উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে এখন সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নামগুলোর একটি মুহাম্মদ বিন সালমান। তিনি সৌদি আরবের উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী। সর্বোপরি যুবরাজ। বর্তমান বাদশাহ সালমানের পর তিনিই হবেন সৌদি আরবের বাদশাহ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে বয়সের দিক থেকে তিনি বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ। বাদশাহ সালমানকে ছাপিয়ে সারা পৃথিবীর নজর এখন তার দিকে। কিন্তু কেন? কে এই যুবরাজ?
বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ সিংহাসনে আরোহণ করেন ২০১৫ সালের ২৩ জানুয়ারি। তখন তিনি ৭৯ বছরের এক বৃদ্ধ। তারই পুত্র যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। ৩২ বছর বয়সী মুহাম্মদ বিন সালমানের নেতৃত্বে সৌদি আরবে চলছে ‘হাই-প্রোফাইল’ ধরপাকড়। রাজপরিবারের সদস্য, বড় বড় ব্যবসায়ীসহ ৩০ জনেরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে আটক করা হয়। গুলিতে মারা গেছেন এক রাজপুত্র। তোলপাড় সৃষ্টি করা এই ঘটনার নায়ক সালমানপুত্র মুহাম্মদ তাই এখন আলোচনার বিষয়। এরও আগের কয়েকটি ঘটনায় তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা রয়েছে। ইয়েমেনে সামরিক হামলা, কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ও অবরোধ আরোপ সেগুলোর অন্যতম। তার পিতা বাদশাহ সালমান সামনে থাকলেও ক্ষমতার কলকাঠি মুহাম্মদের হাতেইÑ এমনই মনে করেন বিশ্লেষকরা। বাদশাহও তাকে প্রভূত ক্ষমতা দিয়েছেন। তাছাড়া ৮১ বছরের বৃদ্ধ হিসেবে পুত্রের হাতে নিজেকে সঁপে দেওয়া ছাড়া তার আর কিছু করারও নেই।
১৯৮৫ সালে জেদ্দায় জন্ম নেওয়া মুহাম্মদ বিন সালমান কিন্তু সৌদি যুবরাজের পদাধিকারী ছিলেন না। নিয়ম অনুযায়ী এ পদের অধিকারী ছিলেন বাদশাহ সালমানের ভ্রাতুষ্পুত্র মুহাম্মদ বিন নায়িফ। কিন্তু রাজপরিবারের এযাবৎকালের সব নিয়ম লঙ্ঘন করেন বাদশাহ সালমান। গত ২১ জুন যুবরাজের পদ থেকে মুহাম্মদ বিন নায়িফকে অপসারণ করেন তিনি এবং নিজের পুত্র মুহাম্মদকে যুবরাজ মনোনীত করেন। মুহাম্মদ বিন নায়িফকে সমস্ত দায়িত্ব থেকেই অপসারণ করা হয়। সেই থেকে তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এর পরই ক্ষমতাবান হয়ে ওঠেন সালমানপুত্র মুহাম্মদ।
বাদশাহ সালমানের তৃতীয় স্ত্রী ফাহ্দা বিন্ত্ ফালাহ্ বিন সুলতানের গর্ভে জন্ম নেওয়া মুহাম্মদ তার ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়। দ্য সৌদি রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটিং গ্রুপের সাবেক চেয়ারম্যান তুর্কি বিন সালমান তার ভাই। বাদশা সউদ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনের ওপর ¯œাতক ডিগ্রি অর্জন করেছেন যুবরাজ মুহাম্মদ। বেসরকারি খাতে কর্মজীবন সূচনার কয়েক বছর পর পিতার ব্যক্তিগত সহযোগী হিসেবে নিয়োগ পান। ২০০৯ সালে পিতার বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন; সে সময় তার পিতা ছিলেন রিয়াদের গভর্নর। এ সময় থেকেই শুরু হয় তার উচ্চাভিলাষী যাত্রা। ২০১১ সালে সালমান দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং তার ব্যক্তিগত উপদেষ্টা পুত্র মুহাম্মদকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন। ২০১২ সালে তৎকালীন যুবরাজ মারা গেলে তার স্থলাভিষিক্ত হন সালমান, একই সঙ্গে প্রথম উপপ্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ফলে মুহাম্মদ বিন সালমান উঠে আসেন দ্বিতীয় অবস্থানে। ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এরপরের ইতিহাস তার দ্রুত ক্ষমতার শীর্ষে আরোহণের ইতিহাস। আর এখন, বাদশাহ বর্তমান থাকলেও, তিনিই সৌদি আরবের শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তি।
বাদশাহর কাছ থেকে মুক্তহস্তে ক্ষমতা পাওয়ার পর সৌদি আরবে সংস্কারের আওয়াজ তোলেন মুহাম্মদ। তিনি একটা রূপকল্প হাজির করেছেন, যা সৌদি ভিশন-২০৩০ নামে পরিচিত। রাষ্ট্রীয় তেল কোম্পানি আরামকো ব্যক্তিমালিকানাধীন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। ইয়েমেনে আগ্রাসী যুদ্ধের দায়িত্ব নিয়েছেন নিজের হাতে। কাতারকে বিচ্ছিন্ন ও কাতারের ওপর অবরোধ আরোপে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব খর্ব করতে নানাভাবে তৎপরতা চালাচ্ছেন। কিছুদিন আগে গোপনে সফর করেছেন ইসরায়েলে। তার এই সফর নিয়ে ইতোমধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিলেও তার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের মদদ দিচ্ছেন। এ সমস্ত কিছুর পাশাপাশি বাদশাহ হওয়ার পথে নিজের ক্ষমতা সংহত করায় বিশেষ তৎপর হয়েছেন। প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্মূল করাই আসলে তার গ্রেপ্তার অভিযানের লক্ষ্য, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের এ খবরের পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
ব্যক্তিগত জীবনে সালমানপুত্র যুবরাজ মুহাম্মদ বিবাহিত। তার স্ত্রী সারা বিন্ত্ মাশুর বিন আবদুল আজিজ আল সউদ। যুবরাজ মুহাম্মদ বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করতে ব্যাপক বিদেশভ্রমণ করেন। গত বছর তিনি সিলিকন ভ্যালি সফরে যান এবং মার্ক জাকারবার্গ প্রমুখের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।