ঈদের আর মাত্র দুদিন বাকি।কৃষক সগির মিয়ার এখনো কিছু কেনা হয়নি।এদিকে বউ বাচ্ছারা তাকিয়ে আছে নতুন জামার আশায়।সগির মিয়া ভেবেছিল এবারে ধানের ফলন হয়েছে বেশ ভালোই।দামও নিশ্চয়ই ভালো পাওয়া যাবে।কিন্তু বিধির বাম।ধানের মূল্য পানির দামের চেয়েও কম।এ নিয়ে পত্র পত্রিকায় অনেক লেখালেখিও চলছে।তারপরেও সগির মিয়া আশায় আছে নিশ্চয়ই আগামীকাল হয়ত ভালো খবর শুনবে।ধানের ন্যায্য দাম তারা পাবেই।ভাবতে ভাবতে কৃষক সগির ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়ল।হঠাৎ তার মোবাইলে মেসেজ আসে "প্রিয় কৃষক,আপনার একাউন্টে ঈদ বোনাস বাবদ ৩০,০০০টাকা জমা করা হয়েছে।আপনার নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের যে কোন শাখা থেকে আপনি এই টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।ধন্যবাদ।"এসএমএস পেয়ে কৃষক সগির মিয়া হতবিহ্বল হয়ে ছুটলেন তার বাড়ি থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে কৃষি ব্যাংকের শাখায়।ব্যাংকের দরজায় পৌছানো মাত্র দারোয়ান তাকে স্যালুট দিয়ে ভিতরে নিয়ে বসার ব্যবস্থা করলেন।সাথে সাথে অন্য আরেকজন লাল চা ও বিস্কুট নিয়ে তাকে খেতে দিলেন।একটুপরে একজন মোটাসোটা লোক এসে তার পাশের সোফায় বসলেন।"আমি রজব আলি এই শাখার ম্যানেজার।প্রথমেই আমি আপনার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনাকে অনেকদূর পথ পাড়ি দিয়ে ব্যাংকে আসতে হল তার জন্য।আমাদের একজন সিনিয়র অফিসার হঠাৎ অসুস্থ হওয়াতে আপনাদের বোনাস গ্রামের ঠিকানায় বিতরণ করতে পারিনি।"লোকটার একটানা কথাগুলোতে সগির মিয়ার অস্থিরতা আরো বেড়েগেল।কী এমন হল হঠাৎ তাকে এত সম্মান দেওয়া হচ্ছে?তার অস্থিরতা বুঝতে পেরে ম্যানেজার সাহেব বিষয়টা খোলাসা করলেন।"এবছর থেকে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঈদ বোনাস বিতরণ শুরু করছে।আপনিও একজন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক হিসেবে এই বোনাস পেয়েছেন।" ম্যানেজার সাহেব কথা আর না বাড়িয়ে তার হাতে নগদ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে একটা ফরমে স্বাক্ষর নিলেন।সগির কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম নিয়ে ব্যাংক থেকে বের হলেন।এবার বউ বাচ্চাদের জন্য নতুন কাপড় কিনার পালা।নিজেও পছন্দমত শার্ট লুঙ্গি কিনবেন।ছুটলেন প্বার্শবর্তী মার্কেটে।ভিড় ঠেলে ঢুকলেন একটা নির্ধারিত মূল্যের দোকানে।দোকানে ঢুকেই জানতে পারলে প্রতিটা পণ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ত্রিশ শতাংশ ছাড় রয়েছে।সগির মিয়া এই দোকান ঐ দোকান ঘুরে পছন্দ মত মালামাল কিনলেন।সব দোকানেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য ন্যুনতম ৩০% ছাড় দেওয়া হয়েছে।ঈদের সকল কেনাকাটা শেষ একটা সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে হাসিমুখে বাড়ি ফিরছেন কৃষক সগির মিয়া।আজ আর তার আনন্দের সীমা নেই।গাড়িতে বসে বসে চিন্তা করতেছেন তার বাবা মারা যাবার পর থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ত্রিশ বছরের কৃষক জীবনে আজই সে সবচেয়ে বেশি মূল্যায়িত হল।তার কৃষক জীবন আজ স্বার্থক হল।বড় হলে তার ছেলেকেও কৃষক হিসেবে গড়ে তুলবেন।ততক্ষণে গাড়ি তার বাড়ির সামনে চলে আসছে।দুশত টাকা গাড়িভাড়া দিয়ে নামতেই।ড্রাইভার ডাক দিয়ে বললেন ভাড়া ১০০ টাকা।ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের জন্য গাড়িভাড়া নিয়মিত ভাড়ার অর্ধেক নির্ধারিত করে দিয়েছে সরকার। সগির মিয়া সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সত্যিই খুব খুশি। বাড়িতে পৌছতেই সগির মিয়ার বাচ্ছারা দৌড়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরল।বাচ্চাদের আনন্দ উল্লাসের শব্দের তার ঘুম ভেঙে গেল।মসজিদের মাইকে ফজরের আযানের ধ্বনি ভেসে আসছে। এখন তার লাঙ্ল জোয়াল গরু নিয়ে মাঠে যাবার সময়।সুদিন আসবেই এ ভরসায় আবারো শুরু হল সগির মিয়া আজকের পথচলা।
লেখক,
জিয়াউর রহমান মুকুল,
উন্নয়ন ও মানবিক কর্মী,
শেড।
ইমেইলঃ [email protected]