কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশন। টিকিট কাউন্টারের সামনে গতকাল বুধবার সকাল ৮টার আগেই ভিড় করছিল কিছু মানুষ। পূর্বনির্ধারিত ঘোষণামতে আগামী ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেসের কোনো টিকিট নেই। গতকাল সকালে বিক্রি হবে ২৩ ডিসেম্বরের টিকিট। কিন্তু ওই দিনের কোনো টিকিটও পাওয়া যায়নি। সকাল ৮টার দিকে কাউন্টারে এসে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আর অনলাইন টিকিট বিক্রির অ্যাপেও ৮টা ১ মিনিটে দেখা যায়, কোনো টিকিট নেই। স্টেশন মাস্টারের দাবি, এক মিনিটেই সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতি শুরু হয়েছে গত ১ ডিসেম্বর থেকে। কক্সবাজার থেকে ঢাকা প্রথম যাত্রী নিয়ে রেল চলাচলের পর থেকে টিকিট নিয়ে কক্সবাজারে শুরু হয় হইচই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে নানা মাধ্যমে সমালোচনা শুরু হয়। অভিযোগ উঠেছে, কক্সবাজারে রেলের টিকিট শতভাগ কালোবাজারি সিন্ডিকেটের দখলে চলে গেছে। অতিরিক্ত দেড় থেকে দুইশ টাকা দিলেই মিলছে টিকিট। ৬ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিন কাউন্টারে গিয়ে কোনো দিনই মেলেনি টিকিট।
কাউন্টার বা অনলাইনে পাওয়া না গেলেও গত বৃহস্পতিবার কক্সবাজার থেকে ট্রেনে সপরিবারে ঢাকা গেছেন কক্সবাজারের ঘোনারপাড়া এলাকার এক ব্যবসায়ী। তার ভাই সাংবাদিক দীপক র্শমা দীপু বলেন, তার ভাই-ভাবি দুই সন্তানসহ স্টেশনে যান। কয়েকজনকে অনুরোধ করার পর এক ব্যক্তি টিকিট দিতে চান। তাকে প্রতি টিকিটে দুইশ টাকা করে বেশি দিতে হবে। ভাই রাজি হলে লোকটি স্টেশনের ভেতরে গিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে টিকিট নিয়ে আসেন। এই লোকের পরিচয় নিশ্চিত না হলেও লোকটি স্টেশনসংশ্লিষ্ট বলে ধারণা করেন সাংবাদিক দীপক র্শমা।
শনিবার দুপুরে আইকনিক স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীরা ভেতরে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। সাড়ে ১২টার ট্রেনে এসব যাত্রী যাবে ঢাকায়। যাদের আগে থেকেই টিকিট করা ছিল তারা সানন্দে অপেক্ষা করছে স্টেশনে। তবে কাউন্টারে টিকিট নেই। টাঙানো নোটিস দেখে বিরক্তভাবে এদিক-সেদিক ঘুরছে অসংখ্য যাত্রী। টিকিট পেতে দায়িত্বরত অনেকের সঙ্গে কথা বলছে তারা। ফিরেও যাচ্ছে অনেকে। টিকিট না পাওয়া এমন যাত্রীদের টার্গেট করছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা কয়েকজন সদস্য। টার্গেটের গা ঘেঁষে কথা বলছেন তারা। কথা শেষে আইকনিক স্টেশনের ভেতরে যাচ্ছেন, একটু পর ফিরে এসে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন টিকিট। রেল কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে টিকিট এনে দিচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।
আবদুল্লাহ আল মামুন নামে একজন যাত্রী বললেন, ‘এক লোক থেকে চারটি টিকিট সংগ্রহ করেছি। এক নিরাপত্তাকর্মী ওই লোকের কাছে নিয়ে গেছেন। ২ হাজার ৭০০ টাকা দিয়ে এই টিকিটগুলো কিনেছি।’
ছুটি শেষে বাড়ি থেকে ফিরছিলেন দুই সেনাসদস্য। তারা রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। তারা জানান, বাড়তি দাম দিলে টিকিট দেওয়ার নিশ্চয়তা দেন এক নিরাপত্তাকর্মী। যাত্রী সেজে টিকিট চাইলে একজন নিরাপত্তাকর্মী প্রতিদিনের বাংলাদেশের প্রতিবেদকের কাছেও দুইটি টিকিট অতিরিক্ত দামে বিক্রি করতে চান। টিকিটের বিষয়ে ৯ ডিসেম্বর কথা হয় কাউন্টারের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হাসিবুলের সঙ্গে।
তিনি বলেন, প্রতিদিন অতিরিক্ত এক হাজারের বেশি যাত্রী আসে।
এরই মধ্যে সিন্ডিকেট প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। ‘ঢাকা টু কক্সবাজার ট্রেন’ ‘কক্সবাজার ঢাকা কক্সবাজার ট্রেন টিকিট ক্রয় বিক্রয় গ্রুপ’ ‘ট্রেন টিকিট বাংলাদেশ রেলওয়ে’ নামে ফেসবুকে কয়েকটি পেজ ও গ্রুপে চক্রটিকে সক্রিয় দেখা গেছে।
কিন্তু আইকনিক রেলস্টেশনের মাস্টার মো. গোলাম রব্বানী বলছেন, ‘কালোবাজারে টিকিট যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ট্রেনের টিকিট মূলত শতভাগই অনলাইনে নিয়ন্ত্রিত, যা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ঢাকা থেকে। ১০ দিন আগের টিকিট সকাল ৮টায় অনলাইনে আসে। প্রতিদিন সকাল ৮টায় লাখের বেশি মানুষ চেষ্টা করে। এক হাজার ১০টি সিট। একজন তার এনআইডির বিপরীতে ৪টা করে টিকিট কাটতে পারেন। ফলে অনেকেই টিকিট পাচ্ছেন, অনেকেই পাচ্ছেন না। কাউন্টারেও একই অবস্থা। কোনো কারণে কেউ টিকিট ছেড়ে দিলে তা কাউন্টারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে।’ টিকিট কেটেও অনেকে না গিয়ে অন্যজনের কাছে বিক্রি করছেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে একজনের এনআইডির বিপরীতে অন্যজন ভ্রমণের তথ্য পাওয়া গেছে। এজন্য ট্রেন কর্তৃপক্ষ জরিমানাও আদায় করেছে। তিনি যাত্রীদের অন্যের এনআইডির বিপরীতে টিকিট না নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, জানুয়ারি থেকে আরও একটি ট্রেন আসছে। তখন যাত্রীর চাপ কমবে। টিকিটও পাওয়া যাবে। সুত্র; প্রবা
পাঠকের মতামত