প্রকাশিত: ১৩/১২/২০১৬ ৭:৪৮ এএম
কাঁদলেন,কাঁদালেন… পাষাণ পৃথিবী,আজব দুনিয়াতে প্রতিদিন হিংসা বিদ্বেষ সৃষ্টি সহ আপনজনের প্রতি মায়ামমতা কমছে,বাড়ছে শত্রুতা।স্বার্থের কাছে সবাই একপ্রকার অন্ধ,ব্যতিক্রমও যে নেই তা নয়,যেমন শের আলী।অন্যের জন্য কাঁদলেন,কাঁদালেন। গত ১১ ডিসেম্বর কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়কে ইউনিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে উল্টে গিয়ে ৪ জন নিহত হয়।বাসের নিচে চাঁপা পড়ে একটি ছোট্ট শিশু।তিন ঘণ্টা চেষ্টার পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রক্তাক্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে আনে পুলিশ কর্মকর্তা শের আলী।উদ্ধার করা মাত্র কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই রক্তাক্ত শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্য দৌড়ানো শুরু করেন শের আলী,দৌড়ানোর সাথে সাথে অপরিচিত এই শিশুটির জন্য চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি।পরে জানা গেছে,চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশে কর্মরত শের আলী শিশুটির কষ্ট ও যন্ত্রণা দেখেই অঝোরে কেঁদেছেন।এ সময় শের আলীর কান্না দেখে উপস্থিত জনতাও চোখের জল আটকাতে পারেনি।শের আলীর চরিত্রই আসল চরিত্র,এটাই হচ্ছে মানবতা,কেন এত হিংসে বিদ্বেষ,আপনে আপনে কঠোরতা? সাংবাদিক সরওয়ার আলম শাহীনের ফেইসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহিত
কাঁদলেন,কাঁদালেন…

মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য- এ কথা আবারও প্রমাণ করলেন একজন শের আলী। তার মহত্বের ছবি এখন ফেসবুকে ভাইরাল! ঘটনাটি রোববারের। কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কের রামুর রশিদনগরে ইউনিক পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ৪ জন নিহত হয়। আহত হয় ২৫ জনের বেশি। ওই বাসের নিচে চাপাপড়ে একটি ছোট্ট শিশু।

সেনাবাহিনী তিন ঘণ্টা ধরে হতাহতদের উদ্ধারের চেষ্টা করে। এ সময় ব্যক্তি উদ্যোগে রক্তাক্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে আনেন স্থানীয় বাসিন্দা শের আলী। তিনি শুধু উদ্ধার করেই থামেননি, কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য শিশুটিকে পাজাকোলা করে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটতে থাকেন।

শুধু কী তাই? অপরিচিত এই শিশুটির জন্য তখন চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন শের আলী। তিনি শুধু নিজে কাঁদেননি। কাঁদিয়েছেন উপস্থিত হাজার হাজার জনতাকেও। কাঁদিয়ে দিয়েছেন মানবতাবাদকে।

পরে জানা যায়, চট্টগ্রাম ডিবি পুলিশে কর্মরত শের আলী। এই মানবপ্রেমীর কান্নার দৃশ্যটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে ছড়িয়ে গেছে পৃথিবীজুড়ে। এতে শের আলী পরিণত হয়েছেন এই যুগের ‘আইকন’-এ। তার দৃশ্যটি নি:সন্দেহে সব মানুষকে আরো একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে মানবপ্রেমই শ্রেষ্ঠ ধর্ম। শের আলীর বিরল এই মানবতা নিয়ে ফেসবুকসহ সব সামাজিক মাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা।

ফেসবুকে শের আলীকে নিয়ে এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন, যমুনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তিনি লিখেছেন, ‘এই হলো মানবতা- আজ কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেলে বাসের নিচে অন্যান্য যাত্রীদের সাথে তিন ঘণ্টা চাপাপড়ে থাকে ছোট্ট শিশুটি। অনেক চেষ্টার পর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রক্তাক্ত শিশুটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য দৌড়ানো শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দা পুলিশ সদস্য শের আলী। অপরিচিত এই শিশুটিকে বাঁচানোর জন্য তখন চিৎকার করে কাঁদতে থাকে শের আলী। শের আলীর কান্না দেখে উপস্থিত জনতাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। শিশু উম্মে হাবিবা এখন শঙ্কামুক্ত। এই হল মানবতা।। জয় হোক মানবতার।’

চকরিয়ার সাংবাদিক এস.এম হানিফ লিখেছেন, ‘পুলিশ শের আলী ভাইয়েরা মানবতা শিখিয়ে দেন। হাজারো স্যালুট পুলিশ শের আলীকে। তোমার মতো এক একটি শের আলী জন্ম নিক প্রতিটি ঘরে। শের আলী ভাইয়েরাই আমাদের মানবতা শিখিয়ে দেন। তার মতো লোকেরা আমাদের মানবতার শিক্ষক।’

নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক সাহেদ আলম ফেসবুকে ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন- ‘আমরা প্রায়শই পুলিশকে গালি দেই, রাগ ঝাড়ি, মনের খেদ ঝাড়ি। ঝাড়ি কেননা এটাই মনের ক্রোধ প্রকাশের সহজতম পন্থা। আমিও ঝাড়ি, কেননা, রাষ্ট্রীয় অপকর্মে ক্ষমতাধর কারো নাম ধরে বা গোড়া ধরে টান দেবার চাইতে, পুলিশকে গালি দেয়াটা সহজ। এই দুটো ছবি-ই আজকের দিনের ছবি। একটি শের আল’র আরেকটি কয়েক দিন আগের ছবি, সাওতাল পল্লীতে আগুন দেয়ার ছবি। একটা কথা বিশ্বাস করেন, পুলিশের পোষাক পরা মানুষগুলো আমাদের মতই মানুষ। পুলিশ যখন নিজ দায়িত্বে কাজ করে তখন তারা প্রতিজন-ই একেকজন শের আলী। আর পুলিশ যখন অন্য কারো হয়ে কাজ করে তখন পুলিশ, এই আগুন দেয়া পুলিশ। বিষয়টা হলো আপনি কিভাবে এ্‌ই বাহিনীকে ব্যবহার করছেন তার উপর নির্ভর করছে।

আমি জানি এবং মানি বাংলাদেশের প্রতিটি পুলিশের ভেতরে একেকজন শের আলীর বসবাস। শের আলীরা সংখ্যায় ভারী হোক, অনেক, অনেক। যেন পুলিশ কথাটার অর্থই দাঁড়ায়- শের আলী।’

পাঠকের মতামত