বিগত কয়েকবছর যাবৎ লক্ষ্য করছি বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিভিন্ন ফসলের বাম্পার ফলন হচ্ছে;আবার সেই বাম্পার ফলিত ফসলগুলোই বাঙ্গালিদের কিনে খেতে হচ্ছে চড়ামূল্যে অনেকটা বিদেশী ফল আপেল কমলার দামে।উদাহরণ হিসেবে বলা যায় ধান,আলু,টমেটো,আম,ফুলকপি, বাধাকপিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় নানাবিধ কৃষি-পণ্য। সিজনে এদেশে টমেটো বিক্রি হয় প্রতি কেজি ২/৩ টাকা আর ননসিজনে অর্থ্যাৎ ৩/৪ মাস পরেই সেই একই টমেটোর বাজারদর দাঁড়াই ১২০ টাকার বেশি।গতবছর কাগজে পড়লাম বগুড়ায় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছিল প্রতি মণ ৪০/৫০ টাকায়!এবছর(২০১৯) সাথে প্রতিমণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা(সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো)।অথচ বাজারে চালের মূল্য এখনো অনেক বেশি!কেবল ধান নয় সামগ্রিক হিসেবে প্রতিবছর শতকরা ৩০ ভাগ কৃষিপণ্য এভাবেই ন্যায্যমূল্যের অভাবে নস্ট হয়ে যায়।ঐতিহাসিকভাবে এদেশের কৃষকেরা খুবই কস্ট সহিষ্ণু। তারা কেবল ফসল ফলাতেই তাদের জীবন শেষ হয়ে যায়।কিন্তু এই কস্টার্জিত ফসল সঠিক সংরক্ষণে তাদের কোন দক্ষতা নেই।যদি আমাদের কৃষি খাতের এই অতিরিক্ত ফসলসমূহ সিজনে সংরক্ষণ করে ননসিজনে বাজারজাত করা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে আমাদের সাধক কৃষকেরা অবশ্যই তাদের প্রতিটা উৎপাদিত পণ্যের অবশ্যই যথোপযুক্ত মূল্য পাবেন।পাশাপাশি বিদেশ থেকে ফসল আমদানি কমে গিয়ে আমাদের জাতীয় অর্থনীতির বিশাল উল্লম্ফন দেখা দিবে।এখন কথা হল কে এ ফলস সংরক্ষণ করবে?ঐতিহ্যগতভাবে বাঙালি কৃষকেরা গরীব ফলে তাদের পক্ষে সংরক্ষণাগার নির্মাণ করা কিছুতেই সম্ভবপর নয়।সে ক্ষেতে সরকার প্রতিটা উপজেলায় খাদ্যগুদামের পাশাপাশি পচনশীল কৃষিজ পণ্যের জন্য আলাদা সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে পারে।এতে এমন কোন ক্যামিক্যাল ব্যবহার করা হবেনা যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। প্রয়োজনে উন্নত বিশ্বের কাছ থেকে নলেজ শেয়ারিং করা যেতে পারে।শুনেছি কৃষি পণ্য সংরক্ষনে চায়নিজরা বেশ পারদর্শিতা দেখাচ্ছে।পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এর মাধ্যমেও ব্যবসায়ী/ধনাঢ্যরা এ কাজে বিনিয়োগ করতে পারেন।বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষককে কেবল ফোঁটা ফোঁটা জল খাইয়ে বাচিয়ে না রেখে তাদের কল্যাণে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহন করতে হবে।নচেৎ কৃষিপ্রধান এ দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার তালিকা থেকে অচিরেই ছিটকে পড়বে।আমাদের ভুলে গেলে চলবে কৃষিই আমাদের প্রাণ,প্রেরণার উৎস।কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ।
লেখকঃ
জিয়াউর রহমান মুকুল,
উন্নয়ন ও মানবিক কর্মী,
শেড,কক্সবাজার।
ইমেলঃ [email protected]
পাঠকের মতামত