য বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দেওয়ার আহবান জানিয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুর ২টার দিকে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির সংলগ্ন বস্তির প্রবেশ মুখে দেখা মেলে মংডু জেলার খিয়ারি পাড়া এলাকার বাসিন্দা মৃত সালামত উল্লাহ পুত্র মোঃ সালেক (৬০) এর। তারা স্বপরিবারে ১৩জন রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মিয়ানমারের শিলখালী সীমান্ত এলাকা দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই ছেলে, পুত্র বধু মেয়ে ও নাতি সহ ১৩জন এক কাপড়ে বাপদাদার ভিটে মাটি ছেড়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে বলে জানান। মংডুর বলিবাজার গ্রামের ঝটিয়াখালী পাড়ার শামসুল আমিনের স্ত্রী তৈয়বা বেগম (২৫), ছোট ছোট তিন শিশু নিয়ে শুক্রবার দিবাগত রাতে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছে। স্বামী কোথায় আছে কি অবস্থায় আছে জানাতে পারেনি।
মংডুর আকবর পাড়ার নজু মিয়ার ছেলে জাবের হোছাইন (১৮) শাহপরির দ্বীপ সীমান্ত দিয়ে শুক্রবার রাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের একই বোটে ২৮জন অনুপ্রবেশ করে। মংডু খিয়ারি পাড়া এলাকার ছৈয়দুল আমিনের স্ত্রী মিরানা বেগম, ননদ হামিদা বেগম (১৭), দেবর জোবাইর হোছাইন (১৪) ও দ্ইু শিশু সহ ৪দিন পূর্বে উনছিপ্রাং সীমান্তের নাফ নদী দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। বলি বাজার গ্রামে হোয়াইক্যং এলাকার শামসুল আলম (৫৮) তার স্ত্রী ছমুদা খাতুন (৫০), পুত্র বধু ছেতেরা (২৬), ছেলে ইসমাইল (৩০), ইউনুছ (১৮), মোঃ রফিক (১২), জান্নাত আরা (১২) মোঃ রশিদ (৮) ইনতারা (৬), আনাস (৩), মোঃ তুফাইল (১) ও এক নাতি সহ ১৫ নভেম্বর কানজর পাড়া সীমান্ত দিয়ে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশ অনুপ্রবেশ করে।
মংডুর বলি বাজার এলকার বলি বাজার এলাকা লিয়াকত আলীর ছেলে মোঃ ইদ্রিস (১৪), গতকাল বুধবার সকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তির ডি-১ ব্লকে অবস্থানকারী জেঠা মোঃ আলী কাছে আসলে সে ভাতিজাকে কুতুপালং এমএসএফ ক্লিনিকে ভর্তি করায়। সেখান থেকে গুরুতর অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রেরন করা হয়েছে বলে মোঃ জানায়। উল্লেখিত অনুপ্রবেশকারী গত কয়েক দিনের ব্যবধানে সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে অনুপ্রবেশ করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তিতে আত্মীয় স্বজনদের সহায়তায় আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল এধরনের অনুপ্রবেশকারী অন্ততঃ শতাধিক রোহিঙ্গার সাথে এ প্রতিনিধির কথা হয়েছে।
এদিকে সীমান্তের ওপারে রোহিঙ্গাদের উপর সহিংস ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা পাচারকারী সিন্ডিকেট গুলো ঝিমনখালী, কানজর পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, উনসিপ্রাং, লম্বাবিল, কাঠাখালী, উলুবনিয়া, হারাইঙ্গা ঘোনা, রহমতের বিল, ধামনখালী, জলপাইতলী, তমব্রু, ওয়ালিদং সহ বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা পাচার বেড়ে যাচ্ছে বলে সীমান্তের একাধিক সূত্র গুলো জানিয়েছে। উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবির ইনচার্জ ও সহকারী কমিশনার মোঃ আরমান শালিক তার নিয়ন্ত্রিত শিবিরের কোন অবৈধ অনুপ্রবেশকারী আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা যায়নি দাবি করে বলেন, এ ব্যাপারে শিবির ম্যানেজম্যান্ট কমিটি ও ব্লক কমিটির দায়িত্বশীলদের কঠোর ভাবে সতর্ক করা দেওয়া হয়েছে যাতে কোন অনুপ্রবেশকারীকে আশ্রয় দেওয়া না হয়। গতকাল মিয়ানমারের সহিংস ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ঢাকায় বলেছেন এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরিন বিষয়। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য বিভিন্ন মহলের অনুরোধের প্রেক্ষিতে এধরনের এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি যাতে সীমান্ত খুলে দিতে হবে।
ঢাকা-কক্সবাজার রুটে চলাচলরত ট্রেন দুর্ঘটনার ভুয়া খবর সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে একটি মহল। ...
পাঠকের মতামত