মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এখন অপরাধ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন মীর কাসেম। তবে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা না করলে বা মীর কাসেম আলী প্রাণ ভিক্ষার আবেদন না করলে তাকে নিশ্চিতভাবে ঝুলতে হবে ফাঁসির কাষ্ঠে।
এদিকে মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় কোন কারাগারে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে জনমনে চলছে জল্পনা কল্পনা। কেউ বলছেন তার ফাঁসি কার্যকর হবে কেরানীগঞ্জের নতুন ফাঁসির কাষ্ঠে, আবার কেউ বলছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় নতুন কারাগারে ফাঁসি কার্যকর নাও হতে পারে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আসামি হলেও নিরাপত্তার স্বার্থে মীর কাসেম আলী বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারে। তবে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের (রিভিউয়ের রায়) কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারা অধিদফতরের একজন শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা না চাইলে ফাঁসির দণ্ড নিশ্চিত। তবে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতার ফাঁসির রায় কোন কারাগারে কার্যকর করা হবে সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে সরকারের নীতিনির্ধারণী মহল থেকে।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে দেশে ৬৮টি কারাগারের অর্ধশতাধিক কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা রয়েছে। কেরানীগঞ্জের ফাঁসির মঞ্চে একসঙ্গে দুজন আসামির ফাঁসি কার্যকরের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি মীর কাসেম আলীর ফাঁসি নতুন কারাগারে হয়, তবে তিনিই হবেন নতুন কারাগারের প্রথম ফাঁসি কার্যকর হওয়া আসামি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কারা অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলী ক্ষমা না চাইলে নতুন কারাগারে ফাঁসি কার্যকর না করা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে মতামত আসছে। কেউ বলছে, সাধারণত গভীর রাতে ফাঁসি কার্যকর করা হয়। আন্তজার্তিকসহ দেশীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার ঘটনাকে ব্যাপকভাবে কাভারেজ দেয়। নতুন কারাগারে ফাঁসি কার্যকর হলে সেক্ষেত্রে গণমাধ্যম কাভারেজ নাও পাওয়া যেতে পারে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
আবার আরেকটি পক্ষ বলছে, কেরানীগঞ্জ কিংবা কাশিমপুর যেখানেই ফাঁসি কার্যকর হোক গণমাধ্যম কর্মীদের উপচেপড়া ভিড় বাড়বে, কমবে না।
দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর আজ (মঙ্গলবার) সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চে মীর কাসেমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে মৃত্যুদণ্ডের রায় বহাল রাখেন। বেঞ্চের অন্য বিচারকরা হলেন- বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
পরে বিকেলে পাঁচ বিচারপতির স্বাক্ষরিত ২৯ পৃষ্ঠার রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় এবং সন্ধ্যায় রায়ের কপি ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
উল্লেখ্য, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিতদের মধ্যে এর আগে রিভিউ খারিজ হয়েছিল আব্দুল কাদের মোল্লা, মো. কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও মতিউর রহমান নিজামীর। রিভিউ খারিজের পর তাদের সবার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।